টাঙ্গন ডেস্ক : প্লট ও ফ্লাট বিক্রীর নাম করে ঠাকুরগাঁওয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে “রুপসী বাংলা ড্রিম সিটি লিমিটেড” নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ব্যস্থাপনা পরিচালকসহ অনেকে পালিয়ে গেলেও চেয়ারম্যান, পরিচালক ও উপ-ব্যস্থাপনা পরিচালককে আটক করে ভূক্তভোগীরা। তবে বিনিয়োগের টাকা ফেরত না পেয়ে অনিশ্চিত দিন পার করছেন তারা। আর এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন শিশুসহ বেশীরভাগ নারীরা।
অভিযোগে জানা যায়, লাখে প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা লভ্যাংশ, আকর্ষনীয় বেতনে চাকুরি এবং প্লট ও ফ্লাট দেওয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় রুপসী বাংলা ড্রিম সিটি লি: নামে প্রতিষ্ঠানটি। প্রায় ৭ মাস ধরে ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের ঘোষপাড়া মহল্লায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে সাধারণ মানুষদের বোকা বানিয়ে এই প্রতারনা চালিয়ে আসছে চক্রটি।
জানা যায়, রুপসী বাংলা ড্রিম সিটি লি: নামে প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালের শেষ দিকে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নিবন্ধন পেয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পূর্ব আরাজি চন্ডীপুর গ্রামে এ এন এম রোকন উদ্দীন ভূঁয়ার কাছে ২ কোটি ৯০ লাখ টাকায় ৩ একর ৩৩ শতাংশ জমি ১ লাখ টাকায় বায়নামা করে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে এমডি বাবুল আকতার। সেই জমিতে প্রকল্পের নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রের সদস্যরা। তাদের কাজের সাথে কথার মিল না থাকায় বিষয়টি টের পেয়ে প্রতারক চক্রের সদস্যদের চলতি মাসের বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) অবরুদ্ধ করে রাখে ভূক্তভোগীরা। পরে প্রতারক চক্রের সদস্যরা কৌশলে থানা পুলিশকে ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্ধার করে।
ভূক্তভোগী ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের ইদ্রিস আলী বলেন আমার মামা শ্বশুর শাহিন ডেমোনেস্ট্রেটর তার মাধ্যমে এখানে আসি। তিনি বলেন তোমার স্ত্রীকে এখানে ঢুকাও। দুই লাখ টাকা লাগবে। এনজিও থেকে ঋণ করে ২ লাখ টাকা দেই। আমার স্ত্রীর কাছ থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা নেয়। এখন শুনছি এমডি পালায় গেছে।
ঠাকুরগাঁও শহরের হলপাড়া মহল্লার জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন আমার কাছে দুই লাখ টাকা নেয়। আমাকে বলেছে আমার শুধু অফিসিয়ালি কাজ থাকবে। আমার কাজটা কি, আমাকে বুঝিয়ে দেন। আপনি আসতে থাকেন। আমি দেখি এখানে কোন কাজ নাই, শুধু আড্ডা হচ্ছে। ধয্য ধরেন এই হবে, সেই হবে, আজ হবে, কাল হবে । পরে আমি বললাম আমার টাকাটা ফেরত দেন। কিন্তু টাকা ফেরত না দিয়ে টালবাহানা শুরু করে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ছাবিনা আক্তার বলেন আমি ষ্টুডেন্ট পড়াশুনা করি। আমার কাছে টাকা চায়, পরে আমি টাকা ম্যানেজ করে দেই। আমাদের বলেছে তিন মাস ট্রেনিং দেওয়া হবে। প্রতিদিন তাদের একটাই কথা ইনভেষ্ট আর ইনভেষ্ট। আর গেষ্ট নিয়ে আসেন। আমাদের আসল কি কাজ সে ব্যাপারে কিছু নেই। এমন অভিযোগ করেন আরও অনেকে।
জমির মালিক এ এন এম রোকন উদ্দীন ভ‚ঁয়া বলেন প্রতিষ্ঠানটির এমডি ৩ একর ৩৩ শতাংশ জমি ২ কোটি ৯০ লাখ টাকায় ক্রয় করবেন মর্মে আমার সাথে চুক্তি হয়। সে মোতাবেক অগ্রীম ৬৫ লাখ টাকার চেক এবং ১ লাখ টাকা নগদ দেয়। আমি চেক নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে দেখি এ হিসাবে কোন লেনদেন হয়নি। এতে আমার সন্দেহ হয় এবং এই প্রতিষ্ঠানের লোকজন দিনাজপুরে সাধারণ মানুষদের ঠকিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
রুপসী বাংলা ড্রিম সিটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান শামিমা আজাদ বলেন, গত এক দেড়মাস যাবত সমস্যা গুলো দেখা দিয়েছে। আমাদের কিছু স্টাফও বলছে আপনারা যদি কোম্পানিটাকে চালাতে চান তাহলে এমডিকে বাদ দিয়ে চালাতে হবে। ওনার কাছে এখন পর্যন্ত যতটাকা আসছে, সেটা জমা হয়নি। কোন ডকুমেন্টসও নাই, ওনাকে বার বার সতর্ক করা হয়েছে। গ্রাহকদের কাছে প্রায় ৪১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। তবে টাকা ফেরতের ব্যাপাওে কোন কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক এহেসানুল কবির বলেন, কেউ যদি অভিযোগ করে বা মামলা করে তাহলে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বেলায়েত হোসেন বলেন অনুমতি ছাড়া আমানত সংগ্রহের কাজ করা যাবে না। যদি তাদের দ্বারা কেউ প্রতারিত হয়, কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করলে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ইসলাম/টাঙ্গনটাইমস
https://slotbet.online/