রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডের ভবনে আগুনের ঘটনায় নিহত সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায়। সাবরুল আলম সবুজই তার বাবা। অভিশ্রুতির নাম হিন্দু ধর্মাবলম্বী হিসেবে পরিচিতি পেলেও তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন মুসলিম পরিবারে। এমনটিই নিশ্চিত করেছেন নিহতের পরিবার।
এদিকে শুক্রবার (১ মার্চ) সকাল থেকে মর্গে পড়ে আছে রাজধানীর বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় নিহত অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর লাশ। গ্রাম থেকে এসে তার বাবা দাবি করা এক ব্যক্তি বলছেন, মেয়েটির নাম বৃষ্টি খাতুন। তবে সহকর্মী ও পরিচিতরা বলছেন, লাশটি সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীরই। শুক্রবার বিকেল থেকে এই নিয়ে চলে পাল্টাপাল্টি দাবি।মুসলিম নাকি হিন্দু, এ বিতর্ক তৈরি হয়। এখন জানা গেল, বাবা দাবি করা ওই ব্যক্তিই সাবরুল আলম সবুজ।
এ বিতর্কের মধ্যে সরেজমিন কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া এলাকায় খোঁজ নেন কালবেলার প্রতিনিধি। তিনি জানতে পারেন, এ এলাকার সন্তান অভিশ্রুতির প্রকৃত নাম বৃষ্টি খাতুন। তিনি রাজধানী ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিন বোনের মধ্যে বৃষ্টিই সবার বড়। তার কোনো ভাই নেই। মেজো বোন ঝর্ণা রাজবাড়ী সরকারি কলেজে এবং ছোট বোন বর্ষা তার নিজ এলাকা বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকাহত গোটা পরিবার। মা বিউটি খাতুন মেয়ের শোকে বিলাপ করছেন। ছেলে না থাকায় বড় মেয়ে বৃষ্টিই ছেলের মতো সবকিছু আগলে রাখতেন। তার এমন করুণ বিদায় যেন কোনোভাবেই মানতে পারছেন না। সাবরুল আলম সবুজই সাংবাদিক অভিশ্রুতির বাবা।
মা বলেন, ‘আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমার বুক খালি করে কেন চলে গেলরে…।’
এদিকে বাবা সাবরুল আলম কর্মসূত্রে ঢাকাতেই অবস্থান করছেন। বাড়িতে শুধু মা ও তিন বোন। প্রিয় বোনের মৃত্যু তারাও মানতে পারছেন না। মেজো বোন ঝর্ণা খাতুন জানান, মাস চারেক আগেই বাড়িতে এসেছিলেন বেড়াতে। মাঝে মধ্যেই আসতেন তিনি। তিন বোন মিলে বেশ মজা করতেন তারা। কিন্তু আগুন সবকিছুই যেন উলট-পালট করে দিল।
মেজো বোন ঝর্ণা খাতুন বলেন, ‘বোনকে ঢাকাতে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী হিসেবেই তার সহকর্মীরা চিনেন। হিন্দু নাম হলেও আমার বোন হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেননি।’
বৃষ্টি খাতুনের চাচি নাজনীন খাতুন জানান, শুক্রবার দুপুরে শুনতে পান বৃষ্টি বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তার মৃত্যুর সংবাদে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
খোকসা উপজেলার বেতবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি খাতুন মুসলিম পরিবারের সন্তান। তার বাবা সাবরুল আলম সবুজ রাজধানী ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রী হিসেবেও বেশ ভালো ছিল বৃষ্টি। বনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষে পরে একই এলাকার বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০১৭ সালে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন ইডেন কলেজে। সেখানে দর্শন বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। বর্তমানে ফাইনাল ইয়ারে পড়ছিলেন।’
বৃষ্টি হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছেন কি না এ প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটি ছিল তার ছদ্ম নাম। তা ছাড়া তার পরিবারের সদস্যরা মুসলিম ধর্মাবলম্বী।’
একই তথ্য নিশ্চিত করেন খোকসা থানার ওসি আননুন যায়েদ। তিনি জানান, বেইলি রোডের ভবনে আগুনে নিহত অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া এলাকায়। বৃষ্টির পরিবারের সবাই মুসলিম।
স্বজনরা জানান, অভিশ্রুতির মরদেহ মুসলিম রীতি অনুযায়ী দাফন হবে। তার নিজ এলাকা খোকসার বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া কবরস্থানে প্রস্তুতি চলছে।
আরএম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/