• বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
হিলিতে শ্রমিকদের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হিলিতে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠির মাঝে বিনামুল্যে ক্রস জাতের বকনা বিতরণ ঠাকুরগাঁওয়ে চুরি যাওয়া শিশু উদ্ধার না হওয়ায় ছাত্র-জনতার প্রতিবাদ  ঠাকুরগাঁওয়ে জিংক ধান ও গমের চাষাবাদ বিস্তার বিষয়ে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত ঠাকুরগাঁওয়ে ইট ভাটায় জরিমানা ও ভাংচুর বন্ধে বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদান ঠাকুরগাঁওয়ে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল ঠাকুরগাঁওয়ে এতিম শিশুরা পেলেন ঈদ উপহার ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঠাকুরগাঁওয়ে মশাল মিছিল হাসপাতাল থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে আড়াই মাসের বাচ্চা চুরি জিংক সমৃদ্ধ ধান, গম ও অন্যান্য ফসলের বিস্তার বিষয়ে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

পাকিস্তানি বর্বরতার বিরুদ্ধে বাঙালির চেতনার নাম একুশে ফেব্রুয়ারি !

Reporter Name / ২৬৪ Time View
Update : শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঠাকুরগাঁও : ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি। আমি কি ভুলিতে পারি…।’ সত্যিই ভুলতে পারেনি বাঙালি। ভুলতে চাওয়ার মতো মূর্খ নয় বাঙালির চেতনা। তাই আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত এই গানটি বাঙালির চেতনার রংকে আজও আরও সমৃদ্ধ করে চলেছে। পাকিস্তানি বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতি বছরই বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনা তার কৃষ্টির শিকড়ের সন্ধানে নিজের অবচেতনেও গেয়ে ওঠে ‘ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি…’।

মৌলবাদীরা যতই চেষ্টা করুক না কেন, অমর একুশের চেতনাকে মুছে ফেলা যায় না। বরং আজ একুশের চেতনা গোটা দুনিয়াতেই আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে সকলেরই মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণের অধিকারে প্রেরণা জোগায় অমর একুশের চেতনা। সেই চেতনাতে আঘাত হানার ক্ষমতা কারও নেই।

জাতি হিসাবে বাঙালি রক্তের বিনিময়ে প্রথম জয়ের স্বাদটাই তো পেয়েছিল একুশের হাত ধরে। স্বৈরাচারি পাকিস্তানের গায়ের জোরে উর্দু চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সালাম-জব্বর-বরকতদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি ফিরে পেয়েছে তার মাতৃভাষার অধিকার।

পাকিস্তানি হানাদারদের বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে রক্ত দিতেও কার্পণ্য করেনি বাঙালি। সেই গর্বের ইতিহাস কিছুতেই মুছে ফেলা যাবে না। বরং তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে পৌঁছে যাচ্ছে বাহান্নর চেতনা। সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে গোটা দুনিয়াকেই মাতৃভাষার অধিকার সুরক্ষিত রাখতে সাহস জোগাচ্ছে অমর একুশে। তাই তো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বরে জাতিসংঘ একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চরম আকাড় নিলেও ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের শুরু থেকেই মাতৃভাষার অধিকারের দাবিতে গর্জে উঠেছিলেন সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ। তাই ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয় ভাষা-বিক্ষোভ। পাকিস্তান প্রথম থেকেই বাংলাভাষীদের ওপর উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।

দেশভাগের পর আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ প্রকাশ্যে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেছিলেন। তখনই প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন বাঙালি সাহিত্যিক, শিক্ষক, রাজনীতিবিদরা। কিন্তু সেই প্রতিবাদকে আমল দিতে চায়নি স্বৈরাচারি পাকিস্তান সরকার। তাই ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেছিলেন ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা’। তার সামনেই প্রতিবাদ জানান বাঙালিরা।

