খুলনা ব্যুরোঃ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের বিরদ্ধে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাজ পাইয়ে দেওয়া, ভুয়া টেন্ডারে অর্থ আত্মসাত ও কমিশন বানিজ্যের অভিযোগ দায়ের করেছেন ঠিকাদাররা। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এ অভিযোগ দায়ের করেন তারা।
জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান ঠিকাদার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে, ভুয়া টেন্ডারে অর্থ আত্মসাত ও কমিশন বাণিজ্য করেছেন। এর আগে ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাস্তবায়িত ৯৪টি প্রকল্পের ডিপিএম টেন্ডার কাজের তালিকা, পিএমপি (সড়ক-মেজর) বরাদ্দ কাজের তালিকা ও খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা সড়কে কাজের টেন্ডার ডকুমেন্টস্ সংগ্রহ করেছে দুদক।
দুদক জানিয়েছে, প্রকল্পের কাজে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে কয়েকজন ঠিকাদারকে দিয়ে সিন্ডিকেটে করে অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে প্রাক্কলন করে ও ভুয়া টেন্ডারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ না করে ব্যয় দেখানো হয়েছে। প্রাক্কলনগুলো পরবর্তীতে রিভাইসড করে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে। আয় বহির্ভূত অনিয়ম ও দুর্নীতি বিপুল পরিমান সম্পদের মালিক হয়েছেন।
এর আগে নরসিংদী ও টাঙ্গাইলে কর্মরত থাকাকালে মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে টেন্ডার আহবান ও ঠিকাদারের যোগসাজসে যেনতেন ভাবে কাজ করে কমিশন আদায় গ্রহণ করেছেন।
খুলনা সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আনিসুজ্জামান মাসুদ জানান, নগরীর পাওয়ার হাউজ মোড় থেকে ময়লাপোতা পর্যন্ত রিজিট পেইভমেন্ট ঢালাই কাজে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে ঠিকাদারের সিকিউরিটি মাদির ৭০ লাখ টাকা আটকে দেয়া হয়। এছাড়া টেন্ডারের উল্লেখিত মান অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করার জন্যও কয়েকদফা তাকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
২০২১ সালে পাঁচ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর পাওয়ার হাউজ মোড় থেকে ময়লাপোতা ৭’শ মিটার সড়কে রিজিট পেইভমেন্ট আরসিসি ঢালাই কাজ করে রানা বিন্ডার্স (প্রা.) লিমিটেড। সড়কটি ৫০ বছর টেকসই হওয়ার কথা থাকলেও নিম্নমাণের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় দুই সপ্তাহের মধ্যে ঢালাই উঠে গেলে তাৎক্ষনিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একই সাথে তার বিরুদ্ধে আয় বহির্ভূত বিপুল পরিমান অর্থসম্পদের মালিকানার খবর পাওয়া গেছে।
এর আগে মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রায় ৫০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ওই সময় তিনি নরসিংদী সড়ক বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন।
জানা যায়, ছোট ছোট মেরামতের নামে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল তার সিংহভাগ অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে প্রাক্কলন প্রস্তুত করে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত করেন তিনি। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ওই অভিযোগেরও তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।
এরই মধ্যে তিনি স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে করানো কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টেন্ডার আহবান ও যেনতেন কাজ করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
সূত্রটি জানায়, মনিরুজ্জামানের বিভিন্ন জেলা শহরে ফ্লাট বাড়ি, রাজশাহী শহরে ৩ একর জায়গায় বাগানবাড়ি, বিলাশ বহুল গাড়িসহ সুপার শপিংমলের মালিক হয়েছেন। তার এই অবৈধ অর্থ সম্পদের প্রভাবে গুলশানের লা মেরিডিয়ান, বিলাশ বহুল হোটেল রেডিসন, হোটেল সোঁনারগা, হোটেল শেরাটনে অবাধ যাতায়ত। সে খানে হানি কুইনদের সাথে নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্রটি আরও জানায়, এসব হোটেলের আশপাশের সিটি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করলে তার অনেক অপকর্মের তথ্য পাওয়া যাবে। গ্রামের বাড়ী নওগাঁ জেলায়। তিনি রুয়েটে পড়া-লেখা কালীন ছাত্র দলের প্যানেলে প্রো-ভিপি নির্বাচিত হন। তার সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি তারেক জিয়ার সাথে দেখা করতে ২০২৩ সালের ডিসেন্বর মাসে ইতালীসহ কয়েকটি দেশে গিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি জানান আমার বিরুদ্ধে প্রাপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। এ সব ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট।
এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/