পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি) পদে কেউ না থাকায় ব্যবহার হয়নি এক্স-রে মেশিন। দীর্ঘদিন যাবত অব্যবহৃত থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে এক্স-রে করার মেশিনটি। ফলে বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যানালগ একটি এক্স-রে মেশিন বসানো হয়। তখন থেকে সরকারি ফি দিয়ে এক্স-রে’র সুবিধা পেয়েছিল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। কিন্তু গত ১২ বছরের অধিক সময় ধরে মেশিনটি নষ্ট হয়ে থাকলেও নতুন কোনো মেশিন স্থাপন করা হয়নি কিংবা চেষ্টা করেও পুরোনোটি মেরামত করা যায়নি।
সূত্রটি আরও জানায়, গত ৭ই নভেম্বর একজন টেকনোলজিস্টকে (রেডিওগ্রাফি) দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংযুক্ত করেন জেলা সিভিল সার্জন। কিন্তু তিনি এখানে এসে এক্স-রে মেশিনটি চালুর চেষ্টা করেও পারেননি। পরে নিজ কর্মস্থলে ফিরে গেছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন মেশিনটি অকেজো হয়ে গেছে। মূলত, দীর্ঘদিন থেকে রেডিওগ্রাফির কোনো মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না থাকায় এক্স-রে মেশিনটি নষ্ট হয়ে গেছে। যন্ত্রটির নিয়মিত ব্যবহার হলে এমনটি হতো না।
এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে মেশিন দীর্ঘদিন যাবৎ নষ্ট থাকায় চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের বাইরের বেসরকারি ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে এক্স-রে করে তারপর সেটি ডাক্তারকে দেখিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। এছাড়া সরকারি এক্স-রে ফি ১১০ টাকা হলেও বাইরে সেটা নেওয়া হচ্ছে চারশ থেকে পাঁচশ টাকা। এতে করে বিড়ম্বনা বেড়েছে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের।
পার্শ্ববর্তী ডোমার উপজেলার পাগলা বাজার এলাকার আল-আমিন ইজিবাইক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি আছেন দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তিনি জানান, গত ৪ দিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় হাতে মারাত্মকভাবে আঘাত পাই। ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এক্স-রে করে আনতে বলে।
হাসপাতালে এক্সরে মেশিন নষ্ট থাকায় প্রচণ্ড হাত ব্যথা নিয়ে বাইরের ক্লিনিক থেকে এক্সরে করে এনে ডাক্তার দেখাই।
এদিকে রোগীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান জানান, হাসপাতালে আগত যক্ষা রোগী ও দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের জন্য এক্স-রে একটি অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্র। এটি না থাকায় সাধারণ রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছ। হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন দীর্ঘদিন থেকে নষ্ট তাছাড়া মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি) নেই। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বারবার চিঠি লিখলেও কোনো সুরাহা হয়নি। সর্বশেষ গত ২০ নভেম্বর একটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সদর দপ্তরে পূণরায় চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পঞ্চগড় জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত আছি। পুরোনো মেশিনটি মেরামত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরইমধ্যে একজন রেডিওগ্ৰাফি নিয়োগ করা হয়েছিল। তবে এখনো কিছু ত্রুটি থাকায় যারা মেরামতকারী আছে তাদের সাপোর্ট নিয়ে এক্স-রে মেশিন মেরামত করার চেষ্টা করা হবে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন এক্স-রে মেশিন প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরোনো মেশিনটি আগে পুরোপুরি ইনভ্যালিড করার প্রসেসে যেতে হবে। একটি মেশিন পুরোপুরি নষ্ট না হলে নতুন মেশিনের কথা বলা হলে বিষয়টা পুরোপুরি হ্যাং হয়ে যাবে। আমরা পুরোনো মেশিনটি মেরামতের বিষয়টি দেখছি। যদি মেরামত অযোগ্য হয়ে পড়ে তাহলে নতুনের বিষয়টা নিশ্চিত করা যাবে।
আরএম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/