টাঙ্গন ডেস্ক
ঢাকা: নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে মীমাংসা করা নির্বাচন কমিশন (ইসি ‘র বিষয় নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর কাজ বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ কারণে দলীয় সরকারের পরিবর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে সেটি বেশি গ্রহণযোগ্য হতে পারত কি না, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
সিইসি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে গত ১০-১৫ বছর ধরেই আন্দোলন হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এটি নিয়ে দেনদরবার করবেন। তারা বিষয়টিকে মীমাংসা করবেন। এর ভিত্তিতে কখনো যদি বিষয়টির মীমাংসা হয়, সে পরিবর্তিত অবস্থায় নির্বাচন কেমন অবাধ হবে, সেটা তখন বোঝা যাবে। আপাতত আমার তরফ থেকে সিইসি হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা এ পর্যায়ে সমীচীন হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল এসব কথা বলেন। গত রোববার (১৭ ডিসেম্বর) নেওয়া সাক্ষাৎকারটি মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভিডিও সাক্ষাৎকারটি ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে সিইসি আরও বলেন, এটি রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়। রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে যে কলহ বা বিরোধ আছে, সেখানে দূতিয়ালি করা আমাদের কাজ নয়। আমাদের কাজ হচ্ছে সাংবিধানিকভাবে এবং সংবিধানের অধীনে যে আইনগুলো হয়েছে, এসবের অধীনে নির্বাচনটাকে যেভাবে আয়োজন করা দরকার আমরা সেভাবে করব। রাজনৈতিক যে বিরোধ, তা রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই মীমাংসা করতে হবে।
সাক্ষাৎকারে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা, রাজনৈতিক সংঘাত, নির্বাচন বর্জন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা, নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি, সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছাসহ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সিইসিকে প্রশ্ন করা হয় ভয়েস অব আমেরিকার পক্ষ থেকে। সিইসি বলেন, এবারের নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। নির্বাচন কমিশনও তার সক্ষমতা অনুযায়ী সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন আয়োজনে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
ভোট প্রতিহত করার মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ইসির নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় কি না— এ প্রশ্নের জবাবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোট বর্জন বা বয়কট করার অধিকার যে কারও আছে, যেকোনো রাজনৈতিক দলেরই আছে। কিন্তু ভোট প্রতিহত করা কিন্তু অসাংবিধানিক। কারণ বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে একটি গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র। এখানে সরকার তথা জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয় ভোটের মাধ্যমে। ভোট না হলে গণপ্রজাতন্ত্রী চরিত্রটিই থাকে না। ফলে ভোট প্রতিহত করাটা অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ড, সেটি নির্বাচন কমিশন হতে দিতে পারে না।
তিনি বলেন, এ কারণেই আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলেছি যেন ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটারদের ভোট দেওয়াতে নিরুৎসাহিত করতে পারে বা নির্বাচন প্রতিহত করার পক্ষে কোনোরকম সভা-সমাবেশসহ রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এতে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় না। নির্বাচনি প্রচারে যারা অংশ নেবেন তাদের সঙ্গে নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া পক্ষের সম্ভাব্য সহিংসতা এড়ানোও এই নির্দেশনার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তিনি।
সিইসি বলেন, তারা (ভোট প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া রাজনৈতিক দল) শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করতেই পারেন। এতে কোনো বিধিনিষেধের কথা কিন্তু বলা হয়নি। বলা হয়েছে নির্বাচনকে বিঘ্নিত করতে পারে বা নির্বাচনের বিপক্ষে, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে— এরকম সভা-সমাবেশ থেকে নিবৃত্ত করা। তারাও কিন্তু শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের কথা বলেনি, প্রতিহত করার কথা বলেছে। তারা বয়কট করে যাচ্ছে, গত ১০ বছর ধরেই, আপনারা দেখেছেন। সেখানে বাধা দেওয়া হয়নি। কিন্তু যারা নির্বাচন করছে, তারা ১৮ ডিসেম্বর থেকে প্রচার শুরু করছে। তাই এই সময়টা খুব ক্রিটিক্যাল। সেজন্যই শুধু এই কয়েকটা দিনের কথা বলা হয়েছে। এই সময়টাতে এমন কোনো সভা-সমাবেশ যেন না হয় যাতে করে দুপক্ষরা সংঘর্ষে, সহিংসতায় জড়িয়ে পড়তে পারে। সে দিক থেকেই আমরা এই বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে এনেছি এবং তাদের অনুরোধ করেছি তারা যেন বিষয়টি দেখে।
বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জন করেছে। এই রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থক ভোটারদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। তাদের বাইরে রেখে নির্বাচন আয়োজন ইসির নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবুল আউয়াল বলেন, এই কারণে নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। নিরপেক্ষতা তখনই প্রশ্নবিদ্ধ হয় যখন আমি গোপনে কোনো কারচুপিতে যুক্ত হব।
যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা কেউ কিন্তু বলছেন না যে নির্বাচন কমিশন নৌকাকে সমর্থন করবে বা তারা গোপনে নৌকার পক্ষে কাজ করবে। এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু বিএনপি বা সমমনা দলগুলো, তারা তো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। পক্ষপাতিত্বের প্রশ্ন তখনই হতো যখন বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত এবং তারা ইসির বিরুদ্ধে অন্য দলগুলোকে সহায়তার অভিযোগ করত।
নির্বাচন সার্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য না হলে সিইসি বা নির্বাচন কমিশন তার জন্য সর্বাংশে দায়ী থাকবে না বলেও মনে করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন আয়োজন করলেও নির্বাচন পরিচালনায় সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভর করতে হয় বলে গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে সরকারকেও অনেকটা দায় নিতে হবে বলে মন্তব্য তার।
সিইসি বলেন, ইসিতে আমরা আছি দেড় হাজার জনবল। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা করতে ১২ লক্ষ জনবল প্রয়োজন। তারা সবাই সরকারি কর্মচারী, তাদের ধার করে আমাদের নির্বাচন করতে হবে। তাদের ওপর নির্বাচন কমিশনকে নির্ভর করতে হবে। তারা যদি সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে জেলা প্রশাসক বা রিটার্নিং কর্মকর্তারা পোলিং সেন্টারের ভেতরে যারা ভোট গ্রহণ করবেন, তারা সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে, ভয়-ভীতিহীনভাবে পোলিংটা (ভোট) গ্রহণ করছেন কি না সেটি দেখভাল করেন, তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না।
এ ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সিইসি। বলেন, ভোটকেন্দ্রে যে পোলিং এজেন্ট থাকবেন, তাকেও তার দায়িত্বটি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে। ভোটে কোনো অনিয়ম-কারচুপি ঘটে থাকলে তাকে সে অভিযোগ জানাতে হবে। তিনি অভিযোগ জানালে প্রিজাইডিং অফিসার ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন। সব জায়গায় যদি এরকম সবাই অভিযোগ জানান, তখন কারচুপির চেষ্টা থাকলেও সেটি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
এবারের নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) না রাখার কারণ জানতে চাইলে হাবিবুল আউয়াল বলেন, গাইবান্ধায় একটি আসনে নির্বাচন হয়েছিল। কিন্তু পুরো নির্বাচনে প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার বুথে ভোট হবে। এর জন্য সিসি ক্যামেরা লাগবে প্রায় সাড়ে তিন লাখ। কেন্দ্রীয়ভাবে এই সাড়ে তিন লাখ সিসি ক্যামেরা মনিটর করা বস্তুগতভাবে আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। সে কারণে অনেক চিন্তাভাবনা করেই বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ভিসানীতি প্রসঙ্গেও জানতে চাওয়া হয় সিইসির কাছে। তিনি বলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমরা একেবারেই মাথা ঘামাচ্ছি না। আমরা যারা নির্বাচন কমিশনে আছি, ভিসার ব্যাপারে আমার কোনো স্বার্থ আছে কি নেই, আমি নিজেও এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। এখন যাদের ভিসার খুব প্রয়োজন আছে, ঘন ঘন আমেরিকা বা ইউরোপে যাওয়ার প্রয়োজন আছে তারা হয়তো এটা বিবেচনা করে দেখতে পারে। ভিসা নীতির ব্যাপারে আমি এর বেশি কিছু বলব না। আমার এ ব্যাপারে কোনো মাথা ব্যথা নেই বা আমার ওপর কোনো চাপও নেই। নির্বাচন কমিশন এটা নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামায় না। সরকারের ওপর কোনো চাপ আছে কি না, সেটা আমি বলতে পারব না।
https://slotbet.online/
I like this weblog very much, Its a very nice situation to read and receive info.Expand blog