• রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০২ অপরাহ্ন

শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বছরে ৮টি বোনাস নেন, যা বেতনের কয়েকগুন

Reporter Name / ৫১ Time View
Update : সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

আবু মহী উদ্দীন, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, ঠাকুরগাঁও

অর্থ ব্যয়ে বাংলাদেশের ১১ টি শিক্ষা বোর্ড যে স্বাধীনতা ভোগ করে পৃথিবীর আর কোন দেশের শিক্ষা বোর্ড এ রকম স্বাধীনতা ভোগ করে কি না গবেষনার বিষয়। আমার ধারণা বাংলাদেশের শিক্ষা বোর্ডের স্বাধীনতার এই বিষয়টি জাতিসংঘকে জানালে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের এই ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভের জন্য আসবে। আর বিদেশীরা আসলে দেশের আয় বাড়বে।

শিক্ষা বোর্ডগুলি দেশের গরীব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাধ্যতামুলকভাবে অঢেল অর্থ আয় করে আর দুহাত খুলে খরচ করে মুলত: নিজেরা ভাগাভাগি করে নেয়। দেশের সরকারি কর্মচারীরা ২ ঈদে মুল বেতনের সমপরিমান এবং আংশিক বৈশাখী ভাতা পায়। আর শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারীরা ১২ মাসে ৮ টি বোনাস গ্রহণ করেন। তারা যে বোনাস নেন তা তাদের বেতনের চেয়ে কয়েকগুন বেশী।

বছরে আটটি বোনাস ও নানা ধরনের সম্মানি নেওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ তারা ইচ্ছা মতো বিভিন্ন পরীক্ষার ফি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করেন এবং ব্যয় করার সুযোগ না থাকলেও তারা নিজেরাই নিয়ম করে দীর্ঘদিন ধরে এই বোনাস নিয়ে যাচ্ছেন। আর এই টাকায় বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিলাসী জীবন যাপন করছেন। ভাবতে পারা যায় , বোর্ডের কর্মকর্তারা সনদে স্বাক্ষর করেন তার জন্যও নির্ধারিত হারে টাকা নেন। টাকা খরচের বিষয়ে প্রতিটি বোর্ডের চেয়ারম্যান একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধনী ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। তাদের খরচ ও ভাতা-সম্মানিও বেশি। ইচ্ছে মতো খরচের পরও তাদের কয়েক শ কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। এর পরও প্রায় প্রতিবছরই বাড়ানো হচ্ছে পরীক্ষার ফি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অঢেল টাকা :

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩১ লাখ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ পরীক্ষার ফি নেওয়া। সব খরচ নির্বাহ করেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে শত শত কোটি টাকা রয়েছে। এর পরও তারা পরীক্ষার ফি বাড়িয়ে যাচ্ছে।

এনটিআরসিএ ফান্ডে বড় অঙ্কের টাকা :

এনটিআরসিএ প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নামে শিক্ষকদের নিবন্ধন দিয়ে থাকে। একেকটি নিবন্ধনে কয়েক লাখ প্রার্থী অংশ নেন। এরপর তারা চাকরির সুপারিশের আবেদনের জন্যও আলাদা ফি নেয়। এতে ২০০৫ সাল থেকে চালু হওয়া প্রতিষ্ঠানটির ফান্ডেও বড় অঙ্কের টাকা জমা হয়েছে। তার পরও তারা ফি বাড়ায়।

শিক্ষা বোর্ডের আয় ইনকামের এখানেই শেষ নয়। আরো কত খাত আছে তা জানা নাই তবে ২/১টি খবর আমি জানি।  শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা আর কি করেন তার ২টা নমুনা।

যশোর শিক্ষাবোর্ডের সভা, চেয়ারম্যান সাহেব ডিউটি আওয়ারে নিজের চেয়ারে বসে সভা করেছেন, তিনি সম্মানী মানুষ, সুতরাং সম্মানী কিনে নিয়েছেন। ঐ মিটিংয়ে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা ৮ জন ছিলেন। মোটামুটি ঘন্টা খানেকের মিটিংয়ের জন্য ৩২ হাজার টাকার সম্মান কিনতে পেরেছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। এ রকম সম্মান তারা বছরের পর বছর কিনে থাকেন।

আবার প্রোগ্রামার জাকির হোসেন সাহেব একই জায়গায় একই সময়ে একই জাতের ২টি মিটিং করে ২ হাজার করে ৪ হাজার ৩টি মিটিং করে ৬ হাজার টাকা নিয়েছেন। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা এতটাই সম্মানী যে তারা ছুতানাতা মিটিং করে নিজেদের সম্মানিত করেন। যশোর শিক্ষা বোর্ডের এই রকম সম্মানীদের সম্মান কিনতে গত বছরের শেষ ৩ মাসে ৪ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকার খরচ হয়েছে। বিষয়টি কেবল যশোর শিক্ষা বোর্ডের নয়, সব বোর্ডেরই।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সম্মানের কোন সীমা নাই। তাদের কাছ থেকে সব সম্মানই কিনে নিতে হয়। শুধুতো মিটিং করারই সম্মান আছে তা নয়। তাদের সম্মানের কতগুলো ক্ষেত্র আছে তাও বলা মুশকিল।

