দীর্ঘ খরার কবলে দেশ। তাপপ্রবাহে পুড়ছে সারাদেশ। এপ্রিলের শুরু থেকে যত দিন যাচ্ছে তাপপ্রবাহের মাত্রা বেড়েই চলেছে। দেশের গত ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গেছে তাপপ্রবাহ। এখন দেশের বেশিরভাগ জেলায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টানা প্রায় এক মাস যাবত তীব্র গরম, খরা-অনাবৃষ্টি ও শুষ্ক বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগ (বিএমডি) ও বিদেশি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস বলছে, এ বছর উচ্চতাপ ও খরা পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। এমনিতেই উজানে ভারতের পানি আগ্রাসনের কারণে সব নদনদী শুকিয়ে গেছে।
পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র নদের চারপাশে ধূধূ বালুচর। তার উপর তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। অনাবৃষ্টি-খরার কবলে দেশ। এই দীর্ঘস্থায়ী খরায় দেশের কৃষিখাত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চল তথা বরেন্দ্র অঞ্চলে চলতি বোরো ধান হিট শকে শুকিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে সবচেয়ে অর্থকরী মৌসুমী ফল আম ও লিচু, কাঁঠাল ঝরে পড়ছে। ফসল রক্ষা করতে সেচ দিয়ে জমিতে পানি দিচ্ছে কৃষক। আম লিচুর বাগানে পাইপ দিয়ে পানি ছিটানো হচ্ছে। এতে তাদের বাড়তি খরচ হচ্ছে।
একই সাথে অনাবৃষ্টির ফলে কাক্সিক্ষত ফলন না হওয়ারও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আম এবং লিচু এই খরার কারণে স্বাভাবিক আকারের চেয়ে অনেক ছোট হবে। শুধু আম লিচু নয়, ক্ষতির মুখে পড়েছে গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি, মাছ ও মুরগীর খামার। এ সব মিলিয়ে দীর্ঘ খরাজনিত কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি ২ হাজার কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
রাজশাহীর বাঘার আম চাষী মফিকুল ইসলাম সানা বলেন, গত বছর তিনি এক কোটি টাকার আম বিক্রি করেছেন। পচিশ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানিও করেছেন। তার তিনশো বিঘা আমের বাগানে এবার আমের ফলন অনেক কম। এই খরায় আমের গুটি ঝরে পড়ছে। তাই এবার গতবারের চেয়ে অর্ধেক টাকার আম বিক্রি হবে কিনা সেটা নিয়ে তিনি চিন্তিত। তার মত চাঁপাই নওগাঁ এবং অন্যান্য এলাকার চাষিরাও হতাশা প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘস্থায়ী খরায় উত্তরে ফসলের সম্ভাব্য ক্ষতির চিত্র তুলে ধরেছেন আমাদের সংবাদদাতারা। তাদের পাঠানো রিপোর্ট নিচে তুলে ধরা হলো।
রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, টানা তাপাদহ কৃষি প্রধান রাজশাহী অঞ্চলের আবাদ পড়েছে হুমকির মুখে। বোরো ধান, আম, লিচু গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি ফল ফলারি সব কিছুতেই টান পড়েছে। তাপাদহ থেকে ফসল বাঁচাতে সেচের পর সেচ দিয়ে প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তারপরও বাড়ছে শংকা। সেচের ও কীটনাশকের ব্যবহারের কারনে উৎপাদন খরচের পাল্লাটা ভারি হচ্ছে। অসহায় কৃষক আকাশের পানে চেয়ে আছে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টির জন্য। কৃষি বিভাগ বলছে আল্লাহ অল্লাহ করে আর কটাদিন পার করা গেলে বোরো আবাদ ঘরে উঠতে শুরু করবে। তাপ যা হবার হচ্ছে এখন যেন আর কালবৈশাখী না হয়। তবে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
