ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ২০১৪ সালে মা, ভাই-বোনদের সুখের কথা চিন্তা করে এক বুক আশা নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন সুদূর লিবিয়ায়। সে আশায় এখন গুড়েবালি। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাড়িয়ে প্রতি মুহুর্ত গুণতে হচ্ছে এখন মৃত্যুর প্রহর। যে ছেলে বিদেশে পাড়ি দিয়ে ধরতে চেয়েছিলো সংসারের হাল, সে এখন নিজেই সংসারের বোঝা।
ঘটনাটি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নের খড়িবাড়ী গ্রামের মৃত-মো: ফয়জুর রহমান এর ছেলে মো: শামীম ইসলামের (৩৬)। সে বাঁচতে চায়-এজন্য দেশের সকল বিত্তবানসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন তিনি।
যদিও তার বিদেশ (লিবিয়া) যাওয়াটা হয় চোরাই পথে। ফলে ওই দেশে প্রবেশের পর পরই পড়তে হয় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কায়। সেই শঙ্কা কাটিয়ে মাত্র ৪০০ দিনার (বাংলাদেশি ৮ হাজার টাকা) বেতনে একটি পানির কোম্পানিতে চাকুরী হয়। সেই টাকায় কোনমতে নিজে চলতে পারলেও পরিবারের কাছে টাকা পাঠানোর মতো কোনো উপায় ছিলো না। এদিকে তার পাসপোর্টটিও নিয়ে নেয় মালিক পক্ষ, সে যে দেশে ফেরৎ আসবে সে উপায়ও নেই-বাধ্য হয়ে সেখানেই কাটাতে হয় দীর্ঘ নয়টি বছর।
এরই মধ্যে তার বেতনও বাড়ে কিন্তু জীবনে যার সুখ নেই তার প্রতি পদে পদে বাঁধা আসবেই। এবার দেখা দেয় শারীরিক অসুস্থ্যতা, দিন দিন তার শরীর ফুলতে শুরু করে-এক পর্যায়ে চলতি বছরের জুন মাসে কোরবানী ঈদের সময় তাকে ১৪ দিন আইসিইউিতে থাকতে হয়, ধরা পড়ে তার শরীরের জটিল সমস্যা। ডাক্তার জানায় তার দুটি কিডনিই অচল-এ মুহুর্ত থেকে চিকিৎসা না শুরু করলে জীবন সংকটাপন্ন।
সেদেশের ডাক্তারের পরামর্শ প্রতি সপ্তাহে চারটি ডায়ালাইসিস করাতে হবে, উপায় না পেয়ে জমানো তিন লক্ষ টাকা (বাংলাদেশি টাকা হিসেবে) দিয়ে প্রতি সপ্তাহে দুটি করে ডায়ালাইসিস শুরু করে-যার প্রতিটির খরচ ৩০ হাজার টাকা। অপরদিকে দেশে ফেরার উদ্দেশ্যে পাসপোর্টের চেষ্টা করতে থাকে। একদিকে মালিকের অসহযোগিতা, অপরদিকে দূতাবাসের, আবার রয়েছে নিজের চিকিৎসা-সব মিলিয়ে দিশেহারা অবস্থা তার।
বাড়ীতে জানানোরও উপায় নেই, কেননা তাকে ফেরত আনতে টাকা পাঠানোর মতোও যে পরিস্থিতি নেই তার পরিবারের। পিতৃহীন পরিবারে যে বড়ভাইয়ের প্রেরণায় বিদেশ যাত্রা, সেই বড়ভাইয়ের আয়ের পথ যে টিউশনি করে সংসার চালানো-তাই পরিবারকে না জানিয়েই চেষ্টা করতে থাকে দেশে ফেরার। তবে তা বেশিদিন গোপন রাখতে পারেননি, টিউশনি করে সংসার চালানো বড় ভাইয়ের কাছে হাত পাততে হয়।
অবশেষে লিবিয়ায় অবস্থানরত এক বাংলাদেশী ভাইয়ের সহায়তায় ও দেশ থেকে পাঠানো বড়ভাইয়ের টাকায় কোনরকম দেশে আসে শামীম ইসলাম। দেশে ফেরৎ আসলেও তার চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ পরিবার। সহায়-সম্বল যা ছিলো সব বিক্রি করে চিকিৎসা করানো হলেও ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিতে ধাবিত হচ্ছে তার জীবন। দুটি কিডনির মধ্যে একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে খরচ লাগবে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা।
আপাতত ধার-মহাজন করে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সপ্তাহে দুদিন ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে কিডনি সচল রাখার চেষ্টা করছে পরিবার। কিন্তু দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন না করলে তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
কান্না জড়িত কন্ঠে শামীমের বড় ভাই সেলিম ইসলাম সুমন জানান, অনেক স্বপ্ন নিয়ে ছোটভাইকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সে বিদেশ গিয়ে ভালো টাকা রোজগার করে সংসারের হাল ধরবে-কিন্তু আমাদের সেই আশা পূরণ হলো না। এখন তার পিছনে প্রতি সপ্তাহে ছয় হাজার টাকা খরচ, তিন মাসের মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন না করলে তাকে আর বাঁচানো যাবে না।
তিনি আরও জানান, আমি সমাজের বিত্তবানসহ সকলের কাছে আকুল আবেদন করছি-আপনারা আমার ভাইকে বাঁচাতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। আপনাদের যার যতোটুকু সামর্থ আছে তাই দিয়েই সহযোগিতা করুন।
সাহায্য পাঠানো যাবে-বিকাশ, নগদ ও ব্যাংকের মাধ্যমে। বিকাশ ও নগদ নম্বর-০১৭২২৮৮৫৮৪৪, ব্যাংক একাউন্ট নং-১৪২১১১২৩৫৩২ (ডাচ্ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড) ও ব্যাংক একাউন্ট নং-২০৫০১৯৪০২০১৪৫৬৫০৪ (ইসলামী ব্যাংক,ঠাকুরগাঁও শাখা)।
এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/