আমি একটা ছোট ক্ষেত্রের কথা বলি। ১৯৭৯ সাল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের কাছ থেকে স্কাউট ফি আদায় করা হয়। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্য ৩২ জনের একটা স্কাউট দল থাকবে। অর্থাৎ একটা স্কুলে ১০০০ ছাত্র থাকলেও স্কাউটিং করতে পারবে ৩২ জন। কিন্তু সকল ছাত্রদের নিকট থেকে বাধ্যতামুলকভাবে স্কাউট ফি আদায় করা হয়। এই ফি রেজিষ্ট্রেশনের সময় একবার এবং এসএসসি পরীক্ষার ফরম পুরণের সময় ২ বার মাথাপ্রতি ২৫ টাকা হারে আদায় করা হয়। এই টাকাতো বোর্ডে নগদে কেউ দেয় না। এটাতো সফটওয়ারে হিসাব হয়।

অথচ এ টাকা আদায়ের জন্য শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা যে ‘পরিশ্রম’ করেন তার জন্য তাদের সম্মানী দিতে হয়। সব ক’টি শিক্ষাবোর্ড মিলিয়ে ২ বারে প্রায় ৫০ লাখ শিক্ষার্থী ১০ টাকা হারে দিলে ৫ কোটি টাকা আদায় হয়। এই টাকার শতকরা ১৫ ভাগ হিসাবে ৭৫ লাখ টাকা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সম্মান কিনতে হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্কাউটকে। তারা আবার আঞ্চলিক স্কাউটের সভাপতি হিসাবে মিটিং করতেও সম্মানী নেন। শিক্ষা বোর্ডের এই চেয়ারম্যান সাহেব আবার স্কাউট পোষাক পরে স্কাউটদের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে যোগদান করে কিশোর তরুনদের চরিত্র গঠনের ছবক দেন। এভাবেই সম্মানীর বিনিময়ে কিশোর তরুনদের স্বেচ্ছাসেবার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের বেতন না দিলেও তারা সম্মানীর জন্যই চাকুরীতে থাকবেন। দেশের একজন করদাতা নাগরিক হিসাবে এমন দাবীতো করতেই পারি, শিক্ষা বোর্ডের একজন চেয়ারম্যানের পিছনে দেশের গরীব সন্তানের মা বাবারা কত অর্থ যোগান দেন? অসুবিধা কোথায় জানাতে, আমরা জানতে পারব কত সম্মানী কর্মকর্তা আমাদের আছে। আরো সমস্যা নাই এই কারণে যে, সব ইনকামতো ট্যাক্সেবল হবেনা।

মিডিয়া কর্মীরা দ্বায়িত্ব নিলে এই তথ্যটা হয়তো জাতি জানতে পারবে। শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তো বলতে পারতেন, দেশের গরীব শিক্ষার্থীদের ফি থেকে এই টাকা আদায় করতে আমি কোন পরিশ্রম করিনা সুতরাং কোন সম্মানী আমি নিবনা।

বোর্ডগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আটটি বোনাস নেওয়ার পরও ফান্ডে শত শত কোটি টাকা রয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভুমিকা কি? শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই তো এসব অনুমোদন করে। বিপরীতক্রমে পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় অপমান-অপদস্থ হওয়াসহ অনাকাংক্ষিত নানা ঘটনার কথা প্রায়ই শোনা যায়।

রংপুরের পীরগাছার মাহফুজুর রহমান অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা পাঁচ বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়ার পর পরীক্ষার ফি বাঁকী থাকায় দেউতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরীক্ষার রুম থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। বাড়ি ফিরে এসে ছেলেটা আত্মহত্যা করে। (ঢাকা পোস্ট, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪) সবাই জানেন পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে স্কুলের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা এই প্রথম নয়। আর এ নিয়ে এসব লেখাও প্রথম নয়।

২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর খবর: ‘চাঁদপুর বাগাদি গণি উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাথী আক্তারকে স্কুলের বেতন আর পরীক্ষার ফি মিলিয়ে ৪০০ টাকা দিতে হবে। সে ৩২০ টাকা দিতে পেরেছিল। ৮০ টাকা বাকি। স্কুলে যাওয়ার আগে সেই টাকা মা-বাবার কাছ থেকে চেয়ে সে পায়নি। এ জন্য স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক তাকেসহ আরও কয়েকজনকে রোদের মধ্যে এক ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখেন। পরদিন সাথী মায়ের কাছে ৮০ টাকা চায়। মা টাকা জোগাড় করতে বেরিয়েও ছিলেন। এরই ফাঁকে সাথী আত্মহত্যা করে।’

