ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এক ডজনেরও বেশি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছিল, যার মধ্যে অন্যতম ছিল- আস্থা অর্জন, ইভিএমে ভোটগ্রহণ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রভৃতি। এগুলোর মধ্যে সরকারের বাজেট স্বল্পতায় ইতিপূর্বেই ইভিএম থেকে সরে আসতে হয়েছে ইসির।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিএনপিসহ ১৫টি দল এই ভোট বর্জন করেছে। ফলে ভোটারদের একটি বড় অংশও এই ভোটের বাইরে থাকবে বলে ধারণা করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। ফলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়েও কথা থেকে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে প্রায় সব আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী (ডামি প্রার্থী) রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপরও দলটি কেন্দ্রে ভোটার আনতে আরও নানা চ্যালেঞ্জ দেখছে। অন্যদিকে বিএনপি চাইছে ভোটাররা যেন ভোট দিতে না যায়। দুপক্ষের এমন বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যেই অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসির সামনে ১৩ চ্যালেঞ্জ দেখছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। এগুলোর মধ্যে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- দেশে ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, এমন নির্বাচন উপহার দেওয়া। এটিসহ অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে ইসি। শেষ পর্যন্ত কতটা সফল হবে, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আলোচনা শুরু হয় বিগত দুই নির্বাচনের মতো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, নাকি নতুন পথ দেখাবেন এ কমিশন? তবে নতুন পথ দেখানো খুব কঠিন হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এবারের নির্বাচনে বিদেশি চাপের কথা স্বীকার করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। নানা কারণে এবারের ভোটে বিদেশিদের চোখ থাকবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে না পারলে দেশে তো বটেই, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ব্যাপক সমালোচিত হতে পারে ইসি। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই ভোট অনুষ্ঠানের দিকে এগিয়ে চলছে কমিশন।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে হাবিবুল আউয়াল কমিশন নির্বাচন কমিশনের প্রতি নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোর আস্থা সৃষ্টিসহ ১৪ চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে রোডম্যাপ ঘোষণা করে। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় ১৯টি করণীয় চিহ্নিত করে ইসি। সেই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের আস্থা অর্জন করা। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে ব্যালটে। ফলে চ্যালেঞ্জটি আর এখন নেই।
তবে অপর ১৩টি চ্যালেঞ্জ এখনো বিদ্যমান। তখন ভোটের প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা সৃষ্টি করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। এটি এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবেই রয়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তার শরিকরা অংশগ্রহণ করলেও বিএনপি এবং তার শরিকরা বর্জন করেছে। এ অবস্থায় চ্যালেঞ্জ জয় করতে ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন।
এ ছাড়া ইসির চ্যালেঞ্জ ছিল নির্বাচনের দায়িত্বে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা বিশেষ করে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন। এই চ্যালেঞ্জ উত্তরণের জন্য এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব পদক্ষেপ চ্যালেঞ্জ উত্তরণে কতটুকু ভূমিকা রাখবে সেটাই দেখার বিষয়। কারণ মাঠ প্রশাসনের কাজ ভোটের দিন পর্যন্ত।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী (অব) আমাদের সময়কে বলেন, নির্বাচনটা সব সময়ই একটা চ্যালেঞ্জ। প্রার্থী ও ভোটার যদি যার যার জায়গা থেকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে তা হলে কাজটা সহজ হয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে কাজটা করিয়ে নেওয়াও একটা চ্যালেঞ্জ। প্রতীক বরাদ্দের পর যখন প্রচার শুরু হবে, তখন আরও চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে। এজন্য সবাইকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে কিনা- এমন প্রশ্নে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, এটা একটি আপেক্ষিক বিষয়। বিএনপি নির্বাচনে নেই তাই তারা গ্রহণযোগ্য কখনই বলবে না। তা ছাড়া সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম সবাই বিভাজিত। একটি পক্ষ বলবে, গ্রহণযোগ্য হয়নি; আরেকটি পক্ষ বলবে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। এটা আসলে আপেক্ষিক বিষয়। তবে ভোট সুষ্ঠুভাবে করতে পারলে, সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলো মোকাবিলা করতে পারলে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে কিনা এমন প্রশ্নে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার আমাদের সময়কে বলেন, ‘এটা তো নির্বাচনই না। নির্বাচনের সংজ্ঞা হচ্ছে দুটির মধ্যে একটি বেছে নেওয়া। দেশে রাজনৈতিক দল বলতে দুটি ব্র্যান্ড আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এখানে যে কোনো একটি দল ভোটে না থাকলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে কীভাবে? নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীনদের পাতানো ছকে নির্বাচন নির্বাচন খেলা করছে। একতরফা নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’
আরও যেসব চ্যালেঞ্জ অর্থ ও পেশিশক্তির নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, সকল রাজনৈতিক দল কর্তৃক নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ, নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে বিপক্ষ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী-সমর্থক-পুলিশ-প্রশাসন কর্তৃক কোনো রকম বাধার সম্মুখীন না হওয়া, জালভোট, ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই রোধ, প্রার্থীর-এজেন্ট-ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে অবাধ আগমন, ভোটারদের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীকে ভোট প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান, পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিতকরণ, পর্যাপ্ত সংখ্যক নির্বাহী-জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিতকরণ, নিরপেক্ষ দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োজিতকরণ প্রভৃতি।
আরএম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/
Hello there, just became aware of your blog through Google,
and found that it is really informative. I am going
to watch out for brussels. I’ll appreciate if you continue this in future.
Many people will be benefited from your writing.
Cheers! Escape room