• রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:০২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ঠাকুরগাঁও থানা হেফাজতে ৩টি গাভীর মৃত্যু, মালিকদের আহাজারি ঠাকুরগাঁও জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরী, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ শ্রমিক ইউনিয়নের শপথ গ্রহণ থানা হেফাজতে তিন গাভীর করুণ মৃত্যু, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের আর্তনাদ নেতার তদবিরে আসামী খালাস, ঠাকুরগাঁও পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা ভিসি ও প্রো-ভিসি’র অপসারণের দাবীতে কুয়েটে আন্দোলন অব্যাহত পীরগঞ্জে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস ও মেডিসিন চিকিৎসা ক্যাম্প হরিপুর সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক- জমি চাষাবাদ স্থগিত গাছে গাছে মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে সমারোহ হরিপুর সীমান্তে পতাকা বৈঠক, আটক বাংলাদেশীকে ফেরত ঠাকুরগাঁওয়ে ট্রাক্টরের ধাক্কায় নিহত স্বামী, আহত স্ত্রী

ঠাকুরগাঁও থানা হেফাজতে ৩টি গাভীর মৃত্যু, মালিকদের আহাজারি

Reporter Name / ৩৫ Time View
Update : শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

টাঙ্গন ডেস্ক : ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন ১৬টি গরুর মধ্যে ৩টি দুগ্ধবতী গাভী মারা গেছে। গরুগুলোর মালিকদের অভিযোগ, পুলিশের দাবিকৃত মোটা অঙ্কের টাকা দিতে না পারায় গরুগুলোকে পর্যাপ্ত খাবার ও পরিচর্যা দেওয়া হয়নি। যার কারণে প্রাণী গুলোর মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারী) এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে ঠাকুরগাঁও সদর থানায়। গরুর মালিকেরা একত্রিত হয়ে জীবিত গরুগুলো দ্রুত ফেরত চেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সেই সাথে মৃত গরুগুলোর ক্ষতিপূরণ চান তারা।

মামলার অভিযোগে জানা গেছে, চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও পৌর শহরে ফেরারি ১৬টি গবাদি প্রাণী (গরু) জব্দ করে সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে এলাকাবাসি। পরবর্তিতে সদর থানা পুলিশ গরুর মালিক চিহ্নিত করতে ২৩ জানুয়ারি আদালতের দারস্থ হন।

বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল-১ আদালতের বিচারক মোঃ মাহবুবুর রহমান বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রকৃত মালিক নিশ্চিত করার জন্য সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। একই সাথে জেলা শহরে কোন খোয়ার না থাকায় জব্দকৃত গরুগুলো দেখভালের জন্য একজন লোক নিয়োগ দিতে তদন্তকারি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন ।

সে মোতাবেক সদর উপজেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সাইদুর রহমান ১৬টি গরুর মালিকানা নিশ্চিত করে ৩ জন মালিকের নাম উল্লেখ করে গত ১৩ ফেব্রুয়ারী প্রতিবেদন দাখিল করেন। অপরদিকে নিখোঁজ হওয়া গরুর মালিকরা খবর পেয়ে এরই মধ্যে সদর থানা পুলিশের কাছে আবেদন করেন।

গরুর মালিকরা হলেন-ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের ঘোষপাড়া মহল্লার বাসিন্দা সচীন্দ্র নাথ ঘোষের ছেলে মহাদেব চন্দ্র ঘোষ। একই মহল্লার মৃত-ইলিয়াসের ছেলে নজরুল ইসলাম এবং সরকারপাড়া মহল্লার আব্দুর রহমানের ছেলে মোঃ বাবুল।

প্রতিবেদন দাখিলের দিন আদালত থানা পুলিশকে আরেকটি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। আর সেই প্রতিবেদন দাখিল করতে শুরু হয় পুলিশের তালবাহানা। ফলে খোলা আকাশের নিচে অবহেলা আর অযতেœ পরে থাকায় একে একে মারা যায় তিনটি গাভী। যার বাজার মুল্য প্রায় সাত লাখ টাকা। দ্রুত ফিরিয়ে না দেওয়া হলে বাকি গরুগুলোও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে।

