ঢাকা প্রতিনিধি : বাংলাদেশ সংবিধানের ৫২ বছরের অগ্রযাত্রায় নারীদের অধিকার কতটুকু সুনিশ্চিত হয়েছে তা নিয়ে আলোচনার জন্য “সংবিধান, সমতা ও নারীর অধিকার: ৫০ বছরের অগ্রযাত্রা বিষয়ক আলাপচারিতা” শীর্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ঢাকা বশ্বিবদ্যিালয়রে আইন বিভাগের সেন্টার ফর এডভান্সড লিগ্যাল র্স্টাডিজ এবং বাংলার পাঠশালা যৌথ ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার সেমিনার হলে এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আহমেদ জাভেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন অভিনেত্রী ও নারী অধিকার কর্মী আজমেরী হক বাঁধন, এডভোকেট আমিরুল হক তুহিন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এডভোকেট ও ব্লাস্টের প্যানেল আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমীন এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এডভোকেট ও ব্লাস্টের প্যানেল আইনজীবী কাজী জাহেদ ইকবাল।
এস এম রেজাউল করিম, আইন উপদেষ্টা, ব্লাস্ট
বাংলাদেশের সংবিধানের ৫১ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজকের এই আয়োজন। ৫১ বছর পূর্তি হলেও, সংবিধানে উল্যেখিত নারী পরুষের সমান অধিকার উল্লেখ থাকলেও ব্যক্তিগত আইনে উল্লেখিত উত্তরাধিকার আইনের ক্ষেত্রে নারী ও পরুষের সমতা বিধান নিশ্চিত হচ্ছে না। আমরা চাই মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ধর্ম নির্বিশেষে নারী পরুষের উত্তরাধিকার সমান হোক এবং তা নিশ্চিত করতে একটি আইন প্রনয়ন প্রয়োজন। সে বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্মে আমরা সরকারের কাছে এ দাবি তুলে ধরেছি এবং আজকের আয়োজনের মাধ্যমে এই বিষয়ে উপস্থিত সকল সুধীবৃৃন্দের মতামত আশা করছি।
আহমেদ জাভেদ, সভাপতি, বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশন
বাংলাদেশের সংবিধানে ন্যায্যতার ধারণা সমদর্শিতা-রূপে প্রকাশ পেয়েছে। তবে ন্যায্যতার আরো অনেক রূপ থাকতে পারে। অমর্ত্য সেন-এর তত্ত্ব অনুযায়ী নারীদের কারক সত্ত্বা নারীদের এনরোলমেন্ট রেট বেশি হলেও কিছু বছর পর দেখা যায় অধিকাংশ নারী শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। এর পেছনে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও অনেকাংশে দায়ী। রাষ্ট্র গঠনের পর নারীদের সম্ভাবনা কমে আসার বিষয়ে আমাদের আরও মনযোগী হতে হবে, কেন না একজন নারীর জীবনে অনেক রকম বাধার সম্মুখীন হতে হয়। শুধুমাত্র আইন প্রনয়ন নয় বরং এ সকল বাধার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং একই সাথে নাগরিক সমাজকেও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
মনীষা বিশ্বাস, সিনিয়র এডভোকেসি অফিসার, ব্লাস্ট
তিনি সংবিধানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকারের আলোকে নারীর অধিকার বিশ্লেষনের সাথে বাস্তবিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। যেখানে তিনি নারী পেশা বা বৃত্তির স্বাধীনতার, অংশগ্রহনের অধিকার, ন্যায়বিচারের অভিগম্যতা, আইনের দৃষ্টিতে সমতা এবং চলাফেরার অধিকার নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচক:
আজমেরী হক বাঁধন, অভিনেত্রী ও নারী অধিকার কর্মী
আমাদের সমাজব্যবস্থা এবং ধর্মীয় অনুশাসন নারীদের শেখায় চূরান্ত বেতিবাচক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি না হওয়া পর্যন্ত নারীরা প্রতিবাদ করতে পারবে না। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি বলতে চাই আইনী অধিকার এবং সামাজিকভাবে নারীরা তীব্র নেতিবাচক পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। উত্তরাধিকার আইনের বিষয়ে শরীয়া আইন এবং অন্যান্য ধর্মের আইন অনুযায়ী এই উত্তরাধিকার আইন সংস্কার বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ন। পরিবার থেকে আমাদের যেরকম শিক্ষা দেয়া হয় যে একজন পুরুষ সন্তান নারী সন্তানের তুলনার অধিক স¤পত্তি পাবে এবং কারন হিসেবে যখন দেখানো হয় যে নারিরা কখন অভিভাবক হতে পারবেনা, এই ধারনাগুলো আমাদের শিশুদের মনে খুব ছোটবেলা থেকেই বিরূপ প্রভাব ফেলে। নারীদের জন্মের পর থেকে খুব কৌশলগত ভাবে নানা অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, যা পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।
