টাঙ্গন ডেস্ক নিউজ : কার্যকর এডিআর ব্যবস্থার মাধ্যমে মামলার দীর্ঘ সূত্রীতা ও মামলা জট কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকাল ৩ টায় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে ব্লাস্ট আয়োজিত ‘‘বিচার বিভাগীয় ও পুলিশ সংস্কার সংক্রান্ত প্রস্তাবিত সুপারিশমালা” শীর্ষক আলোচনায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি উল্লেখ করেন আদালতের বিভিন্ন কার্যক্রম ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পরিচালনা করে কিভাবে সময় ও সম্পদ বাচানো যায় সে ব্যবস্থাও করতে হবে।আসামীদের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় ব্যয় হ্রাস করার জন্য হাজিরার জন্য আলাদা করে আদালত কক্ষ তৈরী করা যেতে পারে।
তিনি বলেন মামলার দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাস করার জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। সেই সাথে বিশেষ আদালত তৈরী করা যেতে পারে। আইনজীবীদের নিয়মিত নতুন আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা প্রয়োজন যাতে আইনগুলো সচল হয় এবং আইনজীবীদের মাধ্যমেও বিচারকেরা নতুন আইন সম্পর্কে জানতে পারে।
এছাড়াও তিনি বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও যোগ্যতা নির্ভর নিয়োগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাকে কিভাবে কার্যকরী করা যায় সে দিকেও নজর দিতে হবে। বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন স্বত্তা থাকা জরুরী, যারা আবেদনকারীর যোগ্যতার ভিত্তিতে বিচারক নিয়োগ দিবেন।
সেই সাথে বিচারকদের নিয়মিত কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন করাও প্রয়োজন যাতে করে তা মামলা দায়েরকারীদের কোনভাবে প্রভাবিত করতে না পারে। পাশাপাশি বিচারকের কর্মদক্ষতা হ্রাসে পেলে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের বিচারককে বরখাস্ত করারও অধিকার থাকতে হবে।
মাননীয় বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী আরও বলেন, পুলিশ বাহিনীকে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে যাতে তারা কোন ক্ষমতাশালী দ্বারা প্রভাবান্বিত না হয়ে তার দায়িত্ব পালন করতে পারে। পুলিশ যাতে স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করতে পারে সে জন্য আমাদের পুরো ব্যবস্থার পরিবর্তন করা জরুরী। স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, একজন আসামী হিসেবে শাস্তি ভোগ করে জেল থেকে বের হওয়ার পরে তার পুনর্বাসনের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না এবং তার চারিত্রিক পরির্তন যে হয়েছে সে সম্পর্কে কোন ধরনের সনদ প্রদান করা হয় না।
আলোচ্য বিষয়ে সারসংক্ষেপ উপস্থাপনা করেন, ব্লাস্টের জেন্ডার জাস্টিস এন্ড উইম্যান এমপাওয়ামেন্ট এর আইন বিশেষজ্ঞ এডভোকেট আয়েশা আক্তার এবং ব্লাস্টের গবেষণা কর্মকর্তা ফাহাদ বিন সিদ্দিকি।
বিচার বিভাগীয় সংস্কার নিয়ে আলোচনায় বিচারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব, বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা, ভুক্তভোগী ও সাক্ষী, আইনজীবী ও বিচারকদের সুরক্ষার অভাব, শিশু আদালতে মামলা প্রেরণে অনিয়ম, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং বিচার ব্যবস্থায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্যমান বৈষম্যের প্রতিবন্ধকার উপর আলোকপাত করা হয়।
