টাঙ্গন ডেস্ক : শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি নিরসনে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি, ব্যাপক প্রচার ও প্রচারণা চালান, সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তলা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে লিঙ্গ বৈষম্য ও যৌন সহিংসতা বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা ও মনিটরিং ব্যাবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন মতবিনিময় সভায় বক্তারা।
রোববার (২৪ মার্চ) সকালে ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘যৌন হয়রানি নিরসনে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাঃ বর্তমান অবস্থা ও বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এ দাবী জানান বক্তরা।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) দীর্ঘ দিন ধরে জনস্বার্থ মামলা পরিচালনা এবং যৌনহয়রানি নিরসনে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌনহয়রানি নিরসনে অধিপরামর্শ (এ্যাডভোকেসী) কার্যক্রম পরিচালনা, আইনী পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় এবং সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন যৌন সহিংসতার ঘটনার প্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে ব্লাস্ট এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
যৌন হয়রানি নিরসনে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন তাহমিনা রহমান, বিশেষজ্ঞ, বাক স্বাধীনতা ও সদস্য, ট্রাস্টিবোর্ড, বাংলাদেশলিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) । তিনি তাঁর উপস্থাপনায়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ঘটে যাওয়া যৌন সহিংসতার ঘটনা সমূহের উপর আলোকপাত করেন। একই সাথে, যৌন সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধে দেশে বিদ্যমান আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি নিরসনে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এবং একই সাথে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (CEDAW) এর প্রতিও আলোক পাত করেন।
এছাড়াও তিনি তাঁর বক্তব্যে সরকারি- বেসরকারি সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ বিষয়ে শিক্ষক- শিক্ষার্থী সকলের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা, যৌন হয়রানি নিরসনে সুনির্দিষ্ট একটি আইন এবং ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষা আইন দ্রুত প্রণয়ন করা, যৌন সহিংসতা বিষয়ক অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্যে যখন সিন্ডিকেট সভায় প্রেরণ করা হয়- সেই পর্যায়ে ক্ষমতাশালী ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ বন্ধকরা; বিচারহীন তার সংস্কৃতি দূর করা, তদন্ত ও দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দ্রুত নিশ্চিত করা; প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে টোল ফ্রি হটলাইন নম্বর ও অনলাইনে অভিযোগ দায়েরের ব্যবস্থা চালু করা এবং সর্বোপরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি নিরসনে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নের প্রতি জোর দেন।
ব্লাস্ট এর বোর্ড অব ট্রাস্টিজ’র সদস্য সভার সভাপতি এডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন, দল নিরপেক্ষ স্বজন প্রীতির উর্ধ্বে গিয়ে যৌন হয়রনির বিষয়ে মোকাবিলা করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক ভাবে প্ররোচিত নিয়োগের দৌরাত্ম্য হ্রাস করতে হবে।সেই সাথে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ন্যায় বিচারের স্বার্থে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তার এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা যেতে পারে তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন ।
সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি নিরসনে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও নির্দেশনা বিষয়ে সচেতনতার অভাব, কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা ও মনিটরিং এর অভাব, অভিযোগদায়ের ক্ষেত্রে অভিযোগ বক্সের পাশাপাশি অনলাইনে অভিযোগদায়েরের ব্যবস্থা করা, ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্ত উভয়েরই পরিচয় প্রকাশে গোপনীয়তা অবলম্বন করা, মিথ্যা অভিযোগদায়েরের প্রমান পাওয়া গেলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তি গ্রহণের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং সেন্টার ফর এডভান্সড লিগ্যাল স্টাডিজ এর পরিচালক সম্মানিত অতিথি ড. শাহনাজ হুদা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি নিরসনে উচ্চ আদালতের ১১দফা সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বে ও দেশে বিদ্যমান পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, যৌন সহিংসতায় ভুক্তভোগী নারীর সম্মান হানির ভয়, যৌন সহিংসতায় ভুক্তভোগী নারীকে সমাজে গ্রহণযোগ্যতার মানসিকতা তৈরি না হওয়া, বিচার হীনতার কারণে এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও তিনি তাঁর বক্তব্যে সম্পূর্ণ নতুন আইন প্রণয়ন না করে, সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান আইন সমূহে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে তার সুষ্ঠুবাস্তবায়নের প্রতি গুরুত্বআরোপ করেন।
একই সাথে তিনি, যৌন সহিংসতা বিষয়ক অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত অনুমোদনকালে সিন্ডিকেট সভায় ক্ষমতাশালী ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ বন্ধে নির্বাচনকালীন সময়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার নামায় যৌন হয়রানি নিরসনের বিষয়টি বাধ্যতা মূলক ভাবে অন্তর্ভুক্তি করণের দাবি জানান।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী আইনুনাহার সিদ্দিকা প্যানেল আলোচক বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি নিরসনে উচ্চ আদালতের ১১ দফা সুস্পষ্ট নির্দেশনা সম্বলিত যুগান্তকারী এ রায়টি প্রদানের ১৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও তাঁর যথাযথ বাস্তবায়ন এখনো হয়নি । এর মূলকারণ হিসেবে এ নির্দেশনা বিষয়ে জনসচেতনতার অভাব, ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার অপ্রতুলতা, সংশ্লিষ্ট জবাব দিহিতা ও মনিটরিং এর অভাবকে চিহ্নিত করেন। উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট রায় থাকা স্বত্বেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে এবিষয় মানার বাধ্য বাধকতা নেই, যা আদালতের রায়ের অবমাননার সামিল। বিচার পেতে দেরী হওয়ার কারণ দেখতে গেলে সিন্ডিকেটের বা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মূল কারণ হিসেবে দেখা যায়। আইনগত দিক থেকে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জবাব দিহিতার আওতায় আনতে হবে।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য এবং উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন ব্লাস্ট এর আইন বিভাগের পরিচালক আইনজীবী মো: বরকত আলী।
https://slotbet.online/