দেশে ৬৩ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড লবণ উৎপাদন হয়েছে। রোববার (২৮ এপ্রিল) পর্যন্ত চলতি বছর সর্বমোট উৎপাদন হয়েছে ২২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৫৮ টন লবণ। তীব্র তাপদাহের এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে কয়েক লাখ টন বাড়তি লবণ উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ টন। এই হিসাবে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন হয় ২২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৫৮ টন। অর্থাৎ রোববার পূর্ব বছরের বার্ষিক উৎপাদনকে ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে শুধু ২৮ অক্টোবর মৌসুমের দিনভিত্তিক সর্বোচ্চ ৩৮ লাখ ৯৭০ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। ২০২২-২৩ মৌসুমের ২৮ এপ্রিল দেশে লবণ উৎপাদন হয়েছিল ৩০ লাখ ৮৯৫ টন। একদিনে রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদনের ফলে ‘প্রতি আড়াই দিনে প্রায় এক লাখ টনের’ বেশি লবণ উৎপাদন করছেন দেশের কৃষকরা।
বিসিক ১৯৬১ সাল থেকেই দেশে পরিকল্পিত পদ্ধতিতে লবণ চাষ শুরু করে। কক্সবাজারে অবস্থিত বিসিকের লবণ শিল্পের উন্নয়ন কর্মসূচি কার্যালয়ের আওতাধীন ১২টি লবণ কেন্দ্রের মাধ্যমে কক্সবাজারের সকল উপজেলা (উখিয়া ছাড়া), চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলাতেও সীমিত পরিসরে লবণ উৎপাদন করছেন কৃষকরা।
চলতি বছর লবণ উৎপাদন হচ্ছে ৬৮ হাজার ৩৫৭ একর জমিতে। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৬৬ হাজার ৪২৪ একরে। জমির পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি চলতি মৌসুমে চাষির সংখ্যা ১ হাজার ২২৮ জন থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০ হাজার ৬৯৫ জনে। তবে বাড়তি লবণ উৎপাদনের কারণে মাঠ পর্যায়ে ক্রুড লবণের দাম কমে মণপ্রতি নেমে এসেছে ৩১২ টাকায়। যদিও ২০২২-২৩ মৌসুমের একই সময়ে মাঠ পর্যায়ে ক্রুড লবণের মণপ্রতি দাম ছিল সর্বনিম্ন ৪২০ টাকা।
বিসিকের লবণ সেল থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ২৮ হাজার টন। মৌসুমের শুরুতে (নভেম্বরের মাঝামাঝি) বিরূপ আবহাওয়া, একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উৎপাদন ব্যহত হয়। ওই সময়ে সংকট এড়াতে বিশ্ববাজার থেকে ১ লাখ টন লবণ আমদানির অনুমোদন দেয় বিসিক।
ওই সময়ে কৃষক পর্যায়ে মাঠ থেকে অপুষ্ট লবণ উত্তোলন হলেও বর্তমানে তীব্র তাপদাহে ভালোমানের দানাদার লবণ উৎপাদন হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতি ৭-১০ দিনে মাঠে লবণ পুষ্ট হলেও বর্তমানে সেটি নেমে এসেছে ১ দিনে বা ২৪ ঘণ্টায়। সর্বশেষ কয়েক দিনে ১০-১২ ঘণ্টার মধ্যেও মাঠ থেকে লবণ সংগ্রহের রেকর্ড তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিসিকের কর্মকর্তারা।
বিসিকের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রিসহ বিভিন্ন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও লবণ শিল্পের জন্য আর্শীবাদ হয়ে এসেছে। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি লবণ উৎপাদন হওয়ায় আমদানির পরিবর্তে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো লবণ রফতানির সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিসিকের লবণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আরএম/ টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/