এ অঞ্চলের অর্থনীতি ধান, আম, পান নিয়ে আবর্তিত। আরেক অর্থকরী ফসল আম লিচু শুরু থেকে বির্পযয় চলছে। এবার আমের উৎপাদন কম। হবে তা নিশ্চত। তবে যেটুকু আছে তা নিয়ে সংশয় কাটছেনা। সেচ দিয়ে তাপদাহ ঠেকানো গেলে আমনের বৈশাখী ঝড়ের কিরূপ হবে তা নিয়ে শংকা কম নয়। বিশিষ্ট আম বিজ্ঞানী ড: শরফ উদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত যে অবস্থা আছে তা ঠিক থাকলে আমের আবাদ মোটামুটি হবে।
রাজশাহীর বাঘার আম চাষী মফিকুল ইসলাম সানা বলেন, গত বছর তিনি এককোটি টাকার আম বিক্রি করেছেন। পচিশ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানিও করেছেন। তার তিনশো বিঘা আমের বাগানে এবার আমের পলন অনেক কম।
হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এবার আমের অনেক কম ফলন পাবেন তা বাগানের চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে। গত বছরের অর্ধেক হতে পারে। চাঁপাই ও নওগা জেলায় একই রকম অবস্থা। আমকে ঘিরে এখানকার আম অর্থনীতি চার মাসের জন্য সচল হয়ে ওঠে। শুধু আম লিচু নয়। শাকসবজি উৎপাদনে রাজশাহী উদ্বৃত্ত। এখানকার শাক সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এবার গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি খরতাপে পুড়ছে।
সেচের পর সেচ দিয়ে সতেজ রাখার প্রানান্তকর চেষ্টা। লাউ কুমড়ো শসাসহ বিভিন্ন শাকসবজির গাছ তাপে নেতিয়ে পড়ছে। সেচ দিয়ে এখানে বাড়ছে খরচ। শাকসবজি নয় রাজশাহী মাছ চাষেও দেখা দিয়েছে শঙ্কা। শত শত খামারের পুকুরের পানি প্রচণ্ড খরতাপে গরম হয়ে যাচ্ছে। তাপ সহ্য করতে না পেরে মাছ ভেসে উঠছে। এখানেও সেচ দিয়ে পানি শীতল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শংকা রয়েছে পুকুরে গ্যাস হয়ে রাতারাতি মাছ মরে যাবার। গতবারও এমন সংকট মোকাবেলা করতে হয়েছে। খরতাপের প্রভাব পড়েছে এখানকার হাস মুরগী খামারে। খামারের উপরের টিনের চালা চুইয়ে ঘামছে তাপ। আশপাশ দিয়ে গরম বাতাসের ঝাপটা। খামারীরা ফ্যানের বাতাস দিয়ে তাপ থেকে মুরগী বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু এখানেও বাধ সেধেছে বিদ্যুতের যাওয়া আসা। তাপমাত্রা সহ্য করতে না পেরে মুরগী বাচ্চা মারা যাচ্ছে বেশি। ব্রয়লার মুরগী এমনিতে নাজুক। এরাও নেতিয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে একানকার কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষিতে সম্ভাব্য ক্ষতি ২ হাজর কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, চলতি বোরো মৌসুমের দীর্ঘস্থায়ী খরা ও হিট শকে শুধু ধানেরই ক্ষতি হয়নি সেই সাথে মৌসুমি ফল, আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুসহ সবধরনের মৌসুমি ফলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। খরাজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকার বেশি হতে পারে। অতিরিক্ত সেচ ও মজুরি খরচ এবং ফল ও ফসলহানি মিলিয়ে সৃষ্ট এই আর্থিক ক্ষতি কৃষি প্রণোদনা আকারে চাষিদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, গত প্রায় দুই দশক ধরেই দেশের উত্তর জনপদে বাণিজ্যিকভাবে আম, জাম, লিচুর চাষ বেড়েছে। দুই দশক আগেও আম ছিল চাঁপাই নবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নাটোরের বিষয়। লিচু ছিল দিনাজপুর ও রাজশাহীর একান্ত নিজস্ব। ঠাকুর গাঁওয়ের সুর্যপুরি আম ছিল ল্যাংড়া, খিরসাপাত, গোপালভোগ ও ফজলির বিকল্প। কিন্তু দুই দশকে আম সাম্রাজ্য এখন রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ছাড়িয়ে নওগাঁ ও রংপুরে ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। উত্তরাঞ্চলের কেন্দ্রীয় জেলা শহর বগুড়ার ফল ব্যববসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি ও মৌসুমি দেশি ফলের পাইকারি আড়তদার মাহমুদ শরীফ মিঠু বলেন, বগুড়ায় আমের মৌসুমে এখন বেচাকেনা হওয়া ফলের মধ্যে ৩০ ভাগ আসে নওগাঁ এবং ৪০ ভাগ আসে রংপুর থেকে। রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাপাই ও দিনাজপুর থেকে আসা , ল্যাংড়া, ফজলি, গোপালভোগ, হিমসাগর, প্রভৃতির সাথে টেক্কা দিচ্ছে রংপুরের হাড়ি ভাঙা আম। তার মতে রংপুর এখন আমের নতুন রাজধানী। বগুড়ার পশ্চিমাঞ্চলেও শুরু হয়েছে আমের চাষ।
বগুড়ার মৌসুমি ফলের আড়তদারদের হিসেবে কেবল বগুড়ার কাঁচামালের আড়তেই আম, লিচু বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় পাঁচশ কোটি টাকা। তার মানে ফলের আড়তের হিসেবেই উত্তরের চাঁপাই, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে আম লিচুসহ অন্যান্য মৌসুমি ফলের কেনাবেচা হয় আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা। আম, লিচু, কাঠাল, জাম, বেল প্রভৃতি ফলের ব্যবসায় লক্ষাধিক চাষি, প্রায় ১০ হাজার পাইকার এবং দুই লক্ষাধিক কুচরা ব্যবসায়ীর জীবন জীবিকা এর ওপর নির্ভরশীল। সাধারণভাবে ধন্যাঢ্য পাইকাররা বৈশাখেই বাগানে লিচু, আমের গুটি দেখেই বাগান কিনে নেন লাভের আশায়। কিন্তু এবার সেটা করছেন না। কারণ দীর্ঘস্থায়ী খরা।
মিডিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী খরা বা অনাবৃষ্টির খবর পড়ে তারা অগ্রিম বা আগেভাগে বাগান কেনা থেকে সচেতনভাবে বিরত থাকছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমও লিচু চাষিরা। আক্ষেপ করে আম ও লিচু চাষিরা বলছেন, এবার আম ও লিচুর খাতেই খরায় ক্ষতি হবে তিন থেকে চারশ কোটি টাকা। হতাশা ব্যক্ত করে তারা বলেন, এবার এমনিতেই সব জায়গায় গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ তেমন ছিলন। আবহাওয়ার বিশেষ চরিত্রের কারনে অনেক গাছেই অগ্রিম মুকুল আসে। এটা আমের জন্য শুভ লক্ষণ ছিল না। তারপরও গাছে গাছে যেটুকু গুটি বেঁধেছিল সেটুকুও খরায় টিকলোনা। আম, জাম, লিচুসহ মৌসুমি ফলের জন্য চলমান বিরূপ আবহাওয়া একটা অশুভ সংকেতবাহী।
কয়েকজন ফল আমদানি ও রফতানিকারক জানালেন, মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে ভারত, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশি আম জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল। ফি বছর একটু একটু করে বাড়ছিল আমের রফতানি। ক্রমশ বৈদেশিক মুদ্রার আর্নিং সোর্স হয়ে উঠছিল আম। এবার আম রফতানির কোন সম্ভাবনাই বোদ হয় থাকছে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও হর্টিকালচার সেন্টারগুলোর তথ্য মতে এবার রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ এলাকায় ৯৩ হাজার এবং রংপুর বিভাগে ৬০ থেকে ৭০ হাজার হেক্টরে আমের চাষ হয়। স্বাভাবিক ফলন হলে আমচাষি, পাইকার, ফড়িয়া ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখদেতা। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। কৃষি বিভাগের ধারণা বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কম হবে মৌসুমি ফলের উৎপাদন।
