এটিএম সামসুজ্জোহা, সিনিয়র সাংবাদিক :
এ দেশের সাহিত্য অঙ্গনে ঠাকুরগাঁওকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করা কিংবা আলাদাভাবে আলোচনায় নিয়ে আসা যায় এমন পরিস্থিতি সম্ভবত তৈরি হয়নি। কেননা বাংলা সাহিত্যের চলমান ধারা আলোচনা পর্যালোচনায় ঠাকুরগাঁও থেকে উঠে আসা কাল উর্ত্তীণ সাহিত্য ব্যক্তিত্বের নাম পেশ করা বেশ কঠিন। তবে এটা কোনো গøানিকর বিষয় নয় বা এতে খেদেরও কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ নেই। বরং উত্তরের এ জনপদে বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামো বা মানচিত্রটিকে সরিয়ে এর ভাষা লোকসাহিত্য ও লোকসংস্কৃতিগত বৃহত্তর অঞ্চলটিকে বিবেচনায় নিলে গর্বিত হওয়ার মতো অনেক বিষয়ই সামনে চলে আসে। কেননা বৃহত্তর রংপুর এবং অ-বিভক্ত ভারতের কুচবিহার ও জলপাইগুড়িজুড়ে ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াইয়া তথা রাজবংশী ভাষা লোকসাহিত্যের যে বিস্তার সেনুয়াÑ টাঙ্গনÑসুক বিধৌত ঠাকুরগাঁও জনপদ সেই ঐহিত্যের অংশীদার।
ঠাকুরগাঁও যে এক সুপ্রাচীন জনপদ এ নিয়ে বির্তকের কোনো অবকাশ নেই। সুপ্রাচীন বিভিন্ন স্থাপনা যথা, সুফি আউলিয়াদের সাধন ক্ষেত্র পীর শাহ নেকমরদ বা হযরত শাহ নাসিরুউদ্দীন হায়দার (র) মাজার, গোরক্ষনাথ মন্দির, সনগাঁ মসজিদ, জামালপুর জমিদারবাড়ি মসজিদ, কোরমখান গড় , মালদুয়ার দূর্গ কয়েকশ বছরের প্রাচীন রানীশংকৈল রাজবাড়ি এ জনপদের প্রাচীনত্বের সাক্ষী বহন করে। বাংলাভাষা ও সাহিত্যের পঠন পাঠনে সংশ্লিষ্ট সবাই জানেন যে, কুচবিহার জলপাইগুড়ি রংপুর এ অঞ্চলগুলো বাংলাভাষা ও সাহিত্যের সুদীর্ঘ সাহিত্য ও পরম্পরার সঙ্গে নানাভাবে সম্পর্কিত।
বাংলা গদ্যের প্রথম পর্যায়ের যে নিদর্শন পাওয়া যায় তার প্রচলন ঘটেছিল কুচবিহারের রাজদরবারে। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন চর্যাপদের পদকর্তাদের কারও কারও এ জনপদে চলাচল ছিল এমন ধারাও প্রচলিত। এ অঞ্চলের ভাষায় চর্যাপদের কিছু কিছু শব্দের উপস্থিতি এবং নেপালের রাজদরবার থেকে বর্তমানে প্রচলিত চর্যাপদগুলোর ম‚ল পাÐুলিপি আবিষ্কারের ঘটনা থেকে এর সমর্থন মেলে। সর্বোপরি এ জনপদের সমৃদ্ধ লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি, লোকনাট্য ও প্রবাদ প্রবচনের যে বিশাল ভান্ডার তা যে আধুনিক সাহিত্যজনের সাহিত্য ভাষা নির্মাণ-প‚র্ণ নির্মাণের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই প্রাচীন সভ্যতার কোনো নিদর্শন যদি খুঁজে পেতে চাই তাহলে তার সন্ধান করতে হবে প্রাচীন জনপদ ঠাকুরগাঁও ও সংলগ্ন এলাকাতেই। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ আবিষ্কৃত হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের কাছাকাছি নেপালের রাজদরবার থেকে।
প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় উল্লেখ করা যায় যে, সংগ্রামী ঐহিত্যের দিক থেকেও ঠাকুরগাঁও জনপদের ইতিহাস অনেক ঘটনাবহুল। প্রজা ও কৃষক বিদ্রোহ, ফকির বিদ্রোহ, সন্নাসী বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলন-ইতিহাসে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এসব ঘটনার ঢেউ উত্তরের অন্যান্য জনপদের মতো আছড়ে পড়েছিল ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে। জনমনে এসব ঘটনা নানামাত্রিক ঘাত অভিঘাত তৈরি হবে এটাই স্বাভাবিক। প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার উঠে এসেছেন জলপাইগুড়ি থেকে। তার বিখ্যাত উপন্যাসগুলো বেশ কয়েকটিতে এ জনপদের যাপিত জীবনের চালচিত্রই জীবন পেয়েছে।
