টাঙ্গন ডেস্ক, ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাদারগঞ্জ গ্রামে শ্রী শ্রী রশিক রায় জিউ মন্দির এলাকায় দূর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুটি গ্রুপ সনাতন ধর্মালম্বী এবং ইস্কন মতাদর্শ লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা তৈরী হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে একই স্থানে এ নিয়ে ১১ বার জারি করা হলো ১৪৪ ধারা।
রোববার (১৩ অক্টোবর) দুপুর ১২ টায় এ জারির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেলায়েত হোসেন এ আদেশ জারি করেন। যা ৭ অক্টোবর ভোর ৬টা হতে ১৩ অক্টোবর দুপুর ১২টা পর্যন্ত বলবত থাকবে।
আদেশে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাদারগঞ্জ গ্রামে শ্রী শ্রী রশিক রায় জিউ মন্দিরে দূর্গা পুজা উদযাপনকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এবং মন্দিরের নামে থাকা অধিক পরিমান জমি-জমা ভোগদখলকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুটি গ্রুপ সোনাতন ধর্মালম্বী এবং ইস্কন মতাদর্শ লোকজনের মধ্যে দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর ধরে বিরোধ চলে আসছিল।
আরও পড়ুন : রশিক রায় জিউ মন্দিরের পূজা পরিদর্শনে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক
আদেশে আরও জানা যায়, মন্দীরে সম্পত্তি নিয়ে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে মারামারিসহ খুনের ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষের বেশ কয়েকটি মামলাও চলমান রয়েছে। উভয় পক্ষের মধ্যে সাংঘর্ষিক সম্পর্ক বিরাজ করার কারণে ৭ অক্টোবর ভোর ৬টা হতে ১৩ অক্টোবর দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারির আদেশ প্রদান করা হয়।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিনের পুরাতন শ্রী শ্রী রসিক রায় জিউ মন্দিরের নামে ২টি মৌজায় মোট ৫২ একর দেবত্তোর জমি রয়েছে। এই জমির মালিকানা নিয়ে মন্দিরের সেবাইত ফুলেন চন্দ্র সরকারের সাথে এলাকার কিছু লোকজনের বিরোধ চলছিল।
১৯৯৩ সালে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সেই বিরোধের নিস্পত্তি হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে ইস্কনের লোকজন ওই জমির মালিকানা দাবি করে আকস্মিক ভাবে মন্দিরে অবস্থান নেয়। এই নিয়ে ২০০৯ সালে সেখানে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে ও ইস্কনের লোকজনের সংষর্ষ হয়। এতে ফুলবাবু নামে একব্যক্তি মারা যায়। এ ঘটনায় ইস্কনের লোকজনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এই নিয়ে সেখানে দুই পক্ষের বিরোধ চলতে থাকে এবং প্রতি বছর দূর্গা পূজার সময় উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এ বিরোধ নিরসনে আপোষ মিমাংশার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় প্রশাসন।
পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ওই মন্দিরে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ দূর্গা পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি নিলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এই উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি সাভাবিক রাখতে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। এবারও সেই ধারা অব্যাহত আছে। এ নিয়ে ১১ বার ১৪৪ ধারা জারি হলো।
একটি সূত্র বলছে, বিষয়টি এতোদিনে মিমাংসা হয়ে যেতো কিন্তু সাবেক সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের স্ত্রী ইস্কনের একজন সদস্য এবং তিনি কেন্দ্রীয় ইস্কনেরও একজন সদস্য। রমেশ চন্দ্র সেন ক্ষমতায় থাকায় তিনি ইস্কনের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন, ফলে বিষয়টি দীর্ঘস্থায়ী হয়। সূত্রটি আরও জানায় নির্বাচনের সময় রমেশ চন্দ্র সেন এখান থেকে অনেক টাকাও নিতেন। শুধু রমেশ চন্দ্র সেনই নয়, ঠাকুরগাঁওয়ের হিন্দু নেতাসহ অনেকেই বিভিন্ন ভাবে এখান থেকে সুবিধা ভোগ করতেন।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই মন্দিরের সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ আছে। এবার এই পূজা শেষে আমরা তাদেরকে আশ^স্ত করেছি দুই পক্ষের রেকর্ডপত্র ও অন্যান্য বিষয়াদি যাচাই করে এই সমস্যাটির কি পার্মানেন্ট সলিশন হতে পারে সে বিষয়ে উদ্যোগ নিবো।
এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/
[…] […]