টাঙ্গন ডেস্ক : মাউশি নীতিমালা এবং মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র ওপেক্ষা করে, ঠাকুরগাঁওয়ে নিম্ন মাধ্যমিক ও উচচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে তার দায়িত্ব প্রদানে স্বজনপ্রীতি ও ব্যাপক অনিয়মের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। একদিকে প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভংগের নানান ঘটনা, অপরদিকে বিঘ্নিত হচ্ছে পড়ালেখার পরিবেশ। শিক্ষা প্রশাসনের প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও কোথাও কোন প্রদক্ষেপ নেননি বলে জানায় অনেকে ।
দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। এ জেলায় ১৫ লক্ষ ৩৩ হাজার ৮৯৫ জন মানুষের বাস। আয়তনের দিক থেকে ১৭৮১. ৭৪ বর্গ কিলোমিটার। শিক্ষার হার ৬৫ ভাগ। জেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭০৭টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৬৬টি। এর মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঘটেছে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভংগের নানান ঘটনা। বিঘ্নিত হচ্ছে লেখাপড়ার পরিবেশ।
২০১১ সালে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী “প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে তার দায়িত্বপালন” সম্পর্কে বলা আছে বিদ্যালয়ে সহকারি প্রধান শিক্ষক না থাকলে জ্যেষ্ঠতম সহকারি শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন। জ্যেষ্ঠতম সহকারি শিক্ষক নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমপিও ভূক্তির তারিখ, এমপিও ভূক্তির তারিখ একই হলে যোগদানের তারিখ, যোগদানের তারিখ একই হলে বয়সের দিক থেকে জ্যেষ্ঠতম সহকারি শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করতে হবে এবং সমবয়সী হলে শিক্ষাগত যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
কিন্তু মাউশি নীতিমালা এবং মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র ওপেক্ষা করে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালাপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বালাপাড়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়সহ জেলার প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্বজনপ্রীতি আর অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।
বালাপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শাহজাহান আলী বলেন এই বিদ্যালয়ের ব্যাপক অনিয়ম ছিল। নিয়ম বর্হিভ‚ত ভাবে শিক্ষক কর্মচারি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্কুলের সম্পত্তি বন্ধক রাখা হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম পরিবর্তন আসবে। কিন্তু আমাদেরকে কাউকে জানানো হলো না। প্রধান শিক্ষক এবং কমিটি’র সভাপতি মিলে সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিলেন। পরিশেষে ফেসবুকে দেখা গেল সকলের মতামতের ভিত্তিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বালাপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আবু তাহের বলেন সম্পূর্ণ অনিয়ম করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একদিনের সিনিয়ারিটি হলেও তাকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার নিয়ম। বিদ্যালয়ের আরেক সহকারি শিক্ষক তরিকুল ইসলাম বলেন সাবেক প্রধান শিক্ষক এবং কমিটি সম্পূর্ণ নিয়ম বহিভ‚তভাবে কাজটি করেছে। আমরা এব্যাপারে কিছুই জানি না, আমাদের সাথে কোন ধরনের আলোচনাও করা হয়নি। বালাপাড়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম সরওয়ার মোর্শেদ এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
বালাপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন বিষয়টি নীতিমালা বহিভূতের সত্যতা স্বীকার করে বলেন আমি আওয়ামীলীগের জয়েন্ট সেক্রেটারি। কমিটি যদি মনে করে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আছে সে জন্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে, তাছাড়া অন্য কিছু না।
বালাপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মতিয়র রহমান এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি হননি। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মধুপুর কাকলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি বদরুল ইসলাম বিপ্লব বলেন সিনিয়র শিক্ষক ছাড়া অন্য কাউকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার সুযোগ নাই। যদি কোথাও করা হয়, তা নিয়ম বহিভ‚ত ভাবে করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শাহীন আকতার বলেন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক না থাকলে সহকারি প্রধান শিক্ষক, সহকারি প্রধান শিক্ষক না থাকলে জৈষ্ঠ্য শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোথাও এর ব্যত্যয় ঘটে তাহলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
https://slotbet.online/