টাঙ্গন ডেস্ক : বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে চীনারা তাদের আধিপত্য বিস্তারে পুরোদমে নেমে পড়েছে। চীনা ভাষার বিস্তার বা অন্যান্য লোক দেখানো কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ণে তারা বদ্ধপরিকর।
বাংলাদেশে চীনাদের আধিপত্য বিস্তারে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করছে অর্থলোভী একটি দেশীয় দালালচক্র। দেশের যুব সম্প্রদায়ের সর্বনাশ হচ্ছে জেনেও শুধুমাত্র নিজেদের অর্থের লোভে তারা চীনাদের সমানে মদদ জুগিয়ে চলেছে চীনাদের প্রভাব বিস্তারে সহযোগিতাও করে চলেছে তারা।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের আমলেও বেশ কয়েকজন চীনপ্রেমী অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে এই অতিসক্রিয় চীনাপ্রেমী একজন হলেন মো. শাহদাত হোসেন।
তিনি সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত লেঃ কর্নেল। ইদানিং ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাসে তার দহরম মহরম অনেটাই বেড়ে গিয়েছে। তার ঘোষিত পদ হচ্ছে ‘উই স্পিক চাইনিজ ক্লাব ‘বা ‘আমরা চীনা ভাষায় কথা বলি ক্লাব’-এর সাধারণ সম্পাদক। বলা হচ্ছে বাংলাদেশে চীনা ভাষার প্রসার তার কাজ। কিন্তু তার আসল কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রভাবশালীদের মধ্যে চীনের হয়ে প্রচার ও প্রতিপত্তি বিস্তার।
মো. বুলবুল চীনা ভাষা প্রসারের জন্য দুটি প্রতিষ্ঠান চালান। দুটিই চলে ‘উই স্পিক চাইনিজ ক্লাব’-এর ছত্রছায়ায়। একটির নাম ‘ঝোং মেং চাইনিজ অ্যাকাডেমি’। এটির ঠিকানা হচ্ছে ঢাকার মীরপুরে। মুন স্পেস এইচ ৮০৬, রোড নম্বর ১১, অ্যাভিনিউ ৬। অপরটি হলো ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড চাইনিজ ইন্সটিটিউট’। এটির ঠিকানা, ১৫/ কেএ শ্যামলী বাসস্ট্যান্ড, মীরপুর রোড, ঢাকা ১২০৭।
দুটি প্রতিষ্ঠানই দাবি করছে তারা যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য চীনা ভাষার প্রসারে কাজ করছে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশে যেসব চীনা সংস্থা কাজ করছে সেখানে চাকরির প্রলোভনও দেখানো হচ্ছে বেকারদের। চীনা ভাষা শিখে দেশে ও বিদেশে চাকরির হাতছানিতে অনেকেই আকৃষ্ট হচ্ছেন। ফলে দিন দিন বাড়ছে দুটি প্রতিষ্ঠানেরই জনপ্রিয়তা।
মো. বুলবুল চীনেও খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। গত বছর তিনি লাভ করেন, ‘চায়না বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০২৩’। তাকে ‘চায়না বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের প্রেসিডেন্ট ‘গুও পেই লিন পিটার নিজে হাতে এই সম্মান তুলে দেন। বলা হয়, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি এই সম্মান।
চীনা দূতাবাসে ‘উই স্পিক চাইনিজ ক্লাব’-এর প্রভাব অনেকেরই জানা আছে। তাই ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চীনা দূতাবাসের ‘পিপলস রিপাবলিক অফ চায়নার ‘৭৫ তম প্রতিষ্ঠা দিবসে এই ক্লাবের সকলেই বিশেষভাবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ভার অনেকটাই দেওয়া হয়েছে এই চীনা প্রেমী বাংলাদেশীকে। তিনিও দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশে চীনের হয়ে বিভিন্ন মহলে দরবার করে চলেছেন।
সাবেক সেনা অফিসার মো. বুলবুল এখন চাইছেন বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রকের সহযোগিতায় চীনা মডেলে গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তুলতে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গেও চীনাদের মৈত্রীর সেতু বন্ধনের কাজ শুরু করেছেন তিনি। তার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে,দেশের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে চীন সম্পর্কে ভালো ভালো ধারনা তৈরি করা। এরজন্য প্রচুর অর্থও আসছে বেজিং থেকে।
ইতিমধ্যেই সরকারের কাছে বেশকিছু প্রস্তাবনা গিয়েছে ‘উই স্পিক চাইনিজ ক্লাব’-এর তরফ থেকে। এইসব প্রস্তাবে মূল কথাই হচ্ছে, সামরিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন তথ্যের সমন্বয়ে গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলা। চীনা মডেলের এধরনে গবেষনা কেন্দ্র থেকে বেজিং যাতে মাউসের একটি ক্লিকেই বাংলাদেশের সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি সম্পর্কে সবসময় আপডেট থাকতে পারে সেটাই হচ্ছে এধরনের গবেষণা কেন্দ্রের মূল অভিসন্ধি।
মো. বুলবুল তার প্রস্তাবে ইয়ানান ইউনিভার্সিটি মডেলের কথা উল্লেখ করেছেন। চীনের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিকাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোয়াপারেশন ‘বা বিমস্টেক নিয়ে গবেষণার একটি বিভাগ রয়েছে। বাংলাদেশেও এমনটাই চাইছেন মো. বুলবুল। আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি তার এই প্রস্তাব গত ২৪ এপ্রিল ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ’-এ আয়োজিত ‘ডিফেন্স ডিপ্লোম্যাসি স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ ‘শীর্ষক আলোচনা চক্রে প্রদান করেন।
বহুদিন ধরেই বাংলাদেশ নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে সচেষ্ট চীন। একাত্তরে অর্জিত স্বাধীনতাকে বহুদিন স্বীকৃতি না দিলেও বহুদিন ধরেই বেজিং ঢাকার বন্ধু সাজার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে তাদের অংশগ্রহনের ফলে অনেকেই চীনকে বন্ধু হিসাবে মনে করতে শুরু করেছেন। রয়েছে নানা ধরনের প্রলোভনও। কিন্তু ভূরাজনীতির গতি প্রকৃতি বলছে চীন কখনও কোনও দেশের বন্ধু হতে পারে না।
শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান তার জ্বলন্ত উদাহরণ। মোটা সুদে ঋণদানের ফাঁদে চীন বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে জিম্মি রাখার কৌশল নিয়ে থাকে। বাংলাদেশকেও সেই লক্ষ্যেই তারা বিভিন্ন প্রলোভন দেখাচ্ছে। বর্তমানে অন্তর্র্বতী সরকারের আমলে তাদের সেই চেষ্টা আরও বেড়ে গিয়েছে।
তাই চীনা ভাষার প্রসারের নামে যুবকদের আকৃষ্ট করার এই ধরনের অতি সক্রিয়তার ওপর সরকারি নজরদারি বাড়ানো জরুরি।
এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/