ডেস্ক রিপোর্ট, টাঙ্গন টাইম : বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিতি নেই কিন্তু শিক্ষক হাজিরায় স্বাক্ষর করেছেন। কিভাবে করছেন, কখন করছেন, এমন প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। বিষয়টি অনিয়ম-দূনীতি আর অপরাধ বলে মনে করছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ এলাকাবাসি। এতে করে ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। আবার কোথাও কোথাও ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। এমন চিত্র দেখা গেছে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হলদিবাড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। ঘুষ বাণিজ্যেরও অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তিনি এখন হত্যা মামলার পলাতক আসামী।
ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্ত উপজেলা বালিয়াডাঙ্গী। উপজেলায় মোট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৫টি। গত ৫ আগষ্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর গাঁ ঢাকা দিয়েছেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০-২৫ জন প্রধান ও সহকারি শিক্ষক। কিন্তু তারা বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকে হাজিরা খাতায় দিয়ে যাচ্ছেন আগাম স্বাক্ষর। এতে করে একদিকে যেমন ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম, ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা, লাঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারী, অপরদিকে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে জনমনে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হলদিবাড়ী গ্রামের ইসমাইল হোসেন বলেন এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্কুলে উপস্থিত থাকেন না। গত ১৭ বছর ধরে স্কুলটিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কর্মচারি বা শিক্ষক নিয়োগের দুটি টাকাও স্কুলের ফান্ডে জমা করেনি। এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ আছে। পরে তিন লাখ টাকা দিয়ে মিটিয়ে ফেলেন। নজরুল ইসলাম বলেন প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসেন না। রাতের বেলা এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে। দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে টাকার বিনিময়ে ২০২০ সালের নিয়োগ ২০২৪ সালে দিয়েছেন। এমপি’র পরিবারের সাথে সম্পর্ক থাকায় প্রধান শিক্ষক দূর্নীতিবাজ হয়ে উঠে।
হলদিবাড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আজিজুর রহমান-১ বলেন প্রধান শিক্ষক না থাকায় স্কুলটিতে কোন ডিসিপ্লিন নাই। যে যার মতো করে স্কুলে আসছে আর যাচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী ফাতেমা জান্নাত অফিস সহকারি। তিনি হাজিরা খাতাকে কেন্দ্র করে আমার শার্টের কলার্ট ধরেছেন আমাকে লাঞ্চিত করেছেন। আমি ইউএনও’র কাছে অভিযোগ দিয়েছি। ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষক শাহাদাত হোসেন বলেন আমাদের প্রধান শিক্ষক আওয়ামীলীগের একটি পদে ছিলেন। সে কারণে গত ১৪ বছরে যা খুশী তাই করেছেন। স্কুলে আসেন না, সব সময় দলের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। ২৩-২৪ অর্থবছরে ৪টি পদে নিয়োগ দিয়েছেন। তাদের কাছে প্রায় অর্ধ কোটি নিয়েছেন। আবার ২০১৯ সালের নিয়োগ ২০২৪ সালে দিয়েছেন। যাকে আমরা আজ পর্যন্ত স্কুলে আসতে দেখি নাই। একই কথা বলেন বিদ্যালয়ের আরেক সহকারি শিক্ষক।
হলদিবাড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, বিগত তিন মাস ধরে আমরা স্কুলে আসছি-যাচ্ছি কিন্তু ক্লাস ঠিকমতো হচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসেন না। অন্যান্য বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে কিন্তু আমাদের বিদ্যালয়ে এখনো শুরু হয়নি। অনেকে এই স্কুল ছেড়ে অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। আমরা এ নিয়ে হতাশায় আছি।
অনুমতি না নিয়ে স্কুলে প্রবেশ করায় সাংবাদকর্মীদের দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন হলদিবাড়ি বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আজিজুর রহমান-২। তিনি প্রধান শিক্ষকের কাছের মানুষ বলে জানা গেছে। তিনি নিজেকে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দাবী করছেন। অপরদিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে হাজিরা খাতা নিয়ে প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী অফিস সহকারি ফাতেমা জান্নাত লাঞ্চিত করছেন ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আজিজুর রহমান-১ কে। কিন্তু এব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
মামলার আসামী পালিয়ে বেড়ানো হলদিবাড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল হোসেনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আলী শাহরিয়ার বলেন যেহেতু অভিযোগ পাওয়া গেছে পরিদর্শণ করে দেখবো। ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক পরিচালিত যেহেতু সেক্ষেত্রে দেখার দায়িত্ব ম্যানেজিং কমিটির। আর ২০-২৫ জন শিক্ষক মামলার শিকার হয়ে কেউ পলাতক, কেউ মেডিকেল লিভে আছেন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন আমি এটা ব্যবস্থা নেব। ওনার স্ত্রী এক সহকারি শিক্ষকের সাথে কাল খারাপ ব্যবহার করেছে তাই না, আমি তাদের ডেকেছিলাম। তারা এসেছিল তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। আর প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম দূর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/