দুর্নীতিতে জড়িত বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ৩০ বর্তমান ও সাবেক বিদেশি কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বলা হয়েছে, বড় রকম দুর্নীতিতে জড়িত এসব ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে অবৈধ হবেন। এসব ব্যক্তি সরকারি পদ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুবিধা অর্জনের জন্য সেই পদকে অপব্যবহার করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেন তার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ১১ই ডিসেম্বর পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এসব কথা জানিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে ১১ই ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে যেসব মানুষ দুর্নীতিতে যুক্ত তাদের জবাবদিহিতা উৎসাহিত করতে ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যেসব ব্যক্তি দুর্নীতিতে জড়িত তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা বিস্তৃত করার এক ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যারা সরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি করেছে তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র নিরাপদ স্বর্গ হতে পারে না। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র তার সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে।
তিনি আরও বলেছেন, গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কির অধীনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞা পরিপূরক ও শক্তিশালী করা হয়েছে। আফগানিস্তানের সাবেক দু’জন কর্মকর্তা এবং ৪৪টি সহযোগী এনটিটি এর আওতায় আছে। তারা বহুজাতিক দুর্নীতিতে যুক্ত।
সম্মিলিতভাবে এসব ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিস্তৃত জবাবদিহিতাকে উৎসাহিত করা হবে এবং এতে ভবিষ্যত দুর্নীতি রোধ হবে। জবাবদিহিতা উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ‘টুলস’ বা উপায় ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র। এর অধীনে ২০২৩ সালে দুর্নীতিতে জড়িত কমপক্ষে ২০০ ব্যক্তি ও এনটিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যেকোনো রকম দুর্নীতি মোকাবিলায় হাতে থাকা সব রকম উপায় বা টুলস ব্যবহার করবে যুক্তরাষ্ট্র এবং এ জন্য তারা মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে অব্যাহতভাবে সহযোগিতা করে যাবে। এর মাধ্যমে অসৎ ব্যক্তিদের (ম্যালাইন অ্যাক্টর) জবাবদিহিতা উৎসাহিত করা হবে।
যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তার মধ্যে আছেন আফগানিস্তানের সাবেক স্পিকার মীর রহমান রহমানি ও আফগান পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য আজমল রহমানি। উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ধারা ৭০৩১(সি)-এর অধীনে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তারা বহুজাতিক দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। এর বিস্তার বিশ্বজুড়ে। এর মধ্যে মার্কিন সরকারের অর্থায়নে জ্বালানি বিষয়ক যে কন্ট্রাক্ট তা থেকে লাখ লাখ ডলার চুরি করেছেন রহমানি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রেক্ষিতে তার পরিবারের সদস্য জমিলা জুশান হাজি মোহাম্মদ হোসেন, তামানা মীর রহমান, ইয়ালদা মীর রহমান, লিনা মীর রহমান এবং তাহমিনা তাজালিও পড়েছেন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় মীর রহমানি, আজমল রহমানি এবং ৪৪টি সহযোগী এনটিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা -নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সাবেক সরকারি প্রসিকিউটর ডায়ানা কাজমাকোভিচের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তিনি বড় রকমের দুর্নীতিতে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে। মাদক চোরাচালান থেকে শুরু করে অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধীদেরকে তথ্যপ্রমাণ লুকিয়ে রাখতে সহায়তা করেছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে বিচারকাজকে বাধাগ্রস্ত করেছেন। এসবই করেছেন ব্যক্তিগত সুবিধার বিনিময়ে। তিনি একই উপায়ে অন্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সহায়তা করেছেন। দৃশ্যত ওসমান মেহমেদাজিচ সহ ফৌজদারী অপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত আটকে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। ওসমান মেহমেদাজিচের বিরুদ্ধে বিস্তৃত দুর্নীতি, অপরাধের অভিযোগ আছে।
ওদিকে নিষেধাজ্ঞা খেয়েছেন ডোমিনিক প্রজাতন্ত্রের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল জ্যাঁ অ্যালেন রড্রিগুয়েজ সানচেজ। রাষ্ট্রীয় অর্থায়নের অবকাঠামো প্রকল্প এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থ অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বড় রকম দুর্নীতিতে যুক্ত তিনি। ফলে নিষেধাজ্ঞা খেয়েছেন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্যে আছেন তার স্ত্রী মারিয়া ইসাবেল পেরেজ স্যালেন্ট এবং অল্প বয়সী দুই সন্তান।
যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাইতির সাবেক প্রধানমন্ত্রী, পরিকল্পনা ও বৈদেশিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী জ্যাঁ-ম্যাক্স বেলেরিভের বিরুদ্ধে। তিনি সরকারি পদ ব্যবহার করে দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। হাইতি সরকারের সততাকে বাধাগ্রস্ত করেছেন। নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন তার স্ত্রী মরিয়ম এস্টেভেজ ডা বেলেরিভে, কন্যা ডায়ানা জেনিফার বেলেরিভে এবং জেসিকা বেলেরিভে। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা খেয়েছেন দেশটির সাবেক সিনেটর নেনেল ক্যাসি, তার স্ত্রী ক্যাথেরিন ক্যাসি চেরি এবং অল্প বয়সী এক শিশু। আরও নিষেধাজ্ঞা খেয়েছেন হাইতির সাবেক সিনেটর হারভে ফোরকান্দ।
লাইবেরিয়ায় নিষেধাজ্ঞা খেয়েছেন দেশটির অর্থ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বিষয়ক মন্ত্রী স্যামুয়েল তোয়ে, সিনেটর আলবার্ট কাই এবং ইমানুয়েল নুকিয়ে। মার্শাল আইল্যান্ডের পরিবহন ও যোগাযোগ বিষয়ক মন্ত্রী কেসাই নোটের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে সেখানকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সিনেটর মাইক হাফেরটির বিরুদ্ধে।
আরএম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/