কৃষক বিদ্রোহের বীর চরিত্র ন‚রুল দিনের কথা নিয়ে কালজয়ী কাব্যনাট্য রচনা করেছেন সৈয়দ শামসুল হক যা উত্তর জনপদের সংগ্রামী ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। ঠাকুরগাঁও বর্তমান ভৌগোলিক কাঠামোটি নানা প্রশাসনিক ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলির ধারাবাহিকতা ও পরিবর্তনের ফসল। এক সময় এ জনপদ ছিল কুচবিহার রাজ্যের অধীনস্থ। পরিবর্তনের ধারায় রংপুর ও জলপাইগুড়ি জেলার সঙ্গে সম্পর্কিত থাকার পর ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগজনিত পরিস্থিতে এটি বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮০০ সালে ঠাকুরগাঁও থানা স্থাপিত হওয়ার পর ১৮৬০ সালে সদর, বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল, হরিপুর ও আটোয়ারী নিয়ে ঠাকুরগাঁও মহকুমার যাত্রা। পরবর্তীতে জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার পঞ্চগড়, বোদা, দেবীগঞ্জ ও তেঁতুলিয়া এ চারটি থানা ঠাকুরগাঁও মহকুমার সাথে সংযুক্ত হয়।
১৯৮১ সালে আটোয়ারী সহ উক্ত ৪টি থানা নিয়ে পঞ্চগড় মহকুমা সৃষ্টি হলে ঠাকুরগাঁও মহকুমার সীমানা বর্তমান ৫টি উপজেলার মধ্যে সংকুচিত হয়। ১৯৮৪ সালে ১ ফেব্রæয়ারি ঠাকুরগাঁও জেলা হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
সাহিত্য অঙ্গনে ঠাকুরগাঁও-র অবস্থান বিষয়ে আলোচনা পর্যালোচনার ক্ষেত্রে উল্লিখিত ঘটনাবলি নানা কারণেই প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগজনিত পরিস্থিতিতে ঠাকুরগাঁও -র আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন স‚চিত হয়। ঠাকুরগাঁও-র মানুষের জীবনযাপন, ব্যবসা-বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক চর্চা, ক্ষেত্রেই স্থানীয় মানুষ এবং অধিবাসীদের সমন্বয়ী একটি নতুন পথ অন্বেষণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে দাবি করা যায় যে, ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ সমন্বয়ে এখানে যে স্রোতধারাটি তৈরি হয় সামগ্রিকভাবে তা যে বাঙালি চেতনার ম‚ল সুরটিকেই ধারণ করেছিল, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ঠাকুরগাঁও’র ছাত্র-যুব সমাজের অংশগ্রহণ সেই সত্যকেই তুলে ধরে।
দেশ বিভাগ পূর্ববর্তী সময়ে এ অঞ্চলের সাহিত্য-সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসাবে জলপাইগুড়ি নামটিই অগ্রগণ্য ছিল। জলপাইগুড়ির আওতাধীন প্রান্তিক শহর ঠাকুরগাঁও সে সময় বাংলা সাহিত্যের ম‚ল ধারা চর্চা কতটা ছিল সে বিষয়ে পদ্ধতিগত কোনো গবেষণা না থাকায় খুব বেশি তথ্য নেই। কালোত্তীর্ণ কোনো সাহিত্য প্রতিভার নামও সেভাবে উচ্চারিত হয় না। ঠাকুরগাঁও-র সাহিত্য শিল্পের চর্চা প্রধানত: লোক সাহিত্যের ধারায় বিকশিত হয়ে আসছে। গ্রামের নিরক্ষর মানুষ এখানে তাদের আবেগ অনুভুতি, জীবন দর্শন ও তত্ত¡কথা লোক সংগীত, লোক নাটক ছাড়াও প্রবাদ প্রবচন ও ধাধাঁর মধ্যে ব্যক্ত করছেন । লোক সংস্কৃতির ধারায় সত্যপরীরের গান ও মেয়েলী গীতও এই অঞ্চলে ব্যাপক ভাবে প্রচলিত আছে ।
