বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলার একাংশ নিয়ে ঠাকুরগাঁও-২ আসন। এ আসনে ১৯৮৬ সাল থেকে টানা সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দবিরুল ইসলাম। এবারেও তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু মনোনয়ন পাননি। পেয়েছে তার ছেলে মাজহারুল ইসলাম। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বাবা-ছেলে ছাড়াও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন আরো সাত জন। বাকিরা দলীয় টিকিট না পেয়ে চুপ থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন আলী আসলাম জুয়েল। তিনি উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। সুজন ও জুয়েল তারা দু’জনেই আপন চাচাতো ভাই।
নির্বাচনের মাত্র আর ক’দিন বাকি। এইমধ্যে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও হুমকি-ধামকিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। সরকার দলীয় প্রার্থী এবং একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রচারণার প্রথম দিন থেকেই নৌকা মার্কার প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন নির্বাচনী সভাগুলোতে একে অপরকে হুমকি প্রদান করছেন। শুধু তাই নয় নিজ দলের নির্বাচনী প্রচারের সময় ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক বক্তব্যও দিচ্ছেন এই দুই প্রার্থী। লিখিত অভিযোগও করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে।
নৌকার সমর্থকরা জানান, সুজন (নৌকা প্রার্থী) ১৫ বছর ধরে আমাদের ভালোবাসা দিয়ে আসছে। কোন দিন হুমকি দিয়ে কথা বলেনি। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক মার্কা) হরিপুরের এসে আমাদের হুমকি দেয়া শুরু করছে। নির্বাচিত না হতেই তিনি যেভাবে হুমকি দিচ্ছে নির্বাচিত হলে তিনি আমাদের ট্রাকের চাকায় পিষ্ট করে মারবেন। আর নৌকার প্রার্থী তার নির্বাচনী এক সভায় বলেছেন, যারা নৌকা দিয়ে পরিচয় তারা এখন নৌকা ডুবাতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। যারা নৌকার সাথে বৈমানি করবে, নৌকা থেকে নেমে গেছে, এখনো সময় আছে নৌকায় উঠুন। পর আর উঠতে দেয়া হবে না।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তাংকুখোর, জামায়াত-বিএনপির আর আওয়ামীলীগের কিছু লোক নিয়ে তুমি স্বতন্ত্র প্রার্থী দাড়ায়ছে। তোমার দৌড় কতদূর দেখবো। এখনো সময় আছে সাবধান হয়ে যাও। যুবলীগ না করলে উপজেলা নির্বাচন তো দুরের কথা চকিদারও হতে পারতা না। তুমি পাশ করেছে স্থানীয় কলেজ থেকে আর আমি পাশ করেছি কোলকাতা থেকে। আমি সুজন (নৌকা প্রার্থী) তুমি ভুলে যেওনা। আমি এখনো আমার ভদ্রতা আলমারীতে বন্ধ করে রেখেছি।
তিনি আরো বলেন, পাগলু স্ট্যান্ড (ত্রি হুইলার) থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী চাঁদাবাজী করে তার সংসার চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সে যদি নির্বাচিত হয় তাহলে কেউ নিরাপদ না। সন্ত্রাসী সন্ত্রাসীর মতো কথা বলে। এসময় তিনি সকলের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন।
অপরদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক মার্কা) সমর্থকরা জানান, মাজহারুল ইসলাম সুজন এমপি হলে হরিপুরে কোন আওয়ামীলীগ থাকবে না। তিনি আ’লীগের অফিস জ্বালিয়েছে, এবার ভোটারদের বাড়ি-ঘর জ্বালাবে। আমরা আসল আ’লীগ আর ওরা (নৌকা প্রার্থী) হাইব্রিড আ’লীগ, লুটপাটের আ’লীগ, সুজন এখানে কোন আ’লীগ রাখে নাই, রাখছে আমিলীগ, এরা সুজন লীগ। হরিপুরে বিচার শালিসের মাধ্যমে নৌকা প্রার্থী আয় করে ৫০ লাখ টাকার মতো। আলী আসলাম জুয়েল নির্বাচনে দাড়িয়েছে বলে আমরা সম্মান পাচ্ছি। এসময় এক আ’লীগ কর্মীকে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে রাখার ও অভিযোগ করেন তারা। বর্তমান এমপি হরিপুর আ’লীগকে ৩৫ বছর রাজনীতি করতে দেয়নি। তিনি একটা গষ্ঠির মধ্যে রেখেছে আ’লীগকে।
আর (নৌকা প্রার্থী)’র পাল্টা জবাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেন, নৌকার প্রার্থী যখন কোলকাতা থেকে বাড়িতে আসে তখন আমার পরিচয়ে পরিচিত হয়েছে। সে বড়দের সন্মান দিতে জানে না। বাবার পরিচয়ে সে পরিচিত। তার সমর্থকরা প্রকাশ্যে হুমকি দেয় স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট করলে তাকে নাকি দেখে নিবে। এসব হুমকি ধামকি কাজ হবে না। তিনি আমার নামে মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে।
অন্যদিকে, নৌকা মার্কার পক্ষে ভোট চাইতে কেন্দ্রীয় মহিলা লীগের সাতজন নেত্রী ঠাকুরগাঁওয়ে এসেছেন। তারা নৌকার পক্ষে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
তবে ভোটাররা বলছেন, ঠাকুরগাঁও-২ আসনে দুই জন হেভিয়েট প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম সুজন ও আলী আসলাম জুয়েল। তারা দুজনেই আপন চাচাতো ভাই। তারা নিজেদের গোমর নিজেরাই ফাঁস করছে। যেভাবে নির্বাচনী সভাগুলোতে দুজনের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধামকি বক্তব্য দিচ্ছে যেকোন সময় বড় ধরণের সংঘাত ঘটতে পারে বলে শংখা প্রকাশ করছেন তারা।
এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, নির্বাচনী পরিস্থিতি যেভাবে ভাল থাকে সে অনুযায়ী আইনশৃংখলা বাহিনী কাজ করবে। প্রশাসন পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে।
https://slotbet.online/