ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদ নির্বাচনে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দত্ত সমীরের কাছে সদস্য পদে পরাজিত হয়ে সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারুল ইসলাম সরকার এবার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ লড়ছেন।
ভোটের মাঠে কথা উঠেছে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলী সদস্য ঠাকুরগাঁও১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন’র সমর্থিত প্রার্থী তিনি। আওয়ামী লীগের একাংশ নেতাকর্মীরা নির্বাচনী সভাগুলোতে প্রকাশ্যে এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে মোশারুলের পক্ষে ভোট চাইতে দেখা গেছে। যদিও এমপি সরাসরি কোন প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় এখনো দেখা যায়নি। তবে নির্বাচনী মাঠে তার যে প্রভাব রয়েছে তা বিভিন্ন প্রচারণায় আওয়ামীলীগ নেতাদের বক্তব্যে তা স্পষ্ট।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় এবং অন্যান্য দল ভোটে অংশ না নেওয়ায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান সহ একই দলের নয় জন প্রার্থী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
তবে এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে আওয়ামী লীগের এই প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ার কারনে দলের অভ্যন্তরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বড় ধরণের বিভেদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে ঠাকুরগাঁও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছেন দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে, জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়কে এক নির্বাচনী সভায় মোশারুল ইসলামের পক্ষে ভোট চাইতে দেখা গেছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, আমরা আমাদের পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন দেবো এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সংসদ সদস্যের চাপে এক প্রকার কোণঠাসা হয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সমর্থিত প্রার্থীর নির্বাচন করতে হচ্ছে। মূলত এই নির্বাচনকে কারো সার্থের জন্য প্রবাহিত করা হচ্ছে।
তারা আরো বলেন, সদর উপজেলায় চার জন চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন আওয়ামী লীগের নেতা ও একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। যে যার সমর্থিত প্রার্থীর প্রচারণায় নামবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ক্ষমতাসীন কোন এমপি যদি বাড়িতে ডেকে নিয়ে এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের দিয়ে তার মদদপুষ্ট ব্যক্তিকে জেতাতে বার্তা পাঠান তাহলে এটি নির্বাচনে ভোটারদের প্রবাহিত করা ছাড়া আর কিছু নয়। এটি মুক্ত চিন্তার উপর চরম বেত্রাঘাত। এতে করে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে বাঁধাগ্রস্থ হবে ভোটাররা।
আর ভোটারা বলছেন, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নেতারা নোংরামি শুরু করেছে। কেননা যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে তারা সবাই আওয়ামীলীগের। কিন্তু আমরা দেখছি এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে গেছে। এতে করে আমরা তৃণমূলের সাধারণ ভোটাররা আতঙ্কিত।
চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিযোগিতা করা অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. অরুনাংশু দত্ত টিটো, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কামরুল হাসান খোকন ও জেলা আওয়ামিলীগ সহসভাপতি রওশনুল হক তুষার।
প্রার্থীদের দাবি, যে যার সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনের প্রচারণা করুক কোন আপত্তি নেই। তবে ভোটারদের যেন কোন ভাবে দলের প্রভাব দেখানো না হয়। দলীয় প্রভাব এবং ক্ষমতাসীন কোন ব্যক্তির প্রভাব যেন দেখানো না হয় সেটাই আহ্বান থাকবে।
কোন একক প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে দলের নেতাকর্মীদের চাপ দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে যোগাযোগ করা হয় ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের সঙ্গে।
তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমি কাউকে কিছু বলতে বলি নাই, চারজনে আমাদের দলের। কে হবে হোক। কারা এভাবে আমার নামে প্রচারণা চালাচ্ছে সেটা আমি দেখছি।
এব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুর রহমান বাবলু যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জেলা নির্বাচন অফিসের দেয়া তথ্য মতে, ২য় ধাপে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হবে ভোট। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান মিলে মোট ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। পৌরসভা ও ২২টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ১৭৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯০৩, নারী ২ লাখ ৪২ হাজার ২৬৮ ও হিজরা ৪ জন। ১৮৫ টা ভোট কেন্দ্র ও ১৪৫৩ টি বুথ রয়েছে।
আরএম/ টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/