এছাড়া আদালতের কার্যক্রম সম্প্রচার, আদালতের কার্যক্রমে প্রযুক্তির ব্যবহার:ডিজিটালাইজেশন: নোটিশ ও সমন ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রেরণ, ভার্চুয়াল শুনানি: ২০২০-এর আইটি আইন পুরোপুরি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়। ভুক্তভোগীদের সুবিধা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ জুডিশিয়াল সার্ভিস”:এক স্থানে মামলা দায়ের, সেবা গ্রহণ, ও আইনি প্রতিকার এবং প্রাথমিক পর্যায়ে বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার উদ্যোগসহ নানান ধরনের সংস্কার সুপারিশের কথা উঠে আসে।
পুলিশ সংস্কারের জন্য জাতিসংঘ নির্যাতন বিরোধী সনদ ও এর ঐচ্ছিক প্রোটোকল এবং ইস্তাম্বুল প্রটোকলসহ গুরুত্বপূর্ণ সনদের অনুমোদন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ৫৪ ও ১৬৭ ধারাসহ ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন, পুলিশ প্রশিক্ষণের শিক্ষাক্রমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের (আদিবাসী, দলিত, লিঙ্গ বৈচিত্র্যপূর্ণ জনগোষ্ঠী) প্রথা এবং সাংস্কৃতিক নিয়মাবলী সম্পর্কে সচেতনতামূলক পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা, কোন শিশুকে হেফাজতে নেয়ার সময় বা তাকে নিয়ে পরিবহন করার সময় আলাদা স্থানে রাখার ব্যবস্থা করা এবং লিঙ্গভিত্তিক ও পারিবারিক সহিংসতার ক্ষেত্রে, অভিযোগকারী যাতে অনলাইনে অভিযোগ দায়ের করতে পারে তার জন্য একটি নির্ধারিত ওয়েবপোর্টাল চালু করাসহ আরো বেশকয়েকটি সুপরিশ উপস্থাপনা করেন।
আলোচনা সভায় উপস্থিত জুলাই আন্দোলনের ভুক্তভোগী সাদিক শাহরিয়ার জারিফ বলেন, ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষেত্রে পুলিশ তাদের বয়স বাড়িয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক দেখিয়ে মামলা করছে যা তাদের ভোগান্তি বাড়ায় তাই মামলা করার সময় বয়স নিরুপনের বিষয় থাকা উচিত।
এছাড়াওআলোচনা সভায় উপস্থিত আলোচকগণের বক্তব্যে উঠে আসে, পুলিশের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, অনেক ক্ষেত্রে থানায় গিয়ে জিডি করা যায় না, থানায় মামলা নিতে চায় না, বিষয়গুলো সহজীকরণ করা জরুরী। স্থানীয় থানায় জনগন কীভাবে মানবিক মর্যাদা পাবে সে বিষয় নিশ্চিত করা জরুরী।
পুলিশের কাছে সাধারণ ডায়েরী করতে বললে শ্রমিকেরা পুলিশের কাছে যেতে চায় না এক্ষেত্রে সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি জরুরী। ইতোমধ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, অতীতে ১৯৯০ এবং ১/১১ এর সময়েও বেশ কিছু অধ্যদেশ তৈরী করা হয়েছিল, কিন্ত সরকার গঠনের পরে রাজনৈতিক দলগুলো আর তার কার্যকারীতার জন্য কাজ করে নাই তাই ভবিষ্যতে এ ধরনেরঘটনাএড়াতেনির্বাচিতসরকারকীভাবে এ সংস্কারগুলোকে নিয়ে কাজ করবে তা প্রতিষ্ঠা করতেও আমাদের আলোচনা করা দরকার যাতে আমাদের সংস্কার আমাদের অর্জনগুলো হারিয়ে না যায়।
Legal Practitoner Fees Act, 1919 কার্যকর করা যেতে পারে যার মাধ্যমে আইনজীবীদের মর্যাদা নিশ্চিত করা যেতে পারে। নিম্ন আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুই বছরের আইনজীবী হিসেবে কাজ করার কর্ম অভিজ্ঞতা থাকাটা শর্ত হিসেবে যুক্ত করা উচিত।
এডভোকেট তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় উক্ত সভায় আলোচনা করেন এডভোকেট খন্দকার শাহরিয়ার শাকির, এডভোকেট আমিনুল হক তুহীন, এডভোকেট শিহাব আহমেদ সিরাজী, এডভোকেট রবিউল ইসলাম রবি, বৈষম্য বিরোধী আইনজীবী ফোরাম এর এডভোকেট নাফিউল আলম সুপ্ত, এডভোকেট আবিদ হোসেন আনসারী।ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস.এম রেজাউল করিম, ব্লাস্টের পরিচালক (আইন) এডভোকেট মোঃ বরকত আলী, ব্লাস্টের ঢাকা ইউনিটের সমন্বয়কারী এডভোকেট মোঃ মশিউর রহমান, এডভোকেসি ও কমিউনিকেশন পরিচালক মাহবুবা আক্তার, ব্লাস্টের প্যানেল আইনজীবী এডভোকেট নমিতা রাণী বিশ্বাস।
এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/