এদিকে পরিসংখ্যান ব্যুরো ও কৃষি তথ্য সার্ভিসগুলোর প্রাথমিক সূত্রগুলো থেকেই ধারণা পাওয়া গেছে, খরাজনিত হিট শকেই ২৫/৩০ শতাংশ কমতে পারে বোরোর আবাদ। সূত্র মতে, ২০২৩ সালে রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলে বোরো আবাদের বিঘা প্রতি গড়ে উৎপাদন খরচ ছিল ১৭ হাজার ৯০০ টাকা। রাজশাহী ও বগুড়া অঞ্চলে খরচ পড়ে গড়ে ১৯ হাজার টাকা। তবে চলতি বছরে দীর্ঘ খরায় সেই খরচ আরো বেড়েছে। পাশাপাশি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ থাকবে উৎপাদনের ঘাটতি।
দেশের প্রখ্যাত পানি বিশেষজ্ঞ জাতীয় প্রতিষ্ঠান পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়ার সাবেক ডিজি বর্তমানে উদ্দীপন এগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মতিন বলেন, এবারের দীর্ঘস্থায়ী করার অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে উত্তরের কৃষি অর্থনীতির জন্য বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্যদ্রব্য ভাতের যোগানের প্রায় ৫৫ শতাংশের যোগান আসে বোরো মৌসুম থেকেই। কাজেই চলতি খরায় কি পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হল সেটা নিরূপনে দ্রুতই একটি বিশ্বাসযোগ্য কমিশন গঠন করে সেটা উপস্থাপন করা হোক। এম এ মতিনসহ উত্তরাঞ্চলে কর্মরত কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহীদের মতে চলতি বোরো মৌসুমে বোরোধান, মৌসুমি ফল, মাছ ও মুরগীর খামার সব মিলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হবে কমপক্ষে দুই হাজার কোটি টাকা। বোরোধান ও ফলচাষি ও মৎস্য ও মুরগীর খামারীদের এই ক্ষয়ক্ষতি কৃষি প্রনোদনার মাধ্যমে প্রদানের ব্যবস্থা নিলে কৃষক বাঁচবে কৃষিও বাঁচবে। বাঁচবে গ্রামীণ অর্থনীতি।
দিনাজপুর থেকে মাহফুজুল হক আনার জানান, চলমান তাপদাহে কৃষি নির্ভর দিনাজপুর অঞ্চলের কৃষি খাত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। তাপদাহ অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। লিচু ও আমের গুটি অব্যাহতভাবে ঝড়ে পড়ছে। টমেটো পঁচে যাচ্ছে ক্ষেতেই। বোরো ধানে পোকার আক্রমণের পাশাপাশি শীষগুলো চিটা হয়ে যেতে শুরু করেছে। তাপদাহে কৃষি’র ক্ষতি ঠেকাতে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কৃষকদের গাছের গোড়ায় পানি দেয়ার পাশাপাশি উপরিভাগে পানি স্প্রে করাসহ প্রয়োজনীয় সার ভিটামিন ও কিটনাশক প্রদানে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। তবে এজন্য যান্ত্রিক ও অর্থনৈতিকভাবে কোন সহযোগিতা করা হচ্ছে না। আর কৃষক থেকে ফড়িয়ারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় যতটুকু পারছে ততটুকু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সূর্যের প্রখর তাপের কাছে অসহায় এখন কৃষকেরা।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৃষক থেকে সকল স্তরের মানুষ ইসতেস্কার সালাত আদায় করে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে পানাহ চাওয়ার পাশাপাশি রহমতের বৃষ্টির জন্য চোখের পানি ফেলছে। দিনাজপুর অঞ্চলের অর্থনৈতিক ফসল লিচুর সাথে লক্ষ লক্ষ মানুষের বাৎসরিক আয় জড়িত। তাপদাহের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি লাভ দূরের কথা এবার দীর্ঘদিন ধরে লগ্নিকৃত অর্থ হারানোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সূত্র মতে চলতি বছর প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৭৯০ মেট্রিক। উৎপাদিত লিচুর বাজার মূল্যে যার মূল্যমান শত কোটি টাকার ঘরে দাড়াবে। দিনাজপুরের দক্ষিণ কোতয়ালী এলাকার মাসিমপুর গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা জানান, লিচুর ফল বিক্রি করেই তার সংসারের যাবতীয় খরচ চলে। দেড় একর জমিতে ১৩৭টি লিচু গাছ রয়েছে।