সাহিত্য শিল্পের আধুনিক ধারায় ঠাকুরগাঁওয়ে চর্চা ও অনুশীলন অব্যাহত রয়েছে । তবে এই র্চ্চা ও অনুশীলন মূলত: শহরকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে । উপজেলা বা থানা শহর গুলোতেও সাহিত্য শিল্পের আধুনিক ধারার র্চ্চা চলছে । সাহিত্য চ্চার্র দানা বেধেঁ ওঠে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকাকে কেন্দ্র করে। দেশ বিভাগের পূর্বে এখানে প্রকাশিত ঠাকুরগাঁও দর্পন নামের পত্রিকাটি সাহিত্য র্চ্চা সূচনা করে । পরবতীতে দেশ বিভাগের পরে এবং স্বাধীনতার উত্তরকালে কথাকলি , সংগ্রামী বাংলা, গ্রামবাংলা, দৈনিক ব্ংালাদেশ , এসো চেয়ে দেখি , পৃথ্বী, উষসী, চালচিত্র, সেনুয়া, টাংগন, মাসিক সূচনা, সাপ্তাহিক জনরব , ঠাকুরগাঁও র্বাতা এবং অধুনা প্রকাশিত দৈনিক লোকায়নসহ বেশ কিছু পত্র-পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন ও দেয়ালিকা ঠাকুরগাঁও-র সাহিত্য র্চ্চায় গতিবেগ দান করে ।
তবে এর মধ্যে আলপনা সাহিত্য সংসদ এর লিটল ম্যাগাজিন চালচিত্রের প্রকাশনা জেলার বাইরে সাহিত্যানুরাগী সুধী কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে । আলপনা সাহিত্য সংসদ , দিশারী আলোর কোনা, নারী লেখক গোষ্ঠী, জেলা সাহিত্য পরিষদ ও কবি সংসদ এই পাঁচটি সংগঠন কবিতা গ্রন্থ , প্রবন্ধ, ছোট গল্প প্রকাশ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই মফস্বল শহরে সাহিত্য র্চ্চা ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা সংযোজন করতে সক্ষম হয়েছে । বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ঠাকুরগাঁও শাখা এখানে সাহিত্য র্চ্চার ক্ষেত্রে এক ভিন্ন ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে । তবে দিশারী আলোর কোনা ও নারী লেখক গোষ্ঠী এখন জীবিত নেই।
ঠাকুরগাঁওয়ের কটি দৃশ্যমান সাহিত্য পরিমÐল গড়ে উঠার প্রক্রিয়াটি প্রধানত বিগত শতকের পঞ্চাশ-এর দশক থেকে শুরু হয়। নাট্যচর্চা, পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, সাহিত্য সম্মেলন, পত্রপত্রিকা প্রকাশনা ইত্যাদি নানা উদ্যোগের মধ্য দিয়ে মননচর্চার একটি ধারা ক্রমান্বয়ে বিকশিত হয়। ১৯২০ সালে ঠাকুরগাঁও শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় সাধারণ পাঠাগারটি গুণিজন ও সাহিত্যানুরাগীদের অন্যতম সম্মেলন কেন্দ্রে পরিণত হয়। পাঠাগারটিতে বিভিন্ন সময়ে সাহিত্যবিষয়ক আসর ছাড়াও সাহিত্য সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়। উপনিবেশিক যুগের কবি নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায় জন্ম অবিভক্ত বাংলার অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার বর্তমান ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো তিনি দেশ ভাগের আগে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে গেছেন ।
হাসান আজিজুল হকের মতো ভারত ছেড়ে আসতে হয় বাংলাদেশের আরেকজন বাঙালি কথাসাহিত্যক, সাংবাদিক ও শিক্ষক শওকত আলীকে। ৬০Ñর দশকে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে অধ্যাপনা শুরু হয় বাংলা সাহিত্যের নিভৃতচারী এই তারকার । সেই সময়ে তিনি ঠাকুরগাঁও থেকেই লেখালেখি শুরু করেন । প্রথিতযশা এই লেখকের হাতের স্পর্শ পেয়েছিলেন তারই অনুগত ছাত্র ঠাকুরগাঁও সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজন শিক্ষাবিদ প্রফেসর মনতোষ কুমার দে ।
