ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ে টানা বেশ কিছুদিনের তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশার কারণে বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও কুয়াশা পড়ার কারনে বীজতলায় ঠান্ডা পানি জমছে। এই পানির কারনে চারা তুলনামুলকভাবে বড় হচ্ছে না। বেশ কিছু এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বীজতলা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। মৌসুমের শুরুতেই এমন হওয়ায় কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় পরেছেন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এবছর সতর্কতামুলক ব্যবস্থা হিসেবে কিছু কিছু স্থানে বীজতলা প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে করে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে বলে ধারণা করছেন তারা। ঠাকুরগাঁওয়ে বেশ কয়েকদিন থেকে শীতের প্রকৌপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাপমাত্রা ৮ থেকে ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। এ অবস্থায় জেলার কৃষকেরা বোরো ধানের বীজতলা নষ্টের কারনে পরেছেন সমস্যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ইতিমধ্যে কৃষকদের শুকনো, ভেজা, ভাসমান তিন ধরনের বীজতলার বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। বীজতলা তৈরীতে স্থান, জমি তৈরী, শেড তৈরী, সার প্রয়োগ, বীজ বপন, বীজ জাগ দেয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে কৃষকদের। এছাড়াও শুকনো বীজ একটানা কত ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং কোন জাতীয় স্থানে রাখতে হবে সে বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য তাদের প্রদান করা হয়। পাশাপাশি ভাল চারা উৎপাদনের জন্য বীজের ভ্রনজাগরিত বিষয়ে দিক নির্দেশনা নিয়মিত প্রদান করা হয়।
সদর উপজেলার রুহিয়া রামনাথ এলাকার কৃষক সুধির রায় জানান, প্রত্যেক বছর তিনি কমপক্ষে ৩ বিঘা (১৫০ শতক) জমিতে বোরো ধান লাগান। এ বছরও তিনি বোরো ধানের বীজতলা তৈরী করেছেন। তীব্র শীতে বেশিরভাগ চারা গাছ মারা যাচ্ছে। শীতের প্রকৌপে চারাগুলি বড় হচ্ছে না বলে জানান তিনি। তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেলে চারা আরও ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন।
সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের ভেলাজান গ্রামের কৃষক সামশুল হক জানান, প্রত্যেক বছর তিনি প্রায় সাড়ে ৪ বিঘা (২২৫ শতক) জমিতে বোরো ধান চাষ করে থাকেন। এ বছরও বোরো ধান রোপনের কাজ শুরু করবেন। আপাতত বোরো ধানের বীজতলা করেছেন, শীতের কারনে তিনিও সমস্যায় পরেছেন বলে জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বোরো ধানের আবাদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা রাসেল ইসলাম জানান, এ বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬২ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২ লাখ ৮০ হাজার ৬৩২ মেট্রিক টন। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় মোট ৫ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। যা গত বছরে ছিল ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম জানান, কৃষি বিভাগ থেকে ইতিমধ্যে কৃষকদের বিভিন্ন তথ্য প্রদানসহ সহযোগিতা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শীতের কারণে বেশ কিছু এলাকায় সামান্য কোল্ড ইনজুরিতে বোরো বীজতলার ক্ষতির খবর পাওয়া গেলেও, সেটি বড় সমস্যা নয়। জেলার কৃষকদের প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দেওয়ার প্রশংসা করে জানান, বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমনের মত বোরো ধানেরও বাম্পার ফলন হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
https://slotbet.online/