টাঙ্গন ডেস্ক : রাষ্ট্রের ক্রান্তিকালীন সময়ে রাষ্ট্রযন্ত্র সংস্কারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ সম্পর্কে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার তুলনা মূলক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের লক্ষ্যে “মানবতা বিরোধী অপরাধের প্রেক্ষিতে সত্য, ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও প্রতিকার” শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারী) বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন অডিটোরিয়ামে “বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এবং সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব এডভান্সড লিগ্যাল এন্ড হিউম্যান রাইটস স্টাডিজ” যৌথ ভাবে এই সভার আয়োজন করে।
ইয়াসমীন সুকাতার বলেন ক্রান্তিকালীন ন্যয়বিচারের ক্ষেত্রে সাধারণ ক্ষমা, দায়মুক্তি, জবাবদিহিতা এবং ট্রুথ কমিশনের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক তুলে ধরেন। তিনি বিশ্বাস করেন ক্রান্তিকালীন ন্যয়বিচার প্রক্রিয়া ঐতিহাসিক ভাবে চলে আসা অবিচার মোকাবেলায় এবং সামাজিক কাঠামো পুনর্গঠন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ব্যপারে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ সংস্কৃতি থেকে গণতন্ত্রে রূপান্তরের ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। তার মতে, ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় প্রধান অন্তরায়গুলো হলো— অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা, শান্তি ও ন্যায়বিচারের মধ্যে সঠিক ভারসাম্যরক্ষা করা এবং ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণের সঠিক ব্যবস্থা করা। তবে তার মতে দক্ষিণ আফ্রিকারট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন প্রতিবন্ধকতা গুলো ভালভাবেই মোকাবেলা করেছিল।
ড.কার্লোস ক্যাস্ট্রেসানা ফার্নান্দেজ তার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ক্রান্তিকালীনন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে জবাবদিহিতা ও সার্বিক সমন্বয়নের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখেসংঘাত থেকে সকলের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরী করা জরুরি। তার মতে, যে কোনো অভুত্থানপরবর্তী সময়ে ন্যায়বিচার, আন্তর্জাতিক বাধ্য বাধকতাএবং মানবাধিকারের প্রতি প্র্ণূশ্রদ্ধা রেখে কাজ করতে হয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি আর্জেন্টিনায় স্বৈরশাসন ও চিলির একনায়কতন্ত্র শাসনামলের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে ন্যায় বিচারের জন্যতাদের চলমান প্রচেষ্টা প্রমাণ করে যে নির্যাতন ও মানবতা বিরোধী অপরাধ কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক আইনে দায়মুক্তির আওতায় পড়ে না। যাদেরকে নিজেদের দেশে বিচার করা সম্ভব হয় না তাদেরকে অন্য তৃতীয় কোন রাষ্ট্রে সার্বজনীন এখতিয়ারভুক্ত অপরাধ সমূহের বিচার করা সম্ভব।
অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক অপরাধ, আন্তর্জাতিক প্রথাগত আইন, ভূ-রাজনীতি এবং বর্হির রাষ্ট্রের দ্বিমুখিতা এবং প্রমাণ সংগ্রহ ও বিচারিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা করেন।
ব্লাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ড. শামসুল বারী এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী সারা হোসেন, তিনি তার বক্তব্যে বলেন, বিভিন্ন দেশের ক্রান্তিকালীন ন্যায় বিচার নিয়ে তুলনামূলক অভিজ্ঞতা জানা প্রয়োজন, যাতে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চাগুলো গ্রহণ করা যায় এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য ভুল গুলি এড়ানো সম্ভব হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার অভিজ্ঞতার আলোকে, বাংলাদেশে ক্রান্তিকালীন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের ভূমিকা কী হতে পারে তার ধারণা লাভ করা এই মুহূর্তে খুবই প্রয়োজন।
আলোচনা সভায় মূল বক্তা হিসেবে ইয়াসমিন সুকা এবং ড. কার্লোস ক্যাস্ট্রেসানা ফার্নান্দেজ তাদের অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেন। ইয়াসমিন সুকা দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন এবং সিয়েরা লিওনের ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের সদস্য ছিলেন। তিনি শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ তদন্তের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের প্যানেল অব এক্সপার্টস অন অ্যাকাউন্টেবিলিটি-র সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ সুদানের মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘ কমিশনের চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ড.কার্লোস ক্যাস্ট্রেসানা ফার্নান্দেজ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আইনজীবী, ম্যাজিস্ট্রেট, তদন্তকারী বিচারক এবং প্রসিকিউটর হিসেবে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ সুদানের জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনার এবং কলম্বিয়ার স্পেশাল জুরিসডিকশন ফর পিস-এর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। এর আগে তিনি গুয়াতেমালায় আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে কাজ করেছেন।
এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/