বাংলা নাট্যজগতের একজন খ্যাতনামা অভিনেত্রী ও কবি তৃপ্তি মিত্র ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়ে । বাবা আশুতোষ ভাদুরি। মা শৈলবালা দেবী। তাঁদেরই নয় মেয়ে , এক ছেলের একজন তৃপ্তি । ১৯২৫ ’র ২৫ অক্টোবর তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে জন্ম গ্রহণ করেন । শৈশবে তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে নাট্য সমিতি মঞ্চে শিশু শিল্পীর চরিত্রে অভিনয় করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি প্রগতিশীল নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।
১৯৪৩ সালে ফ্যাসিবিরোধী লেখকশিল্পী সংঘের প্রথম নাটকের নারীশিল্পী না থাকায় তার মামাতো ভাই বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকে তিনি অভিনয় করেন। বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে যাওয়ার পর তাঁর অভিনয়ের বিকাশ ও খ্যাতি বাড়তে থাকে। ১৮৪৫ সালে শম্ভূ মিত্রের সঙ্গে বিবাহ হওয়ার পর তাঁর নাম হয় তৃপ্তি মিত্র যে নামে তিনি বেশি পরিচিত। শম্ভূ মিত্র ছিলেন একজন খ্যাতনামা অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক। নাট্য মঞ্চের এক মহান এই অভিনেত্রীকে আমরা হারিয়ে ফেলি ১৯৮৯ সালে। তাঁর সুযোগ্য কন্যা শাঁওলি মিত্রও একজন অভিনেত্রী। নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায় ও তৃপ্তি মিত্রের সৃজনশীলতা কৃতীত্ব অজর্নে ঠাকুরগাঁও গর্বিত।
প্রায় ৪০ দশকের দিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আগমন ঘটেছিল ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে । কবি বিদ্যালয় আয়োজিত বার্ষিক মিলাদ মাহফিলে আমন্ত্রিত ছিলেন। ৮০ এবং ৯০ দশকে অতিথি হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে এসেছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুন ও প্রখ্যাত কথা সাহিত্যক হাসান আজিজুল হক। অপরদিকে ঠাকুরগাঁও-র মাটিতে পদধূলী দিয়েছেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক , শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ ও কবি আসাদ চৌধুরী ।
মুক্তিযুদ্ধ পূর্বকাল থেকেই ঠাকুরগাঁওয়ের যেসব গুণিজন লেখালেখি, পত্র-পত্রিকা প্রকাশনা ইত্যাদি সৃৃৃজশীল কাজে যুক্ত ছিলেন তারা হলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিকার প্রফেসর মনতোষ কুমার দে, কাজী মাজহারুল হুদা, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আবুল হোসেন সরকার, মুহম্মদ জালাল উদ-দীন, আবু ইয়াসিন, সৈয়দা জাহানারা, আবুল কালাম আজাদ, মুছা সরকার প্রমুখ।
ঠাকুরগাঁও সাহিত্যযাত্রায় কয়েকটি পাঠাগার ও একটি সাহিত্য সংগঠনের সৃজনশীলতা চর্চার পরিষেবা গঠনে বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে এগুলোর মধ্যে সাধারণ পাঠাগার ও সরকারি গ্রন্থাগার উল্লেখযোগ্য। উপজেলা শহর পীরগঞ্জের পাঠাগারটি এক সময় সাহিত্য পরিষেবায় ভুমিকা রেখেছিলেন। তবে এটি এখন পরিত্যক্ত।