কিছু গাছের ফল তিন বছরের চুক্তিতে বিক্রি করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন অনেক আগেই। এখন প্রতিবছর গড়ে ৮ লক্ষ টাকা পেয়ে থাকেন। তার মতে মাত্রাতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে ইতিমধ্যেই ২৫ শতাংশ লিচু ঝরে পড়েছে। সামনে কি হবে তা সময় বলে দিবে। ঢাকার বাসিন্দা ফড়িয়া আকিমুদ্দিন জানান, গত ২০ বছর ধরে দিনাজপুরে লিচুর বাগান আগাম কিনে ব্যবসা করে আসছি। মূলত বাগান থেকে লিচু ভেঙ্গে সরাসরি ট্রাকে করে ঢাকা চিটাগাংসহ বিভিন্ন জেলার মোকামে পাঠিয়ে থাকি। সে জানালো ভিআইপি খ্যাত বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচু’র বোটা অনেক হালকা হয়ে থাকে। ফলে এসব লিচুই ঝরে পড়ছে বেশি। তার মতে, তাপ সহ্যই করতে পারে না এসব লিচু।
গত বছর মাত্র ৫ দিনের প্রখর রৌদ্রতাপে ঝলছে যাওয়ায় লাভের মুখ দেখতে পারিনি। এবারও যে কি হবে আল্লাই জানেন। কৃষি বিভাগের বিপনন ব্যবস্থার সাথে জড়িত এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ শর্তে জানালেন, মাঠ পর্যায়ে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে ইতিমধ্যে ২৫ শতাংশ লিচু ঝরে পড়েছে। এই হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে চলতি এপিলেই আনুমানিকভাবে ৪০ শতাংশ লিচু ঝরে পড়বে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন গত মৌসুমে মাত্র তিন দিনের মাত্রাতিরিক্ত তাপপ্রবাহে পূরট ও পাক ধরা হাজার হাজার গাছের লক্ষ লক্ষ লিচুর উপরের খসা পূরো যাওয়ার অভিজ্ঞতা সকলের রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মার্চ মাসে দিনাজপুরে ৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত ছাড়া এপ্রিলের ২৭ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত শূন্যের কোঠায় রয়েছে। একদিকে বৃষ্টি না থাকায় সূর্যের প্রখর তাপ লিচু’র দানা টিকে থাকতে পারছে না। এই হিসাবে শুধুমাত্র লিচুতেই ক্ষতির আশংকা রয়েছে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা। পাশাপাশি দানা বড় না হলে লিচু রফতানি করা সম্ভব হবে না। গত বছর দিনাজপুর থেকে বেসরকারিভাবে ফ্রান্সে লিচু রফতানি হয়েছিল। এছাড়া দুবাইয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে রফতানি হয়ে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে দানা বড় হওয়াটা খুব জরুরি। তাপপ্রবাহে যা স্বপ্নের মত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অপরদিকে, দিনাজপুরে ৯৬০ হেক্টরে আবাদ হওয়া নাভিজাতের টমেটোর অর্ধেকই নষ্ট হয়ে গেছে। শসা বিক্রি হয়েছে সর্বনিম্ন ৭৫ পয়সা কেজি হিসাবে। তারপরেও ক্রেতা না পেয়ে কৃষকেরা ক্ষেত থেকে শসা তোলা বন্ধ করে দেয়ায় তা পঁচে গেছে। সবশেষে ইরি-বোরো ধান। যার উপর কৃষক নয় জাতীয়ভাবে খাদ্য নিরাপত্তায় সরকারকেও নির্ভর করতে হয়। এই ইরি-বোরো ধান আকাশের পানির অভাবে পোকার আক্রমনের পাশাপাশি চিটা হয়ে যেতে শুরু করেছে। ইরি-বোরো আবাদ কতটা ক্ষতির মুখে পড়বে তা কৃষি বিভাগ এখনও সঠিকভাবে কিছু বলতে পারছে না। তবে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। ধান কাটা ও মাড়ার পর গড় উৎপাদনের ভিত্তিতে ক্ষতি নিরুপণ করা সম্ভব হবে।
আরএম/ টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/
Great post and right to the point. I am not sure if this is really the best place to ask but do you guys
have any ideea where to get some professional writers?
Thx 🙂 Escape rooms