ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও শহরের জেলা পরিষদের উত্তর পাড়ার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দুই শিশুকে চুরির অপবাদে পাশবিক নির্যাতনের পর এক শিশুর বাবা ও মাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে তাদের ওপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ উঠেছে । নির্যাতনের পরে ওই এক শিশুর মা দায়নি ঋষি’র (৪২) মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে ।
নিহত দায়নি ঋষি ওই এলাকার বিষু ঋষির স্ত্রী । গত বুধবার (২২ মে) সকাল ১১টার দিকে বাড়ির অদুরে ওই গ্রামের তাজুল ইসলামের লিচু গাছ থেকে দায়নি ঋষির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ।
নিহত দায়নির স্বামী বিষু জানান, পরিষদ পাড়ার পশ্চিম এলাকার ( ইএসডিওর অফিসের পিছনে ) আমজাত হোসেন লিটন নামে এক ব্যক্তি মঙ্গলবার সকালে আমার ছেলে রাজেন (১২) কে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় । আমজাত হোসেন লিটননের বাড়িতে চুরি হয়েছে বলে আমার ছেলের কাছে চুরি যাওয়া ৩ লাখ টাকা ও স্বর্ন অলংকার দাবি করে। কিন্তু ছেলে চুরি করেনি তার পরেও তাকে ছেড়ে না দিয়ে মারপিট করতে থাকে । এরপর আমাকেও ধরে নিয়ে যায় । তবে আমাকে ছেড়ে দিলেও আমার ছেলেকে ছাড়েননি তিনি। এরপর রাজেনকে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আরও মারপিট করে। রাজেন মারপিটের ঠেলায় বলে, এলাকার সঞ্জিত কজুর নামে এক ছেলের নাম বলে সে চুরি করেছে । এরপর সঞ্জিত (১৩) কে খুঁজে বের করে। পরে দুজনকে একদল উচ্ছৃংখল যুবকের হাতে তাদের তুলে দেন আমজাত হোসেন লিটন ।
রাজেন ও সঞ্জিত কান্নাঁ জড়িত কন্ঠে বলে, রকি, জনি সহ ২০-২৫জন আমাদের শহরের গোবিন্দ নগর বড়বাড়ি এলাকায় নিয়ে গিয়ে লোহার রড, গাছের ডাল দিয়ে অনবরত পেটাতে থাকে আর বলে ‘বল” আমরা টাকা চুরি করছি । শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল তাও মারছিল । এর এক পর্যায়ে ঠাকুরগাঁও রোড এলাকার একটি হোটেলে নিয়ে আমাদের খেতে দেয় । এরপর ওষুধ খাইয়ে দিয়ে দফাদফায় মারপিট করে ।
আরও পড়ুন: চুরির অপবাদে মা ও ছেলেকে নির্যাতন, ৭ ঘন্টা পর মায়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
সঞ্জিত বলে সহ্য করতে না পেরে বলি রাজেনের মাকে চুরির টাকা গয়নাপাতি রাখতে দিয়েছি । এরপর রাজেনের মাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তার ওপর পাশবিক নির্যাতন করে। টাকা -স্বর্ন অলংকার তাদের কাছে উদ্ধার করতে না পেরে থানায় নিয়ে যায় ।
বিষুর বড় ছেলে সাজেন চোখ মুছে বলে তাকেও খুঁজতেছিল সন্ত্রাসীরা ধরে নিয়ে যওয়ার জন্য । তাদের ভয়ে বাড়ি ফিরেনি আমি । বুধবার সকাল হলে বাড়ি ফিরে দেখি আমার মা নেই । গাছের ডালে ঝুলছে । প্রতিবেশী রিতা ঋষি বলেন সকালে উঠে দেখি রাজেন , সঞ্জিত ঘরে ঘুমাচ্ছে । কিন্ত দায়নি ঘরে নেই ।
পরিবারের অভিযোগ আমজাত হোসেন লিটনের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা দায়নিকে হত্যা করে গলায় শাড়ি পেছিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে ।
যুব মহিলালীগের নেত্রী খতেজা বেগম বলেন আমরা শুনছি কতিপয় ছেলে আমজাত হোসেন লিটনের সঙ্গে চুক্তি করে টাকা ও সোনা বের করে দিতে পারলে তাদের কে একলাখ টাকা দিবেন তিনি। এই চুক্তিতে সংঘবদ্ধ ছেলেরা রাজেন ও সঞ্জিত কে মারপিট করে। রাজেনের মা ও বাবার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায় । তিনি মন্তব্য করে বলেন, নির্যাতন ও চুরির অপবাদ সহ্য করতে না পেরে রাজেনের মা দায়নি আত্মহত্যা করতে পারেন।
এ বিষয়ে আমজাত হোসেন লিটনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজেনের বিরুদ্ধে এলাকার অনেক মানুষের অভিযোগ আছে সে চোর । তার প্রতি আমার সন্দেহ হয়। আমি তাকে বাড়ি ডেকে আনার সময় স্থানীয়রা জড়ো হয় । ক্ষুদ্ধ হয়ে রাজেন ও সঞ্জিতকে গণপিটুনি দেয় । আমি পড়ে তাদের ভাই খাইয়ে ওষুধ কিনে দেই । চুরি যাওয়া টাকা ও স্বর্ণ অলংকার উদ্ধার জন্য পরে তাদের থানায় নিয়ে যাই।
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ৯নং ওর্য়াড কাউন্সিলর দোলন কুমার মজুমদার বলেন, ওই শিশুরা পুলিশের কাছে বলেন , ‘স্যার আমাদের সময় দিন । আমরা বের করে দিবো ।’ কিন্তু ভোটের জন্য নিহত দায়নিসহ ওই শিশুকে ছেড়ে দেয় । এদিকে প্রাণের ভয়ে রাজেনের পিতা বিষু আমার বাড়িতে রাত ১২টা পর্যন্ত ছিল । এরপর ভুট্টা খেতে রাত কাটায় । সকালে গিয়ে বাড়িতে দেখে তার স্ত্রী নেই । খোজাঁখুজির পর দেখতে পায় বাড়ির অদুরে লিচু গাছের ডালে ঝুলছে দায়নির লাশ ।
ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির জেষ্ঠ্য সদস্য অ্যাডভোকেট ইন্দ্র নাথ রায় বলেন, চুরি করলেও মারপিট করা যাবে না । যেহেতু এঘটনায় দায়নির মৃত্যু হয়েছে এটা একটি হত্যাকান্ড ।
ঠাকুরগাঁও থানার ওসি এবিএম ফিরোজ ওয়াহিদ বলেন , এটা কি হত্যা, না আত্মহত্যা, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর বুঝা যাবে। তবে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/