ঠাকুরগাঁও জেলার (পীরগঞ্জ- রানীশংকৈল) দুটি উপজেলা, দুটি পৌরসভা ও ১৭টি ইউনিয়নয় নিয়ে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৫ নম্বর আসন। এই নির্বাচনী এলাকা ১৯৮৪ সালে গঠিত হয়। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পর প্রথমবারের মতো এ আসনে সংসদ সদস্য পদে নারী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন আশা মনি। এর আগে আসনটিতে আর কোনো নারী এ পদে নির্বাচন করেননি।
অবিবাহিত আশা মনি রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ইউনিয়নের গন্ডগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। তাঁর বাবা আনারুল ইসলাম পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। আশা মনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্টে অনার্স পড়ছেন। তিনি সারা দেশের মধ্যে কনিষ্ঠ সংসদ সদস্য পদ প্রার্থী।
এর আগে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন তিনি। ৪ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাইয়ে তাঁর ভোটার সমর্থনে গরমিল থাকায় মনোনয়নপত্র বাতিল করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান। মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পরেও হার মানেননি ২৭ বছরের এই প্রার্থী। ঢাকার আগারগাঁও নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি। পরে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ঈগল প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে নির্বাচনি প্রচার শুরু করেন আশা।
তার আসনে নির্বাচন করছেন হেভিওয়েট জাতীয় পার্টি ও মহাজোটের সমর্থিত প্রার্থী সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দীন আহম্মেদ, ওয়ার্কাস পার্টির গোপাল চন্দ্র রায় ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের কুলা প্রতীকে খলিলুর রহমান। এই আসনের অন্যান্য প্রার্থীরা নির্বাচনি প্রচারের অংশ হিসেবে লোকসমাগম করে হাটসভা, পথসভা করলেও আশা মনির প্রচার ভিন্নধর্মী। তিনি নির্বাচনি প্রচারণা করছেন ফসলের মাঠে কৃষকের সঙ্গে ও গরিব মেহনতি শ্রমিকদের সঙ্গে। এ আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৫৪।
নাজমুল হোসেন নামে একজন বলেন, কম বয়সী একটা নারী সংসদ নির্বাচন করছেন। তিনি ভোটে জিতবেন নাকি হারবেন জানা নেই। তবে তিনি তার ভয় ও জরাজীর্ণতাকে জয় করেছেন এটা অনেক বড় প্রাপ্তি।
আশা মনির বাবা আনারুল ইসলাম জানায়, আমার মেয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চায়, তাই আমি তাকে পেছনে রাখতে চাই না। আমি তাকে সবসময় সাহস জুগিয়েছি এবং ভবিষ্যতেও সাহস দিয়ে যাব।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আশা মনি বলেন, নারী নেতৃত্ব তৈরি করার নিমিত্তে এবং শুধু টাকাওয়ালা আর ব্যবসায়ীরা বাদেও দরিদ্র পরিবার থেকেও নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব। তা প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই তিনি ভোটে দাঁড়িয়েছেন বলে জানান। এর আগে তিনি ২০২২ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ভোটও পেয়েছেন সন্তোষজনক। সেই ভোটের অনুপ্রেরণাতে এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, আমি গরিব ঘরের সন্তান, তবে তরুণদের নিয়ে নেতৃত্ব দিতে চাই সমাজ পরিবর্তনের। সমাজের হাল ধরতে, সমাজের দায়িত্ব তরুণ হিসেবে কাঁধে তুলে নিতে এসেছি। আমি ভোটারদের বাস্তব জীবনের কাছাকাছি গিয়ে আমার প্রচারণা চালাচ্ছি। আমি সমাজে কী কী পরিবর্তন করতে চাই তরুণদের জানাচ্ছি। তারা আমার কথা শুনছে এবং তারাও সমাজ পরিবর্তনের ও তরুণ নেতৃত্বের সুযোগ সৃষ্টি করতে চাইছে। আমি আশাবাদী বাংলাদেশটা হবে তারুণ্যনির্ভর।
এই প্রার্থী আরো বলেন, সংগ্রাম করে বড় হয়েছি। বাবা-মায়ের দোয়া ও সমর্থন আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা দিয়েছে। আমার বাবা ক্ষুদ্র চা বিক্রেতা। আমার সাহস আর অনুপ্রেরণা আমার মেহনতি বাবা ও মা। আমি মনে করি, আমার সমাজে এসব মেহনতি মানুষ আর পিছিয়ে পড়া তারুণ্যের সংখ্যা অনেক বেশি। আমি তাদের সঙ্গে নিয়ে আগাতে চাই। এই মানুষগুলো আমার শক্তি।
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনটিতে প্রথম, দ্বিতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলেও জাতীয় রাজনীতির কৌশলগত কারণে জাতীয় পার্টি এবং ওয়ার্কাস পার্টিকে সমর্থন দেয়। তার ওপর নির্ভর করছে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে কে হবেন পরবর্তী জনপ্রতিনিধি। আসনটিতে কোন দলেরই ঘাঁটি নয়, ফলে ভোটের লড়াই জমবে বলেই আশাবাদী ভোটাররা।
https://slotbet.online/