আপনারা ভাববেন না, ২০১৬-তে চাঁদপুরের সাথী আক্তার আর ২০২৪-এ মাহফুজুর রহমান, এই দুটোই ঘটনা! মোটেও না, সংবাদমাধ্যমে কত খবর তো আসেই না। আর যা আসে, তার দু একটা এই রকম।

‘টেস্ট পরীক্ষার ফি পরিশোধ না করতে পারায় শিক্ষকের বকাঝকা শুনে এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পেরে অভিমানে আত্মহত্যা করেছে তন্ময় চক্রবর্তী (১৫) নামে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। গত সোমবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার দশমিনার আরোজবেগী এসএ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।’ (সময়ের আলো, ১১ অক্টোবর, ২০২৩)

‘জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে স্কুলছাত্রী লাবনী আক্তারের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে তারাকান্দি গ্রাম থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বিদ্যালয়ের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে না পারায় লজ্জা থেকে বাঁচতে সে আত্মহত্যা করেছে।’ (আজকের পত্রিকা, ৫ জুন ২০২৩)‘ পরীক্ষার ফিসহ পাওনাদি পরিশোধের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ অপমান করায় পূজা রানী (১৮) নামে এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। পূজা বগুড়ার সুখানপুকুর নতুনপাড়া এলাকার প্রদীপ চন্দ্র সূত্রধরের মেয়ে এবং স্থানীয় সৈয়দ আহম্মদ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।’ (সমকাল, ২ ডিসেম্বর ২০২৩)

‘নড়াইলে বার্ষিক পরীক্ষার ফি ও কোচিংয়ের বকেয়া টাকা দিতে না পারায় আত্মহত্যা করেছে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী।’ (চ্যানেল ২৪, ১ ডিসেম্বর ২০২২)
‘ফতুল্লায় পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে লামিয়া (১৫) নামে এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।’ (১৪ মার্চ ২০২২, আমার সংবাদ) ‘স্কুলের বেতন ও পরীক্ষার ফি বাবদ ১ হাজার ৬৩০ টাকা না দিতে পারায় পান্না তার মা-বাবার সাথে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে।’ (ডেইলি অবজারভার, ১৯ মার্চ ২০২২)

এই রকম আরও অনেক খবর আছে। অর্থাৎ পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে পরীক্ষার হল থেকে বিতাড়িত হয়ে বা শিক্ষকদের বকা খেয়ে আত্মহত্যা এই দেশে প্রায়ই ঘটছে। তার সব খবর নিশ্চয়ই আসে না। আর আত্মহত্যা না করে লড়াই করে টিকে থাকে যারা, পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে এসে যারা লেখাপড়া ছেড়ে দেয় বা অতি কষ্টে গরিব সংসারে চাপ দিয়ে ফি জোগাড় করে যারা টিকে যায়, তাদের কথা তো আর আমরা সংবাদমাধ্যমে পাই না।

আমাদের দেশে ৯৮ ভাগের বেশি ছেলেমেয়ে স্কুলে যায় বলে প্রচারিত আছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে এবং ৬ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ চরম ও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। এই ৪ কোটি মানুষের পরিবার থেকে আসা ছেলেমেয়েরা কীভাবে পরীক্ষার ফি দেবে?

দেশের শিক্ষাবোর্ডগুলি ইচ্চামতো পরীক্ষার ফি আদায় করে বিভিন্ন খাত তৈরি করে বেতনের কয়েকগুন বেশী বোনাস নিচ্ছে , বিলাসী জীবন যাপন করছে, খরচের মচ্ছবের পরেও শত শত কোটি টাকা পড়ে আছে আর আমাদের গরীব ঘরের সম্ভাবনাময় ছেলেমেয়েরা পরীক্ষার ফি না দিতে পেরে আত্মহত্যা করছে।

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস স্বপ্ন দেখেন দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবীর। এখন আমাদের চার কোটি দরিদ্র মানুষের পরিবারের শিক্ষার্থীরা ভর্তি ফি, পরীক্ষার ফির ফাঁদে পড়ে কষ্ট পাচ্ছে। কেউবা আত্মহত্যা করছে। কেউ আত্মহত্যা করছে না; কিন্তু লেখাপড়া ছেড়ে দিচ্ছে কত শিক্ষার্থী! এটা কি আমরা চলতে দিতে থাকবো? আমার ধারণা মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা এসব বিষয়ে এখনো খোঁজ নেবার ফুরসত পাননি অথবা তিনি জানেন।

এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
HTML Snippets Powered By : XYZScripts.com
https://slotbet.online/
HTML Snippets Powered By : XYZScripts.com