গড়ে ওঠে ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। কিন্তু সাহসী বাঙলির প্রতিবাদী চেতনাকে আমল না দিয়ে ১৯৫২ সালের ২৭শে জানুয়ারি পাকিস্তান গঠনের সময় পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী, পরবর্তীতে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল খাজা নাজিমুদ্দিন পল্টনে এক সমাবেশে জিন্নাহ’র কথারই পুনরাবৃত্তি করেন। শুরু হয় প্রতিবাদ। বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সর্বস্তরের বাঙালি। জাতিধর্ম নির্বিশেষে আন্দোলনে নামেন বাংলার মানুষ। কিছু মৌলবাদী শক্তি পাকিস্তানের তাবেদারি করলেও বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার কাছে পরাস্ত হয় সমস্ত অপশক্তি।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, বাংলায় ৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮, বৃহস্পতিবার, চরম আকার নেয় আন্দোলন। আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ হাজার হাজার মানুষ ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ দেখাতে রাজপথে নেমে আসেন। অহিংস আন্দোলনে ভয় পেতে শুরু করে পাকিস্তান। কারণ ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে পাবনা, গাইবান্ধা, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের স্কুলশিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে সামিল হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে গর্জে ওঠে পাকিস্তানিদের বন্দুক। শহীদ হন সালাম-বরকত-জব্বরা। কিন্তু আন্দোলন দাবিয়ে রাখা যায়নি। বরং আরও বেগবান হয় মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের দাবি।

একুশের বেদনাকে বুকে আগলে রেখেই ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রাজপথে নেমে আসে ছাত্র-জনতার ঢল। তারা পাকিস্তানি বর্বরতার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। ভাষাশহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে তোলেন স্মৃতিস্তম্ভ। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারি সেই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভও গুঁড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি হানাদারেরা। তখনও তারা ভেবেছিল, শহীদ বেদী গুঁড়িয়ে দিয়ে একুশের চেতনাকে মুছে ফেলবে। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করেছে, শহীদ বেদী ভেঙে মানুষের চেতনাকে ধ্বংস করা যায় না। দেশে-বিদেশে বারবার সেটা প্রমাণিত।

রক্তে রাঙা বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে চাপে ১৯৫৪ সালের ৭ মে গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায় হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি। তখনও পাকিস্তান বুঝতে পারেনি বাঙালি জাতিকে দাবিয়ে রাখা যায় না।

বাহান্ন থেকে শিক্ষা না নেওয়ার মাশুল তাদের গুণতে হয়েছে একাত্তরে। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে চীন ও আমেরিকার মদদপুষ্ট পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয় ছিনিয়ে এনে জাতিকে লাল-সবুজ পতাকা উপহার দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। বাংলার বিশ্বাসঘাতকেরা তাদের মদদ দিলেও ফের পরাস্ত হয়েছিল পাকিস্তানি অপশক্তি।

বাহান্নর চেতনাই বাঙালিকে স্বাধীনতার লড়াইয়ের প্রেরণা জুগিয়েছিল। অমর একুশের চেতনা অক্ষয় হয়ে থাকবে বাঙালির হৃদয়ে। বাঙালির জাতিসত্তা, স্বকীয়তা আর সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার সেই লড়াই এখন গোটা দুনিয়ার মানুষকে পথ দেখাচ্ছে। রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছিলেন জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কোফি আন্নানের কাছে।

১৯৯৯ সালের ১৭নভেম্বরে ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে ১৮৮টি দেশের সমর্থনে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়। ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে ঠিক হয় গোটা দুনিয়াতেই একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসাবে পালিত হবে।

আসলে একুশে ফেব্রুয়ারি একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার নাম। তাই কবির সুমন গেয়েছেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি আমার আলো, আমার চোখ…।’ আবার ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন ও আহমদ রফিক তাদের ‘ভাষা আন্দোলন: ইতিহাস ও তাৎপর্য নামক বইতে লিখেছেন, ‘ভাষা আন্দোলন বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়।……এর সূচনা মূল আন্দোলন শুরু হওয়ার কয়েক দশক আগেই এবং বাঙালি মুসলমানের সেকুলার জাতিয়তাবোধের পেছনে কাজ করেছে। তাই বর্তমানে মৌলবাদীরা যতই আস্ফালন করুক না কেন একুশের চেতনাই ফের বাঙালিকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে।

এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস


আপনার মতামত লিখুন :

3 responses to “পাকিস্তানি বর্বরতার বিরুদ্ধে বাঙালির চেতনার নাম একুশে ফেব্রুয়ারি !”

  1. Good info. Lucky me I reach on your website by accident, I bookmarked it.

  2. I?¦ve read several excellent stuff here. Certainly value bookmarking for revisiting. I wonder how a lot effort you put to make this type of excellent informative web site.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
HTML Snippets Powered By : XYZScripts.com
https://slotbet.online/
HTML Snippets Powered By : XYZScripts.com