হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারপাশের ড্রেন ও ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে করে যানজনের সৃষ্টি হয়েছে। বিড়ম্বনার শিকার পথচারীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে বাজার তিন মাথা মোড় হয়ে ওসমানপুর-রানীগঞ্জ রোড থেকে ওসমানপুর দারুল কুরআন কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানা রোড পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে পুরো ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন খাবার হোটেল, কাঁচামাল-সবজি দোকান সহ নানা ধরনের দোকানপাট বসেছে।
বিশেষ করে বাজারের গুরুত্বপূর্ণ তিন মাথা মোড়ে মাছ ব্যবসায়ীরা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাস্তা দখল করে ছোট বড় হাঁড়ি-পাতিল বসিয়ে মাছ বিক্রি করে আসছে। এতে করে আশেপাশে সারাদিন ধরে মাছের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে ।
ফুটপাতের সামান্য অংশও খালি নেই। সড়কের দু’পাশে কেবলই অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে সারি সারি দোকানপাট। যেন পুরো বাজার নেমে এসেছে রাস্তা ও ফুটপাতে। দোকানপাট ছাড়াও অনেক জায়গায় বাঁশ, কাঠ ও টিন দিয়ে ঘিরে দখল করে রাখা হয়েছে ফুটপাথ ও রাস্তা গুলো।
স্থানীয়রা জানান, ফুটপাথ দখল থাকায় সড়কের ওপরে সব সময় সিএনজি, ভ্যান, রিক্সা ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক সারাক্ষণ পার্কিং করা থাকে।
অবৈধভাবে গড়ে উঠা এসব দোকানপাটের কারণে এমনিতেই রাস্তা সংকুচিত হয়ে গেছে, তার ওপর এসব যানবাহনের কারণে এ পথে চলাচল করাই দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে পথচারী ও চালকদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হচ্ছে অহরহ।
অথচ এসব দোকানপাটের জন্য বাজারে রয়েছে নির্দিষ্ট জায়গা। স্থানীয় বাসিন্দা হালিম মিয়া সহ একাধিক পথচারী জানান, এ রাস্তাদিয়ে তো ইউএনও, এসিল্যান্ড সহ প্রশাসনের অনেকেই যাতায়াত করে। জ্যামে তো তারাও পড়ে। তাহলে এগুলো উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কেন? এগুলো দেখার কি কেউ নেই?
মাছহাটিতে না বসে ফুটপাথে মাছের দোকান বসিয়ে ভোগান্তি সৃষ্টি করছেন কেন প্রশ্নে মাছ ব্যবসায়ীরা বলেন, মাছহাটি তো বাজারের ভেতরে বেচা-কেনা কম হয়। রাস্তায় সব সময় হরেক রকম মানুষ যাতায়াত করে এ জন্য সবাই এখানে দোকান বসিয়েছি।
অপরদিকে, হাটে মাছ বিক্রির নির্ধারিত স্থানে মাছ ব্যবসায়ীরা না বসার কারণে মাছহাটির যে ব্যবসার ভারসাম্য তা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যা হাটের জন্য এটি একটি ক্ষতির কারণও বটে।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এসব অবৈধ দোকানপাটের সুবিধাভোগী। নিয়ম অনুযায়ী বাজারের একটা নিদির্ষ্ট অংশ তওবাজার বা এসব দোকানপাটের জন্য বরাদ্দ থাকার কথা। যে জায়গাগুলোতে স্থানীয়ভাবে কোন স্থাপনা থাকার নিয়ম নেই। কিন্তু বাজারের ইজারাদার ও সুবিধাভোগীরা মিলে এসব দোকানপাটের জন্য নির্দিষ্ট এ জায়গাগুলো টাকার বিনিময়ে দখল হস্তান্তর করে থাকেন।
স্থানীয় সরকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী, রাস্তা বা ফুটপাত দখল করে কেউ কোনো জিনিস বা পণ্য রাখলে তা বাজেয়াপ্ত করা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ম নীতি তোয়াঙ্কা না করে ঘোড়াঘাট পৌরসভার অধিকাংশ ফুটপাত ও রাস্তার জায়গা দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
বছরের পর বছর এ অবস্থা চললেও পৌর কর্তৃপক্ষ কিংবা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুটপাত দখলমুক্ত করার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।
কিছুদিন পূর্বে সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তা নির্মাণের জন্য পৌর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও এর অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আবারও দখল বাজরা সে সব জায়গা দখল করে নিয়েছে। এ যেন সব জায়গায়তেই এক প্রকার দখল বাণিজ্যের মহোৎসব চলছে। দিনের পর দিন এ অবস্থা চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
এ নিয়ে ওসমানপুর হাট বাজারের ইজারাদার বাবুল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বহুবার দোকানদারদের সরে যেতে বলেছি, কিন্তু কে শোনে কার কথা! দোকান বসাতে এই জায়গায় কোন বিনিময় নিয়েছেন কি না প্রশ্নে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে ঘোড়াঘাট সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও পৌর প্রশাসক আব্দুল আল মামুন কাওসার শেখ জানান, আমরা এটা উচ্ছেদ করার উদ্যোগ নিয়েছি। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাজারের ভেতরে যে পরিত্যক্ত শেড রয়েছে তা মেরামত করা হবে, তারা যেন ওখানে বসে ব্যবসা করতে পারে। ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসার একটা পরিবেশ তৈরি করে অবৈধ এ দোকানপাটগুলো উচ্ছেদ করা হবে।
এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/