মো: রেদওয়ানুল হক মিলন, স্কুলে বার্ষিক পরিক্ষা শেষ। তাই বাড়িতে বসে না থেকে হাতে খুন্তি আর ব্যাগ নিয়ে ইঁদুরের বাসায় (গর্ত) হানা দিতে সদ্য ফসল ওঠা আমন খেতের অভিমুখে কয়েকজন শিশু। উদ্দেশ্যে ইঁদুরের জমানো ভান্ডারে হানা। যুদ্ধ করে হলেও ইঁদুরের গচ্ছিত ভান্ডার চাই। তাই খোঁজতে থাকেন ইঁদুরের গর্ত। যে গর্তে খাদ্য মজুদ করে রেখেছে ইঁদুরের দল। ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে তিলের খাজা খাওয়ার লোভে সে-ই ইঁদুরের গোলায় হানা দিচ্ছে পাড়ার দুরন্ত শিশুরা। তাই আলতো হাতে খুন্তি চালিয়ে গর্ত খুঁড়ে তাদের ভান্ডারে জমানো ধান দেশীয় অস্ত্রের সাহায্যে ছিনিয়ে নিচ্ছেন গঞ্জের কচিকাঁচারা।
খুন্তির কোপে কাঁদায় লেপটে থাকা একগুচ্ছ ধানের শীষ টেনে বের না করতেই চিক শব্দে গর্ত থেকে লাফিয়ে বেরুলো দু’টো ল্যাংড়া ইঁদুর। শপাং শব্দে খুন্তির গুঁতোয় ছেঁচে দিলো দুটোই। মৃত ইঁদুর দু’টা পাশে রেখে আবার গর্ত খোঁড়াখুড়ি। উদ্দেশ্য ভাণ্ডারে ধান গচ্ছিত রয়েছে। ইঁদুরের সঞ্চিত সেই ভাণ্ডারের পুরোটাই চাই। এ ধানের চালে পিঠা হবে, নয় তো বাজারে বিক্রি, আর সেই টাকা দিয়েই নতুন জামা। অগ্রহায়ণের ঘ্রাণে নবান্নের উৎসব না থাকলেও শিশুদের ধান কুড়ানোর ব্যস্ততা যেন আরেক উৎসবে পরিণত হয়েছে। এমনই চিত্র দেখা গেছে বিভিন্ন ধানক্ষেতে।
শিশু আরিফ জানায়, ইঁদুরের গর্তে হাত ঢুকিয়ে ধান সংগ্রহ করতে একটু ভয় লাগে। মাটি খুড়তে গিয়ে মাঝে মাঝে ইঁদুর বের হয়। তারপরও শখের বসে বন্ধুরা মিলে ধান কুড়াচ্ছি। পড়ে থাকা ধানের শীষ কুড়ানোর চেয়ে ইঁদুরের গর্তে ধান বেশি থাকে, সেই ধান কুড়াতে খুব আনন্দ হয়।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদরের আকচা ইউনিয়নের বামনপাড়া গ্রামে খেতে ধান কুড়াতে ব্যস্ত শিশু আরিফ। তার সারা গায়ে লেগে আছে কাদা মাটির দাগ। পাশেই শিশু সুজন, বক্কর, আসমা ও আশা দীর্ঘক্ষণ ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান উদ্ধারে চেষ্টা করছে। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ থেকে কৃষকরা ধান তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তারা ইঁদুরের গর্তে হাত ঢুকিয়ে জমানো ধান ব্যাগে ভরছে ।
এছাড়া জমিতে পড়ে থাকা ধানও কুড়িয়ে ব্যাগে ভরে নিচ্ছে শিশুরা। কুড়িয়ে পাওয়া সেই ধান ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে তারা। আর ওই টাকা দিয়ে মেটাচ্ছে তাদের ছোট ছোট চাহিদা। এসব ধান কুড়ানি শিশুরা প্রতিদিন দলবেঁধে ছুটে যায় ফসলের মাঠগুলোতে। শিশুরা ১০ থেকে ১৫কেজির মতো ধানের শিষ কুড়িয়ে থাকে।
রমজান আলী নামে এককৃষক বলেন, খেত থেকে ইঁদুর ধানের শিষ কেটে নিয়ে আপত্কালীন খাদ্য হিসেবে গর্তে মজুত রাখে। আর ওই সব শিশু-কিশোর সেই গর্ত খুঁড়ে ইঁদুরের খাদ্য বের করে। তবে এতে ঝুঁকিও রয়েছে। গর্তে বিষধর সাপ থাকতে পারে। তবে এ ধান কাটার মৌসুমকে ঘিরে এ কাজের সঙ্গে অভাবী পরিবারের লোকজনও যুক্ত হয়েছে।
মাঠে ধান কুড়াতে আসা শিশু আসমা বলে, আমরা ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধান সংগ্রহ করে তা বিক্রি করি। ওই টাকা দিয়ে পোশাক কিনবো। আশা বলে, ধান কাটার পর জমিতে পড়ে থাকা ধানের শীষ ও ইঁদুরের গর্তের ধান সংগ্রহ করি। সারাদিন চার-পাঁচ কেজি ধান কুড়াই। সেই ধান বিক্রি করে নিজের শখ পূরণ করি।
তবে ক্ষেতে ইঁদুরের গর্তগুলোতে সাপ, পোকা-মাকড় থাকতে পারে। এই কাজ শিশুদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানান, ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধান বের করা, এটা নিরাপদ নয়। এতে কৃষকের কোনো উপকার নেই। তবে আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষকেরা খেতের ধান কাটলে মাঠে ধান পড়ে থাকবে না। এ ছাড়া ইঁদুর নিধনে আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।
আরএম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/