ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ঠাকুরগাঁওয়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এসএসসি-৮৯ ব্যাচের এক ব্যতিক্রমী বনভোজন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২ জানুয়ারী) দিনব্যাপী ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ফেরসাডাঙ্গী ব্রীজ সংলগ্ন টাঙ্গন নদী পাড়ে এসএম রাজার বাগান বাড়িতে এই বনভোজন অনুষ্ঠিত হয়।
ব্যতিক্রমী আয়োজনের মধ্যে ছিল-‘বলি ও ননদি আর দু’মুঠো চাল তুলেদে হাঁড়িতে’ , ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’ পুরনো সব গান কলেরগান বাজানো, গরুর গাড়িতে মাইক বাজিয়ে হৈ-হুল্লোর, নাচ-গান পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানো, মার্বেল-বালিশ পাচার খেলা, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশনসহ নানা আয়োজন।
আর এ সব খেলায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় খাসী ছাগল, হাঁস, মুরগ, কবুতরসহ পরিবারের গৃহস্থলী কাজে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ।
খাদ্য তলিকায় ছিল সকালের নাস্তা গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী খাবার দই-চিড়া, দুপুরের খাবারে ছিল সাদা ভাত, সিদল ভর্তা, ঠাকুরী কালাইর ডাল, হাঁসের মাংস, খাসির মাংস, সরিষা ফুলে মিশ্রিত ডিম ভাজা এবং বিকালের নাস্তা ছিল গুড়গুরিয়া পিঠা।
বিনোদন হিসেবে ছিল কলের গান, মার্বেল খেলা, বালিশ পাচরা খেলা, গরুর গাড়িতে ভ্রমণসহ নানা ধরনের আয়োজন।
বনভোজন বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক হুসনে জান্নাত রুপু জানান, আমরা এখন পঞ্চাশ পেরিয়ে ষাটের কোঠায় পাঁ রেখেছি। বর্তমান প্রজন্ম ডিজিটালে আসক্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের পূর্বের ঐতিহ্যের সাথে তাদের তেমন ধারনা নেই। তাই আমাদের সন্তানদের ধারনা দিতে এই ধরনের ভিন্ন আয়োজন।
আয়োজক কমিটির সদস্য রেজওয়ানুল হক রিজু জানান, আমরা ছোট বেলায় দেখেছি দাদা-দাদিরা দই-চিড়া-গুড় দিয়ে বেশ মজার খাওয়ার খেতেন। সিদল ভর্তা-পেল্কা শাখ-ঠাকুরী কালাই’র ডাল, গুড়গুড়িয়া পিঠার কথা এ প্রজন্ম ভূলে যেতে বসেছে। এখন আর মাটির সান্কী, কলার পাতায় খাওয়ার বিষয়টি চোখে পড়ে না। কলের গান, গরুর গাড়ি প্রায় বিলুপ্ত। মার্বেল খেলাও নেই বললেই চলে। বর্তমান প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে এবারের বার্ষিক বনভোজন সাজানো হয়েছে। এতে আমাদের সন্তানরা বেশ মজা করেছে।
রাকিবা ইয়াসমিন জানান, আয়োজক বন্ধুরা চমৎকার আয়োজন করেছে। অনেক দিন ধরে কলেরগান শুনার ও দেখার ইচ্ছে করছিল। পুরনো দিনের গান শুনে আবেগে আপ্লুত হয়েছি। খাবার, গরুর গাড়ি, খেলা-ধুলা সবমিলিয়ে পুরনো দিনে ফিরে গেছি বলে মনে হচ্ছিলো।
রাজ্জাকের সহধর্মীনী মাসুমা বলেন, ব্যতিক্রমী এক আয়োজন উপভোগ করেছি। খেলা-ধুলার পুরস্কার হিসেবে ছাগল, খাশি মোরগ, হাঁস, কবুতর ছিলো খুবই মজার। বাচ্চারাসহ আমরা সবাই মার্বেল খেলেছি যা ছোট বেলার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। চমৎকার ও ভিন্নধর্মী আয়োজন উপভোগ করতে পেরে ধন্য হলাম।
ফারুকের মেয়ে ফায়িযা ফারহিন বলছিলো বাবাদের এ আয়োজনে খুব মজা করেছি। জীবনে প্রথম গরুর গাড়িতে উঠলাম।
হুসাইনুজ্জামান রাজার ছেলে তাহাসিন বলেন মার্বেল খেলা মোবাইলে দেখেছি। আজ প্রথম খেলে খুব মজা করেছি। বনভোজনে এসে অনেক কিছু দেখলাম-খেলাম-শিখলাম।
সাংবাদিক এমদাদুল ইসলাম ভূট্টো’র মেয়ে নাফিসা তাবাসসুম বলেন বনভোজনে সিদলের ভর্তা খেয়ে ভালোই মজা পেলাম এবং লটারীতে মুরোগ পুরস্কার পেয়ে কি যে মজা পেয়েছি, বাবা তোমাকে বুঝাতে পারবো না।
এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/