খুলনা ব্যুরো : জমির কাগজ দেখার কথা বলে খুলনার দিঘলিয়ার ভুমি দস্যু হায়দার মোড়ল চক্রের সদস্যরা আব্দুল ওহাব সেখসহ তার পরিবারের ৬ সদস্যকে ডেকে এনে ফাঁদে ফেলে সুকৌশলে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। আর এ কাজে প্রথম থেকেই সহযোগিতা করে আসছে দিঘলিয়া থানা পুলিশ। এমন অভিযোগ ভ‚ক্তভোগীদের। ঘটনার পর থেকে পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়েছে পরিবার গুলো। চরম আতঙ্কে দিন পাড় করছে পরিবারের সদস্যরা। তাদের অত্যাচারে ভিটা ছাড়া হয়েছেন অনেকে।
জানা গেছে, সেনাবাহিনী সদস্য শামীম হোসন চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর রেজিষ্ট্রিকৃত ১৪৮৫/২৪ নং কবলায় হাল ৪৮৪০ দাগের ১৫ শতক জমির মধ্যে ১২ শতক জমি মৃত সেকেন্দার আলী মোড়লের স্ত্রী জোবেদা খাতুনের কাছে ক্রয় করেন এবং বাকী ৩ শতাংশ স্ট্যম্পের মাধ্যমে ক্রয় করেন।
ভুমি দস্যু হায়দার মোড়ল তার চক্রের সদস্য আনছার আলী সেখের ছেলে রাজু সেখ, মৃত’ সাহিদুল শেখের ছেলে আহাদ সেখ, মৃত নজির মোল্যার ছেলে হাসান মোল্যাকে দিয়ে জমি জবর দখল করে নেয়।
সেনা সদস্য শামীম হোসেন কর্মরত থাকায় তার পিতা তার পক্ষে দিঘলিয়া যৌথবাহিনীর কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। যৌথ বাহিনীর পক্ষ থেকে দিঘলিয়া উপজেলা সহকারী কমিশানর ভুমির দপ্তরে প্রেরন করেন। সহকারী কমিশনার ভুমি বিষয়টি গুরুত্ব না’দেয়ায় উক্ত জমিতে তারা দখলে যায়।
পরে জমির কাগজ পত্র দেখার কথা বলে ওহাব শেখকে ডেকে নেয়া হয় উপজেলায়। এক পর্যায় সেখান থেকে তাদের পরিবারের ৬ সদস্যকে আটক দেখায় পুলিশ। আর এ সুযোগে ভুমি দস্যু হায়দার মোড়লের চক্রের সদস্য আব্দুল আহাদ শেখকে দিয়ে ওই দিন ২০ অক্টোবর দিঘলিয়া থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। সেই মামলায় আটক দেখিয়ে কোর্টের মাধ্যমে হাজতে পাঠানো হয় তাদের।
এ ঘটনার পর থেকে পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়েছে পরিবার গুলো। চরম আতঙ্কে দিন পাড় করছে পরিবারের সদস্যরা। তাদের অত্যাচারে ভিটা ছাড়া হয়েছেন অনেকে। সেনা সদস্য শামীম হোসেনের স্ত্রী জানান, ভুমি দস্যু হায়দার মোড়ল নিজে বিচার করে দিয়েছে। যা তার চক্রের সদস্যরা সে এখন মানছে না। তারা ভুমিদস্যুদের হাত থেকে জমি উদ্ধারসহ এ চক্রের সদস্যদের শাস্তির দাবী জানান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভুমি দস্যু চক্রটি সরকারী জমি জবর দখল করে প্লট করে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেনহাটী সরিষাপাড়ার নাজমূল উলুম ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কমিটির সদস্যরা জানান, ভুমি দস্যু হায়দার মোড়ল, আবুবক্কার, কওছার, বাবু চক্র স্বৈরাচারী সরকারের ১৬ বছর আওয়ামীলীগের তকমা লাগিয়ে নারায়ন ঠাকুরের মন্দির দখল করে সে জমি বিক্রি করেছে। বর্তমান মাদ্রাসার ঈদগাহ দখল করার চক্রান্ত করছে।
অভিযোগকারীরা জানায়, দিঘলিয়ার সেনহাটী মৌজা ভিপি ইজারা কেস নং ৯১৭/৭১-৭২, খতিয়ান নং-৯৮৬, দাগ নন্বর ২৬৮০, ২৪০৬ ও ২৪৭৪ দাগের ৪০ শতক জমি ইজারা নবায়ন করে নাজমূল উলুম ফোকানিয়া মাদ্রাসা ও মসজিদের ঈদগাহে ব্যবহারের জন্য দেয়। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ধর্মপ্রান মানুষ নামাজ আদায়সহ এলাাকার শিশুরা সেখানে মক্তবে লেখাপড়া করছে। সেই মাদ্রাসা ও মসজিদের জায়গা নিয়েও টানাটানি করছে এ ভুমি দস্যু চক্র।
