মোঃ মজিবর রহমান শেখ, নিজস্ব প্রতিবেদক
ঠাকুরগাঁও : উৎপাদনের দিক থেকে দেশের সর্বোচ্চ গম উৎপাদনকারী জেলা ঠাকুরগাঁও। সরকারী ভাবে সর্বোচ্চ গম ক্রয় করা হয় এ জেলা থেকে। এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া গম চাষের উপযোগী। তাই ঠাকুরগাঁও জেলায় গমের আবাদ বরাবরই ভালো হয়ে আসছে। তবে গম চাষ লাভজনক না হওযায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষকরা, ঝুকছেন ভূট্টা চাষে, গমের থেকে ভুট্টার দাম বেশি পাওয়ায় ঠাকুরগাঁও জেলায় গত পাঁচ বছরে ১৯ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে কমেছে গমের আবাদ। কৃষকদের অভিযোগ খেত প্রস্তুত থেকে শুরু করে গম রোপন, সার, কীটনাশক, সেচ, এবং গম কাটা মারার খরচ বেড়েছে। বাজারে ন্যায্য মূল্য পাওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এদিকে কম খরচে উৎপাদন বেশি হওয়ায় গমের পরিবর্তে দিন দিন আবাদ বেড়েছে ভুট্টার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁওয়ের তথ্য মতে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ঠাকুরগাঁও জেলায় ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে গম উৎপাদন হয় ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে গম উৎপাদন হয় ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়ে ছে ১ ল ৯৪ হাজার ১৮৪ মেট্রিক টন গম । ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৪৫ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭২১ মেট্রিক টন।
২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ৩৬ হাজার ৬৫৭ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৭৯ মেট্রিক টন এবং চলতি মৌসুমে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঠাকুরগাঁও জেলায় ৩১ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে গম উৎপাদন হয়েছে ১ ল ২৩ হাজার ৬৬৬ মেট্রিক টন।
বিষয়টি অবলোকন করে দেখা গেছে ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৯ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ কমেছে ৮৪ হাজার ১৯ মেট্রিক টন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কৃষক আশরাফুল আলম বলেন, কয়েক বছর আগে গম চাষ করতাম। গমে লাভ কম হওয়ায় এখন ভুট্টা আবাদ করি। একইভাবে ওই এলাকার কৃষক শফিকুল ইসলাম, নুর আলম, দিলীপ কুমাররাও গম ছেড়ে ঝুকেছেন ভুট্টা চাষে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং গ্রামের কৃষক শাকিল হোসেন বলেন, গমের চেয়ে ভুট্টা ও আলুর উৎপাদন বেশি হয়। দামও ভালো পাওয়া যায়। এক বিঘা জমিতে গম আবাদ করতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। আর উৎপাদিত গম বিক্রি করে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা পাওয়া যায়। অপরদিকে এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করে পাওয়া যায় ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। যেটি অনেক লাভজনক।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের কৃষক মোমিননুল হক জানান, গমের আবাদ করি ফলনও ভালো হয় কিন্তু দাম পাই না। সরকার যদি ন্যায্য দাম দেয় তাহলে অনেক কৃষকই আবারো গম চাষে আগ্রহী হবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আলমগীর কবির বলেন, রবি মৌসুমে অন্যান্য ফসল বিশেষ করে ভুট্টা শাকসবজি ও ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাওয়া এবং এগুলোর দাম ভালো পাওয়ার কারণে কৃষকরা এসব ফসলের দিকে ঝুকছে। এর ফলে দিন দিন ঠাকুরগাঁও জেলায় গমের আবাদ কমে আসছে।
এরপরও ঠাকুরগাঁও জেলায় যে গমের আবাদ হয়েছে তা সারা বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। আমরা কৃষি বিভাগ গম চাষীদের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত উচ্চ ফলনশীল গমের জাত এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে আসছি। এ ক্ষেত্রে গমের আবাদ বৃদ্ধির জন্য যুগোপযোগী হাইব্রিড জাত এবং মূল্য ভালো পেলে আশা করা হচ্ছে গমের আবাদ আবারো বৃদ্ধি পাবে ।
https://slotbet.online/