এডভোকেট আমিরুল হক তুহিন, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
রাষ্ট্রীয় অভিভাবকত্ব আইনে নারী পরুষে বৈষম্য রয়েছে অর্থাৎ পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় মায়ের পক্ষে অভিভাবকত্ব দাবি করার ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা রয়েছে। সন্তানের অভিভাবকত্ব দাবির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার কারনে অনেক নারী শুধুমাত্র সন্তানের হেফাজত বা কাস্টডি দাবি করেই ক্ষান্ত হয়ে যান। এক্ষেত্রে শুধু আইনগত বাধা ছাড়াও আদালতের পরিবেশ এবং আইনি অবকাঠামোও অনেকাংশে দায়ী। পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইনে শুধুমাত্র নারী নয় লিঙ্গ বৈচির্ত্যময় জনগোষ্ঠীকেও প্রতিক‚লতার সম্মুখীন হতে হয়। তালাক আবেদনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র হিন্দু নারী নয় বরং মুসলিম নারীদেরও প্রতিকুলতার সম্মুখীণ হতে হয়। মুসলিমদের ক্ষেত্রে যদি কাবিননামায় তালাকে তাওফিজ অর্থাৎ তালাকের ক্ষমতা স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদান করা না হয় সেক্ষেত্রেও নারী একক সিদ্ধান্তে তালাক প্রদান করতে পারেন না।
এডভোকেট আইনুন্নাহার সিদ্দিকা, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
রাষ্ট্র হিসেবে আমরা দিনদিন পিছপা হচ্ছি। সংবিধান অনুযায়ী সকল মানুষ সমান অধিকার পাবে কিন্তু বিভিন্ন ধর্মীয় আইনে তালাক এবং বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের দিকে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই নারীরা অবহেলার শিকার হন। সন্তানের অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে দেখা যায় নারীকে হয়রানির উদ্দ্যেশ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মায়ের কাছ থেকে সন্তানকে নিয়ে নেয়া হয় এবং সেক্ষেত্রে নারী এবং সন্তাানের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারেও লক্ষ্য করা হয় না। বিবাহিত নারী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকার নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে শিক্ষকদের মানসিকতা এবং সংবিধান কর্তৃক নারীদের সমঅধিকার প্রাপ্তির বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট হয়ে উঠে আসে।
তাসলিমা ইয়াসমীন, সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সাক্ষ্য আইনের ১৫৪ ধারার যে পরিবর্তন শ্রম আইনের স¤প্রতি ২০১৫ সালের সংশোধনীতে মাতৃত্বকালীন ছুটি বৃদ্ধি করে ১২০ দিন করা হয় যা অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে। কিন্তু আমাদের যে গ্যাপগুলো রয়েছে সেগুলা নিয়ে কাজ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে খুব বেশি পলিসির কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। পলিসি পর্যায়ে কিভাবে এ জিনিসগুলো আমরা পোছাতে পারি সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। সকলে মিলে সমাধানের পথে হাঁটতে হবে। এতদিন আমরা অনেক ধরনের সমাধানের কথা ভেবেছি ও আলোচনা করেছি। তবে এখন এ সমাধানের বাস্তবায়নের দিকে জোড়ালোভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
এডভোকেট কাজী জাহেদ ইকবাল, প্যানেল আইনজীবী, ব্লাস্ট ও এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
বাংলাদেশে আইনের অভাব নেই। একটা আইন বানানো হলে তার কাছাকাছি আইনগুলোকে দেখা হয়না। আইনের বাধ্যবাধকতার ব্যপার নিশ্চিত না থাকলে বিচারিক অবস্থায় আইনের দুর্বলতা থেকে যায়। সংবিধানের অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে নারী-পরুষের অধিকারের কথা বলা হলও আমাদের চিরাচরিত মনোভাবই নারী অধিকার নিশ্চিতের প্রধান বাঁধা।
ঢাকা বশ্বিবদ্যিালয়রে আইন বভিাগরে অধ্যাপক এবং সন্টোর ফর এডভান্সড লিগ্যাল স্টাডিজ এর পরচিালক ড. শাহনাজ হুদা, উক্ত আলাপচারতিার সভাপতি হিসেবে তার সমাপনী বক্তব্যে উপস্থিত ও সংযুক্ত সকলকে ধন্যবাদ দিয়ে এবং আইনে চর্চা বৃদ্ধি উদ্দশ্যে কাজ করার জন্য আহব্বান জানিয়ে সম্মেলনের ইতি টানেন।
https://slotbet.online/
I was looking at some of your content on this internet site
and I conceive this site is very instructive! Keep on posting.Raise blog range