তারা মসজিদ কমিটির লোকদের বিরুদ্ধে দিঘলিয়া যৌথবাহিনীর দপ্তরে একাধিক বার অভিযোগ করে হয়রানী করছে বলে অভিযোগ করে মসজিদের মুসুল্লীরা। তবে এব্যাপারে যৌথ বাহিনীর কর্তব্য রত কর্মকর্তা জানান তারা অভিযোগ পাওয়ার পর দিঘলিয়া এসিল্যান্ডের কাছে পাঠিয়েছেন।
কাগজ পত্রে দেখা যায় বাংলা ১৪২০ সাল পর্যন্ত তাদের ইজারা নবায়ন করা আছে যার ডিসিআর রশিদ নং ০৭৪০৭৬ তারিখ ০৫/১১/১৩ । অপর দিকে ভুমি দস্যু হায়দার আলী মোড়ল, আবুবক্কার সহ চক্রের সদস্যরা সকরারী এ জমি ভিপি ‘ক’ তালিকায় থাকা সত্তে¡ও তারা কিভাবে জমির দলিল করে প্লট আকারে বিক্রি করছে তা জন মনে ব্যাপক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এ জমি দখলের সময় হায়দার মোড়লের সন্ত্রাসী বাহিনী জমির ইজারা গ্রহিতা ও বসবাস কারী আনসার গাজী কে ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে আহত করে। তার ঘরবাড়ী ভাংচুর করে এমন কি তার সহ অন্যান্য ইজারা দাতার লাগানো গাছপালা ও ফসল কর্তন করে। পুকুরের ১০ লক্ষাধিক টাকার মাছ লুটকরে নিয়েযায়।
স্বৈরাচারী সরকারের তকমা থাকার কারনে তার বিরুদ্ধে কোন মামলা করতে সাহস পায়নি কেউ। হায়দার মোড়লের সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে মারাত্মক ভাবে আহত আনসার গাজী খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপালে ভর্তি হন।তার পরিবারের সদস্যরা গোপনে মামলা করলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীর সদস্য ও প্রভাব শালী হওয়ায় সে মামলায় কোন সন্ত্রাসী আটক হয়নি।
আরও জানা গেছে, এর শিকার হয়ে দীর্ঘদিন ভোগার পর মারা যান আনছার গাজী বলে তার প্রবাসী পুত্র আক্তার গাজী । এভাবে ভুমি দস্যুতা সহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে আভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
সরকারী সম্পত্তি ভুমি দস্যুরা নিয়ে যায় তাহলে সকরারী কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ কেন নেয় নি। এ বিষয়ে দিঘলিয়ার সহকারী কমিশনার ভুমি দেবাংশু বিশ্বাস জানান তিনি অল্প কদিন এসেছেন বিষটি খতিয়ে দেখবেন।
এবিষয়ে ভুমি দস্যু হায়দার আলী মোড়লের সাথে ফোনে কথা হলে তিনি হাজি গ্রামের জমির বিষয়ে মেপে বুঝ করে দিয়েছেন বলে জানান। তবে সরকারী জমি দখলের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
দিঘলিয়ার অনেকেই অভিযোগ করেন ৫ আগস্টের পর কিছুদিন গাঁ ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি। বর্তমান অন্য সব ইউপি চেয়ারম্যান পলাতক থাকলেও তিনি এত অপকর্ম করেও কোন খুটির জোরে প্রকাশ্যে এসেছেন সেটা দিঘলিয়ার চায়ের দোকান সহ সর্বত্রই আলোচনা সমালোচনা শোনা যায়। ১৬ বছরে নানা অপকর্ম করে কোন খুটির জোরে একটি মামলাও হয়নি’তা জন মনে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে মসজিদের পক্ষথেকে কমিটির সাধারন সম্পাক উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি বরাবরে নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন। নবায়ন করলে ঈদগাহ থাকবে নবায়ন না করলে থাকবেনা বলে কমিটর সদস্যরা জানান। দিঘলিয়া উপজেলা ভুমি অফিস মসজিদ কমিটির আবেদন পত্র সেনহাটী তহশীল অফিসে দিয়েছে। তহশীল অফিস কাল ক্ষেপনের কারনে বিষয়টি ঝুলে আছে। তবে ধর্মপ্রান মুসলমানদের জন্য ঈদগাহের জায়গাটা পুনঃ ইজারা নবায়ন করার জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।ে
এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/
বিচার চাই এসব ভুমি দস্যুর।