ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন ছাত্রলীগের কর্মকান্ড পরিচালনা করা মানে হচ্ছে যৌতুকের বিরুদ্ধে, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলন পরিচালিত করা। আমাদের ছেলে-মেয়েরা সবাই তো ছাত্রলীগের রাজনীতি করবে না। সবাই তো রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হবে না। কেউ ছাত্রলীগের রাজনীতি করুক বা না করুক। ছাত্রলীগ পছন্দ করুক আর ছাত্রলীগ অপছন্দ করুক। সবাই যেন মুক্তিযুদ্ধকে ভালোবাসে। সবাই যেন লাখো শহীদের রক্তে নিজেকে উদ্দেলিত করে, সবাই যেন জাতির পিতার সন্তান হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করে। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঠাকুরগাঁও জেলায় কর্মকান্ড পরিচালিত হবে।
শনিবার বিকালে জেলা পরিষদ বিডি হল চত্বরে ঠাকুরগাঁও জেলা ছাত্রলীগ আয়োজিত কর্মী সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
সাদ্দাম হোসেন বলেন আমাদের কমিটি করা পর্যন্ত শেষ। পরবর্তীতে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করি না। শুধুমাত্র বিভিন্ন দিবসে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। এ ভাবে যদি সংগঠন চলে তাহলে সংগঠনকে শক্তিশালী করা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন ডায়লগের আয়োজন করতে হবে। সাংগঠনিক চর্চা গুলো আমাদের নেতাকর্মীকে গ্রহণ করতে হবে।
তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন যদি আমরা জবাবদিহীতা মূলক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, যদি আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারি। তাহলে এ ধরনের কর্মী সভা করার মানে হয় না বলে জানান।
ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন সংগঠনের আদর্শ এবং নীতি শিক্ষার্থীদের কাছে নিয়ে যেতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা পতিষ্ঠানে ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে কাজ করতে হবে। সেই কাজ গুলো সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাধ্যমে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতার আদর্শ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং সাফল্য তুলে ধরার মাধ্যমে করা যেতে পারে বলে জানান এই নেতা।
তিনি বলেন ‘আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চাই যাতে সাধারণ স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা জানে তাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত একটি বন্ধু সংগঠন রয়েছে, সেটি হল ছাত্রলীগ। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ব্যক্তিত্ব থাকবে দৃঢ়, তারা হবে সৎ। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিনয়ী আচরণ করবে। ভালোবাসা দিয়ে শিক্ষার্থীদের হৃদয় জয় করবে। সেরকম ছাত্রলীগ আমরা দেখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি মানে ক্ষমতার দাপট, বাহাদুরি, ব্যক্তিগত রুটি-রোজগার বাড়ানোর জন্য ফন্দি ফিকির নয়। ছাত্র রাজনীতি মানে তরুণদের কাছে শিক্ষার্থীদের কাছে আইকোন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেন। আপনাদের মেধা, কমিউনিটির দক্ষতা, সামাজিক সাংস্কৃতিক গুণাবলী ও মানবিক গুণাবলীর কারণে শিক্ষার্থীরা আপনাদের অনুসরণ করবে সেই লক্ষ্যে এই কর্মীসভা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।’
নেতাকর্মীদের আত্মসমালোচনা দূর করার কথা বলে তিনি আরও বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো আমরা ছাত্রলীগকে সেরকম শক্তিশালী করতে পারিনি। ছাত্রলীগের রাজনীতিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যেতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর ভর করেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে। ছাত্রলীগের যে স্বতন্ত্র সক্রিয়তা রয়েছে, সেই সক্রিয়তা ও সংগঠনের নিজস্ব শক্তি রয়েছে তা নেতাকর্মীদের বজায় রাখার মতো ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতা এবং সিন্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা গ্রহণ করতে হবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের স্মৃতিচারণ করে সাদ্দাম বলেন, আমার বাড়ি পঞ্চগড় হলেও ঠাকুরগাঁও আমার সেকেন্ড হোমটাউন। এখানে আমি বড় হয়েছি। এই শহরটি আমাকে ভালোবাসতে, সৃজনশীলতার শক্তিতে উদ্বজীবিত হওয়ার পথ দেখিয়েছে। নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করা ও মুক্তিযুদ্ধকে প্রচন্ডভাবে ভালোবাসতে শিখিয়েছে। জাতির পিতার আদর্শে উজ্জীবিত হওয়াসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁও শহরের মাটি, আলো-বাতাস ও ধুলিকণা কোনো না কোনোভাবে আমার পথ চলায় ভূমিকা রেখেছে। সেকারণে ঠাকুরগাঁও শহরের কাছে আমার আজন্মের ঋণ আছে।
নির্বাচনের কারণসহ সাংগঠনিক কারণে দীর্ঘদিন ঠাকরগাঁওয়ের কমিটি গঠন ব্যহত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এবার যেন আমরা সকলে মতামত নিয়ে ও যাচাইবাছাই করে একটি কমিটি করতে পারি সেজন্য কর্মীসভা করা হচ্ছে। আমরা যেন একটি স্মার্ট মডেল ও আদর্শ কমিটি উপহার দিতে পারি।
তাই সবার প্রতি নির্দেশনার কথা হিসেবে তিনি বলেন, সংগঠনের নীতি আদর্শ সব নেতাকর্মীদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক নানা সমস্যা সমাধানসহ সামাজিক কল্যাণে এবং বাল্যবিয়ের বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মূল্যবোধ, জাতির পিতার আদর্শ, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব ও সাফল্যের বিষয়ে তাদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মাজহারুল ইসলাম সুজন, জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুর রহমান বাবলু।
এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি সানোয়ার পারভেজ পুলক, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক হারুনর রশীদ, কেন্দ্রীয় নেতা এনায়েত এইচ মনন, হাসমত উল্লাহ শাওনসহ জেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীবৃন্দ।
https://slotbet.online/