খুলনা ব্যুরোঃ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তাপসী দাসেরও অনিয়ম ও দুর্নীতির একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে নেমেছে দুদুক।
জানা গেছে, তাপসী দাস খুলনায় কর্মরত থাকাকালীন সময় কয়েকজন ঠিকাদারকে নিয়ে সিন্ডিকেট করে অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নেন। তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগের প্রেক্ষেতিতে দুদক ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯. ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাস্তবায়নকৃত কাজের তালিকা, নিয়োগকৃত ঠিকাদারের নাম, দাখিলকৃত দর ও টিইসি সদস্যদের নাম পদবী সংগ্রহ করেছেন। তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে প্রতিটি উন্নয়ন কাজে শতকরা ২০-৩০% কমিশন গ্রহণ ও টেন্ডার বাণিজ্য করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠে।
তার বিরুদ্ধে দুদক অনিয়ম দূর্নীতির কিছু প্রমান পাওয়ায় ঢাকার রমনা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। এছাড়া স্থানীয় ঠিকাদাররা ক্ষুব্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন।
অভিযোগে জানা যায়, তাপসী দাস নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নড়াইল ও গোপালগঞ্জ দায়িত্ব পালন কালে ২০১৭ সালের ২০ জুন দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৪৮ লাখ ৭৫ হাজার ৮৬৫ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং ২৫ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণের মিথ্যা তথ্য প্রদর্শণ করাসহ তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার ৪৬৬ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ও ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকার সহকারী পরিচালক (অনু ও তদন্ত-১) ফারুখ আহমেদ ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রæয়ারি রমনা মডেল থানা ডিএমপি ঢাকা বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি খুলনা সড়ক বিভাগের আওতায় বটিয়াঘাটার শোলমারী নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ কালে গার্ডার ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ¯øাব বসে যায়। সে অভিযোগের প্রমান পাওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে অদৃশ্য খুটির জোরে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে খুলনাতে পুনরায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে তাকে পদায়ন করা হয়। বর্তমানে তিনি ফরিদপুর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন।
তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ হলে রমনা মডেল থানায় মামলা হয় যার মামলা নং-জি, আর ১১/১৮, তারিখ ০৫-২-২০১৮ ইং। এ ছাড়া একই সময়ে রমনা মডেল থানায় আরও একটি মামলা রেকর্ড হয়। যার মামলা নং- ১০৮।
তাপসী দাসের খুলনা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে ১০ কাঠা জায়গার উপর প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের একটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া তিনি ক্রয় করেছেন আরও ২-৩টি বাড়ি ও একাধিক প্লট। খুলনা, সাতক্ষীরা-চুকনগর সড়কে প্রথম কিলোমিটার মিনা বাজার হতে ময়লাপোতা পর্যন্ত কোন টেন্ডার ছাড়াই রাতের আঁধারে বিটোমিনাস অভারলে কাজ মাহাবুব ব্রাদার্সকে দিয়ে করিয়েছেন। নিম্নমানের রিজিট পেভমেন্ট করায় রাস্তার কাজ শেষ হতে না হতেই উপরের অংশ উঠে যায়। এ অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলে তদন্ত টিম গঠন হয়েছিল।
এদিকে প্রকৌশলী তাপসী দাস ফের খুলনায় আসার জন্য তদবিরের খবর জানাজানি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খুলনার সচেতন নাগরিক সমাজ, সাধারন ঠিকাদারসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। তাপসী দাস বর্তমানে ফরিদপুর জোনে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রকৌশলী তাপসী দাস খুলনায় থাকাকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সে সময় তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনও করে স্থানীয় ঠিকাদাররা।
খুলনার সচেতন নাগরিক সমাজের নেতা এ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তাপসী দাসের অনিয়মের কারনে নাগরিকদের জন্য বাস্তবায়িত কাজ নিম্ন মানের হয়েছে। তিনি খুলনার উন্নয়নকে তিনি বাধাগ্রস্থ করেছেন।
তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এমন অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত কর্মকর্তাকে খুলনায় ফের দায়িত্ব প্রদান করলে অনিয়ম-দূর্নীতি আরও চরমে উঠবে।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তাপসী দাসের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।
এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/