গরু মারা যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে গরুর প্রকৃত মালিকরা থানায় ছুটে আসেন দারস্থ হন পুলিশের এবং এ সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তারাা। বিষয়টি নিরসনের পাশাপাশি মৃত গরু গুলো ক্ষতিপুরন দাবি করেন।

গরুর মালিকদের অভিযোগ, পুলিশ নিশ্চিত হয়ে তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই নুর জামাল গরুর মালিকের বাড়িতে গিয়ে মোটা অংকের উৎকোচ দাবি করেন। তবে উৎকোচ দিতে অস্বীকার করলে ক্ষুদ্ধ হয়ে গরু গুলো ফেরৎ দিতে কালক্ষেপন করতে থাকেন।

সাবিনা খাতুন নামে এক অসহায় নারী জানান, তার একমাত্র বিদেশি ক্রস জাতের গাভীটি ছিল তাদের সংসারের একমাত্র অবলম্বন। প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ লিটার দুধ দিতো গাভীটি। গত মাসের ২২ তারিখে পুলিশ সেটি বেওয়ারিশ হিসেবে থানায় নিয়ে আসে।

সাবিনা খাতুন বলেন, “আমার অসুস্থ স্বামী আর দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ এই গাভী থেকেই চলত। এখন সব শেষ হয়ে গেল। অনেকবার পুলিশের কাছে গেছি, কিন্তু তারা বিভিন্ন অজুহাতে আমার কাছে অনেক টাকা দাবি করেছে। প্রথমে গরুর খাবার বাবদ ৫০ হাজার, পরে দেড় লাখ এবং সর্বশেষ তিন লাখ টাকা দাবি করে। আমরা গরিব মানুষ, এত টাকা কোথায় পাবো?”

কান্নায় ভেঙে পড়া সাবিনা আরও বলেন, তার গরুর বাজার মূল্য প্রায় ৩ লাখ টাকার উপরে। তার সাথে থানায় ছিলেন তার বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি তুলন বেগম। তিনিও কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “গরুটি কয়েকদিন আগে একটি বাছুর জন্ম দিয়েছে। এখন মায়ের দুধ ছাড়া সেই বাছুরটিও হয়তো মারা যাবে।” তারা এর বিচার চান।

শুধু সাবিনা খাতুন নন, শহরের সরকার পাড়ার বাসিন্দা বাবলু জানান, তার পরিবারের ৫টি গরু পুলিশ হেফাজতে আছে। এর মধ্যে আজ ১টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। পাশের ঘোষপাড়ার শ্রী মহাদেব চন্দ্র্র ঘোষ জানান, তার দশটি গরুও পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। এর মধ্যে দুটি গরুর মৃত্যু হয়েছে। গরু দুটির বাজার মূল্য প্রায় তিন লাখ টাকার বেশি।

ভুক্তভোগী বাবলুর জামাতা গোলাম রব্বানী বলেন, “আমরা আদালতের মাধ্যমে মালিকানা দাবি করে শুনানি করেছিলাম। আদালত প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তা গত ১৩ ফেব্রæয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশকে দিলেও, ১৬ তারিখের পর থেকে গরুগুলো মরতে শুরু করে।”

বিষয়টি জানাজানি হলে ঘটনাস্থলে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিথুন সরকার। তিনি এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং দ্রুত সমাধানের আশ^াস দেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের অবহেলায় পশুগুলো মারা গেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, “আমরা ১৬টি গরুর প্রকৃত মালিক যাচাই করে গত ১৩ তারিখে প্রতিবেদন দিয়েছি। গরুগুলোর অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি।”

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। দ্রুত গরুর মালিকদেরকে গরুগুলো বুঝিয়ে দিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গরুগুলোর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
HTML Snippets Powered By : XYZScripts.com
https://slotbet.online/
HTML Snippets Powered By : XYZScripts.com