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালের নতুন পরিস্থিতি এবং নতুন আশা প্রত্যাশার প্রেক্ষাপটে দেশের সাহিত্য অঙ্গনে একটি বাঁক পরিবর্তন এবং নতুন দিগন্ত অন্বেষণের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এ পরিবর্তমান সময়কে ধারণ করে আধুনিক যুগের প্রাথমিক পর্যায়ে ঠাকুরগাঁওয়ের উল্লেখযোগ্য কবি সাহিত্যকরা হলেন প্রত্যুষ কুমার চ্যাটার্জ্জী, রাজা সহিদুল আসলাম, হোসেন মোতাহার , আশরাফ উল আলম, রহিমা চৌধুরী ঝর্ণা ,প্রফেসর ড. নাজমুল হক বেলাল রব্বানী, অনুপম মনি, আলো ইসলাম, তাজুল ইসলাম (রাণীশংকৈল), আনোয়ারুল ইসলাম (রাণীশংকৈল), মতিয়ার রহমান (সহযোগি অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রংপুর কারমাইকেল কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়), মাসুদ আহম্মদ সুবর্ণ, মৌসুমী রহমান, নুর উস সাদিক, গোলাম সারোয়ার স¤্রাট, মীর সাবু, জিয়াবউদ্দিন শিহাব, মো. ইমরান, মাহবুবা আখতার , রাফিক আহানজ,আজমত রানা, মাসুদুর রহমান মাসুদ (পীরগঞ্জ), সরকার ফজলুল হক, নিকুঞ্জ কুমার বর্মন, ডা. নাসিমা আক্তার জাহান, দিলারা রুমি , মনোয়ারা বেগম লিলি, বলহরি, আফরোজা রিকা, মিতা চক্রবর্তী, আরফিন জান্নাত শাম্মী (বালিয়াডাঙ্গী), ফারজানা হক, জেসমিন আক্তার জুইঁ( বালিয়াডাঙ্গী), ইসমাইল হোসেন, হাবিবা বেগম, সেলিনা বেগম প্রমুখ। সাহিত্য অঙ্গন থেকে শুধু নয়, জগৎ সংসার ছেড়ে চলে গেছেন তারা হলেন সৈয়দা জাহানারা , আবুল কালাম আজাদ, আলো ইসলাম ও কবি আবুল হোসেন সরকার।
বর্তমানে ঠাকুরগাঁওয়ের যেসব কবি সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অবদান রেখে চলেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্যরা হলেন প্রফেসর মনতোষ কুমার দে, রাজা সহিদুল আসলাম , ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান , প্রফেসর ড. নাজমুল হক , হোসেন মোতাহার, গোলাম সারোয়ার সম্রাট, তাজুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজস্ব মেধা, মননশীলতা ও সাহিত্য ভাবনার মাধ্যমে সাহিত্য অঙ্গনে নতুন ঢেউ সৃষ্টির অন্তর্গত তাগিদে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতিশীল লেখক ,কবি ঠাকুরগাঁও-এ সাহিত্যচর্চায় নিবেদিত আছেন। তাদের অনেকেরই একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে অনেকের গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায়।
প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে, যে কোনো এলাকায় একটি সাহিত্য পরিমÐল গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা সাংগঠনিক উদ্যোগে সাহিত্য প্রকাশনা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ঠাকুরগাঁও-এ বেশ কিছু সাহিত্যপত্র ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এলাকার সাহিত্যমনস্ক মানুষের সমাদৃত হয়। এ ক্ষেত্রে ইত্যাদি ছোট ছোট প্রকাশনা বিভিন্ন সময় সাহিত্য উদ্যোগের স্বাক্ষর বহন করে। এসব প্রকাশনার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সম্ভব না হলেও এগুলো যে এলাকার সাহিত্য তাড়িত মানুষের অন্তরের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
তাই আমরা অপেক্ষায় আছি একদিন ঠাকুরগাঁও তার সাহিত্যকৃতির জন্য আমাদের সাহিত্য অঙ্গনে গুরুত্বসহ উপস্থাপনের যোগ্য হয়ে উঠবে। ঠাকুরগাঁও লেখক কবিদের কৃতির জন্য পাঠক নিজে থেকে খুঁজে নেবেন।
https://slotbet.online/