ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: আম্মু কই, আম্মু কই -এই বলে মাকে খুঁজছে এ ঘর ও ঘরে। মাকে খুঁজে না পেয়ে ঘরের দেয়াল টানানো ফ্রেমে বন্দী মায়ের ছবির কাছে গিয়ে ডাকে আম্মু আসো। শিশুটি কি বুঝে, ছবি যে কথা বলে না। এরপরও সে মায়ের ছবি দেখে আকুতি করছে মায়ের জন্য। মা তো বাড়িতে নেই, যে তাকে জড়িয়ে ধরবে। কোলে নেবে। মেয়ের এমন আকুতিতে মেয়েটির বাবা শুধু কাঁদছে।
প্রায় এক মাস ধরে মাতৃস্নেহ বঞ্চিত ১৪বছর বয়সী শাকিলা জাহান শোভন। মায়ের জন্য তার আর্তনাদে সজন রাও কাঁদছে। শিশুটির মা’ আঞ্জুমান আরা বন্যাকে গত ২১আগস্ট রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে একটি হত্যা মামলায় ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগারে পাঠায় আদালত। এর কয়েকদিন পরে তাকে দিনাজপুর জেলা কারাগারে স্থানান্তর করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
শিশু শোভন ঠাকুরগাঁও সুইড বাংলাদেশ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্বপ্না রানী বলেন, আমাদের শিক্ষার্থী শাকিলা জাহান শোভন মায়ের জন্য আর্তনাদ করছি ।সে জানে না তার মমতাময়ী মা কারাগারে বন্দি।আমরাও পারছি না তাকে সান্ত্বনা দিতে। ওর নিদারুণ যন্ত্রণা আমাদেরকে কাঁদাচ্ছে।
প্রতিবেশী কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, মেয়েটি রাতেও ঘুমায় না। মায়ের জন্য ছটফট করে । আমাদেরকে দেখলেই বলে ওঠে আম্মু কই। তিনি আরো বলেন বিকেলে শিশুটির মা অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পর তাকে নিয়ে খেলার মাঠে, পার্কে ঘুরতে নিয়ে যেতেন। ওর মায়ের কাছে সে নিরাপদ ছিল। তাছাড়া তার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। একটি পরিবারে দুজনেই অসুস্থ। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী বলেন মেয়েটি পাঁচ কিংবা ছয় বছর বয়সে অপহরণ হয়েছিল। সেই ক্ষত পরিবারটিকে ধুমরে মুচরে দেয়। শিশুটিকে উদ্ধারের পর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে আড়াই মাস চিকিৎসা করা হয়।
ঠাকুরগাঁও সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) আহ্বায়ক অধ্যাপক মনোতোষ কুমার দে বলেন,মেয়েটির বাবা ও মা দুজনই আমার শিক্ষার্থী ছিল। তারা দুজনেই পেশায় সাংবাদিক,সংস্কৃতি মনা। ২০২১ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন শিশুটির মা। তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগ নেই।
শিশু শোভনের বাবা সাংবাদিক সামসুজ্জোহা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন,শিশু শোভন মায়ের মুক্তির জন্য প্রহর গুনছে। আদালতের বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।আবার জেলখানায় গেলে ফিরে আসতে চাচ্ছে না। আর সারাক্ষন আম্মু কই আম্মু কই বলে কাঁদছে । এ অবুঝ শিশুটি কারাগারে শুধু মাকে দেখে আসে, ধরতে পারে না। সে জানেনা কারাগার থেকে কখন মুক্তি পাবে তার মা।আদালতের কাছে জামিনপ্রার্থনা করে নিষ্ফল।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি এবিএম ফিরোজ ওয়াহিদ বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় একটি মামলায় আনজুমান আরা বেগম বন্যা কে আটক করা হয়। এখন তিনি দিনাজপুর জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তিনি আরো বলেন তার বিরুদ্ধে আর কোন অভিযোগ, মামলা নেই।
ঠাকুরগাঁ আইনজীবী সমিতির সদস্য ও আঞ্জুমান আর বেগমের আইনজীবী ফজলে আলম বকুল বলেন, এটি একটি হয়রানি মুলক সাজানো মামলা। তিনি জামিনে মুক্ত হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। এছাড়া তিনি কারাগারে শ্বাসকষ্ট সহ নানা রোগে ভুগছেন।
এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/