ডেস্ক নিউজ : ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের শেষ নেই। অনিয়ম ও দুর্নীতি যেন এক রীতিতে পরিনত করেছেন তিনি। অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষকের নাম মোহাম্মদ আলম। তিনি উপজেলার পীরগঞ্জ ইউনিয়নের বেগুনগাঁও পয়েন্ধা বিশমাইল (বিপিবি) উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষককের জাল-জালিযাতির বিষয়টি মেনে নিতে না পেয়ে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির ৪ অভিভাবক সদস্য সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ের ১৪ জন শিক্ষক একত্রিত হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপকর্ম, অনিয়ম-দূর্নীতি এবং জাল-জালিযাতির প্রমানপত্রসহ ১৭ দফা অভিযোগ উল্লেখ করে জেলা শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেছেন। অপরদিকে এক কর্মচারিকে ২৮ বছর বিনা বেতনে চাকুরী করার পর তাকে নিয়োগ না দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অন্যদের নিয়োগ দেয়ায় প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ওই কর্মচারি।
তিনি ২৯ বছর যাবৎ ধরে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে প্রতি পদে পদে অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগ। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির শেষ নেই। অনিয়ম ও দুর্নীতি যেন এক রীতিতে পরিনত হয়েছে বলে জানায় অভিভাবকসহ শিক্ষকবৃন্দ।
তিনি দীর্ঘদিন যাবত দায়িত্ব পালনে অবহেলাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন। নানা অজুহাতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন এবং পরে এসে হাজিরা খাতায় একত্রে সাক্ষর করেন। তার এমন উপস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ের অন্যান্য সহকারি শিক্ষকগণও নিয়মিত পাঠদানে অলসতা করেন। এসব কারণে ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী সংকটসহ ফলাফল বিপর্যয় ঘটছে।
অভিযোগে আরও জানা গেছে, ২০১২ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড দিনাজপুর বরাবরে পত্র না দিয়ে ভ‚য়া স্মারক ব্যবহার করে ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন নেন। যা প্রমানিত হলে তৎকালিন জেলা শিক্ষা অফিসার মো: ফজলে আলম এ বিষয়ে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন। যার স্মারক নং-জে.শি.অ.ঠা/১৯৮।
একই সালে বিদ্যালয়ের কম্পিউটার এবং প্রজেক্টার আত্নসাৎ করলে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।
২০১৩ সালে ভূয়া শাখা দেখিয়ে দুই সহকারি শিক্ষক এলিজা বেগম এবং সেলিনা বেগমকে নিয়োগ দেওয়া হলে নিয়োগ প্রক্রিয়া সঠিক না হওয়ায় এমপিও বাতিল করাসহ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রংপুর অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা উপ-পরিচালক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে প্রতিবেদন দাখিল করেন। যার স্মারক নং-৭১২/তদন্ত।
২০১৩ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক গৌর চন্দ্র মন্ডল তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে জালিযাতির অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পত্র প্রেরণ করেন। যার স্মারক নং-৪জি-১৭৮০-ম/২০০৭/১০১৭১/৬।
সরকারি বিধি অপেক্ষা করে ঘুঘুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অভিভাবক সদস্য বানিয়ে উভয়ের যোগসাজসে কর্মচারি নিয়োগে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি নিয়োগে অবৈধ নিয়োগ ও স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ তুলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে অভিযোগ দাখিল করেছেন ওই বিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষক।
সাবেক স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জালাল উদ্দীন বলেন এই প্রধান শিক্ষক জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কাউকে না জানিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে আদালতের আশ্রয় নেই। পরে আমার হাত-পাঁ ধরে ভ‚ল করিব না মর্মে অঙ্গিকার করলে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সদস্য বলেন এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এতো কিছু প্রমানের পরেও কিভাবে তার চাকুরি থাকে বিষয়টি বোধগম্য নয়। তিনি নিজেই একজন দূর্নীতিবাজ তিনি বাচ্চাদের কি শিখাবেন।
বিপিবি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আব্দুল মতিন বলেন প্রধান শিক্ষক সহকারি শিক্ষকদের স্বাক্ষর জাল করে বিল তুলে নেয়। আমরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। একই কথা বলেন সহকারি শিক্ষক খয়রাত আলীসহ অনেকে।
স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মকছেদুর রহমান বলেন যদি কোন অনিয়ম হয়, তাহলে আইনের আশ্রয় নিবেন তারা। এরপরে আর কোন বক্তব্য নেই।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শাহীন আকতার বলেন অধিকতর তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
https://slotbet.online/