এক সময়ের খরস্রোতা যমুনা নদী এখন আর নদী নেই। শুকিয়ে পরিণত হয়েছে খালে। কোখাও কোথাও কোথাও হেঁটেই পার হওয়া যাচ্ছে। যমুনার অভ্যন্তরীণ অনেক রুটেই খেয়াপারের জন্য এখন আর নৌকার প্রয়োজন পড়ে না। ডানে বামে যতদূর চোখ যায় শুধুই বালুচর। কোথাও উঁচু নিচু কোথাও পুরো কোথাও বা পাতলা। নদীর গতিপথে কচ্ছপের পিঠের মতো হাজারো চর ডুবচরে পরিণত হয়েছে যমুনা। বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর পাশে রেল সেতু তৈরিতে নদী শাসনের ফলে এখন উভয় সেতুর পার্শ্বে বিশাল আকার চর জেগে উঠেছে।
যতদূর চোখে দেখা যায় শুধুই বালুরচর এটা কি পূর্বের সেই উত্তাল তরঙ্গের যমুনা নদী, দৃশ্যপটে সেটা মনে হয় না। এখন সেগুলো শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এক সময় যে নদীর প্রশস্ততা ছিল এক কিলোমিটার। এক সময়ে যমুনা ভরা যৌবনের তর্জন গর্জনের মানুষের বুকে কাপন সৃষ্টি করতো নদী পাড়ের মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিত সেই যমুনা ক্রমেই তার যৌবন হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে পরেছে।
অপরদিকে চরাঞ্চলের গরু ও মহিষের বাথান এলাকাগুলোর শ্রমিক ও গবাদি পশুর জীবন চরম গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলের মানুষের যেন দুঃখের সীমা নেই। মাঠ ঘাট জমি জিরাত গুলো ফেটে চৌচির। গাছপালা তেমন না থাকায় গরমে চলছে লু-হাওয়া। ফলে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের অশনি সঙ্কেত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা বড় বড় হাটবাজার সমূহ ব্যবসার জন্য বাদাম, সবজি, পাট, আলু, গম, সরিষা, বেগুন, কালাই, সহ বিভিন্ন নানাবিদ পণ্য নিয়ে সওদাগড়েরা নৌকায় পাল তুলে মাঝি মোল্লা নিয়ে সর্বপ্রকার পণ্য সরবরাহ করতো।
শুধু কৃষি পণ্যই নয় হাট বাজারগুলোতে বিক্রির জন্য তারা নিয়ে যেত গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, ভেরা, মহিষ সহ নানাবিধ পশু-পাখি। ওই সময় প্রমত্ত যমুনা সহ শাখা নদী গুলো ছিল যৌবনপ্রাপ্ত। এখন সেগুলো শুকিয়ে গেছে।
যমুনা নদীর পানি কমে যাওয়ায় নদী বক্ষে যত্রতত্র জেগে উঠেছে চর ও ডুবোচর। ফলে নদীর ১০টি রুটে নৌকা চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। মেঘাই ঘাট থেকে প্রতিদিন নাটুয়ারপাড়া, তেকানি, নিশ্চিন্তপুর, খাসরাজবাড়ী, চরগিরিশ, মনসুর নগর, তারাকান্দি, সিরাজগঞ্জ সহ সরাবাড়ী, রূপসার চর, কাউয়া খোলা চর, মেছড়া চর এনায়েতপুর হতে চৌহালিও শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন চরে ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
নদীর নব্যতা কমে চর জেগে ওঠায় অনেক দূর দিয়ে ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে এতে তেল খরচ ও সময় দুটোই বেশি খরচ হচ্ছে। ফলে যাত্রী খরচ ও মালামাল পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এসব রুটে অন্য কোন যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীরা বিপাকে পড়ছে। নদীর পানি কমে নৌ ঘাট দূরে সরে যাওয়ায় তপ্ত বালুচর ভেঙে যাত্রীদের যাতায়াত করতে হচ্ছে।
এক্ষেত্রে মালামাল পরিবহনসহ শিশু ও নারী যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নৌ রুট বন্ধ থাকায় অনেক মাঝিরা যেমন বেকার হয়ে পড়েছে তেমনি মৎসজীবীরা পড়েছে বিপাকে । যমুনা নদীর পানি হ্রাস পেলে তিন কিলোমিটার পথ বেড়ে ১২ কিলোমিটারে পৌঁছে। এতে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চলের মনসুর নগর ইউনিযন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক রাজমহর ও নিশ্চিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল কবির চরম ভোগান্তির কথা শিকার করেন। এদিকে নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, চরগিরিশ ও খাসরাজবাড়ী অনেক নদী ঘাটে খেয়ার পরিবর্তে ঘোড়ার গাড়ি ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবই এর মূল কারণ বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা। এ ব্যাপারে তাই অভিজ্ঞ মহল সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
আরএম/ টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/
Muchas gracias. ?Como puedo iniciar sesion?