• বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

পরিণতি যা হলো

Reporter Name / ৮৭ Time View
Update : শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

রূপরেখায় যা লেখা হয়েছিলো সেভাবেই একজন নির্দলীয় ব্যক্তি হিসেবে তিন জোট তখনকার প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নাম চূড়ান্ত করে এবং তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করে তার কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করেন এরশাদ।

সাহাবুদ্দীন আহমদের সরকার একাদশ সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে এবং সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। পরে ওই সংসদেই রূপরেখায় থাকা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির বদলে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার করা হয় সংবিধান সংশোধন করে।

বদিউল আলম মজুমদার বলছেন তিনি মনে করেন এই রূপরেখাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল এবং এতে প্রধান দলগুলো কয়েকটি বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছিলো।

“সবচেয়ে বড় বিষয় ছিলো তারা একটি আচরণবিধি দিয়েছিলো রূপরেখায়। কিন্তু নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন ছাড়া আর কিছুই হলো না। সংসদও অকার্যকর হয়ে গেলো। ফায়দা ভিত্তিক রাজনীতি শুরু হলো। সরকারি দল কর্তৃত্বপরায়ন হতে শুরু করলো। আর বিরোধীরাও দায়িত্বশীল থাকলো না। ধীরে ধীরে পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাই ধ্বসে পড়লো, যা আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের জন্ম দিলো ২০২৪ সালে এসে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

মূলত নির্বাচন নিয়ে রূপরেখায় করা অঙ্গীকার বড় ধাক্কা খেয়েছিলো ১৯৯৪ সালে একটি সংসদীয় উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির ঘটনায়। ওই নির্বাচনের পর আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৬ সালের পনেরই ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাশ করে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন খালেদা জিয়া।

আবার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানই তুলে দেন সংবিধান থেকে এবং তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন করার পর শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন তিনি।

আবার রূপরেখায় দলগুলো এরশাদের কোন সহযোগীকে নিজ নিজ দলে না নেয়ার অঙ্গীকার করলেও একানব্বই সালের নির্বাচনেই বিএনপির হয়ে অংশ নেন এরশাদ জমানার প্রভাবশালী দুই আমলা এম কে আনোয়ার ও কাজী কেরামত আলী।

এমনকি এরশাদকে নিয়ে নির্বাচনী জোটও করেছিলো আওয়ামী লীগ। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভাতেও রাখা হয় এরশাদের দল জাতীয় পার্টির নেতাদের। এছাড়া মওদুদ আহমদসহ দলটির কিছু নেতা আগেই বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। কেউ কেউ বিএনপি সরকারে মন্ত্রী হয়েছেন।

রূপরেখায় বলা হয়েছিলো ‘জোটভুক্ত দলসমূহ ব্যক্তিগত কুৎসা রটনা এবং অপর দলের দেশপ্রেম ও ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে কটাক্ষ করা থেকে বিরত থাকবে। জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলসমূহ সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় প্রদান করবে না। এবং সাম্প্রদায়িক প্রচারণা সমবেতভাবে প্রতিরোধ করবে।’

“কিন্তু বাস্তবতা হলো গত আড়াই দশকে দুই প্রধান দল ক্ষমতায় থাকার সময় পরস্পরকে নির্মূল করার রাজনীতি করেছে,” বলছিলেন মহিউদ্দিন আহমেদ।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলছেন, “অঙ্গীকার ছিলো কেউ পরস্পরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও দোষারোপ করবো না— কিন্তু এগুলো কেউ মানলো না। আসলে আচরণবিধিগুলো কেউই মানলো না। আবার প্রচারণায় ধর্ম কে ব্যবহার করার প্রবণতাও তারা শুরু করে ১৯৯১ সালের নির্বাচন থেকেই”।

আবার দলগুলো মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী সকল আইন বাতিলের অঙ্গিকার রূপরেখায় করলেও বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারগুলোর সময়ে নতুন নতুন কালো আইন করা হয়েছে, যা নিয়ে দেশে বিদেশে তীব্র সমালোচনাও হয়েছে।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন আন্দোলনের এক পর্যায়ে জনগণের মধ্যে আশাবাদ তৈরি হয়েছিলো যে আন্দোলন সফল হলে দেশে গণতন্ত্র আসবে ও দলগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য আসবে।

“কিন্তু কিছুদিন পরে রাজনীতি সেই আগের ধারাতেই ফিরে যায়। নির্বাচনে যারা জিতে তারা ‘উইনার টেকস অল’ নীতি নেয় ও বিরোধীদের স্পেস কমে যায়। বিরোধীরাও বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতার সংস্কৃতি শুরু করে। সব মিলিয়ে যে জনআকাঙ্খা তৈরি হয়েছিলো নব্বইয়ে তিন জোটের রূপরেখা ঘিরে সেটি হারিয়ে গেলো ও মানুষ প্রতারিত হলো,” বলছিলেন তিনি।পরিণতি যা হলো

রূপরেখায় যা লেখা হয়েছিলো সেভাবেই একজন নির্দলীয় ব্যক্তি হিসেবে তিন জোট তখনকার প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নাম চূড়ান্ত করে এবং তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করে তার কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করেন এরশাদ।

সাহাবুদ্দীন আহমদের সরকার একাদশ সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে এবং সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। পরে ওই সংসদেই রূপরেখায় থাকা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির বদলে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার করা হয় সংবিধান সংশোধন করে।

বদিউল আলম মজুমদার বলছেন তিনি মনে করেন এই রূপরেখাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল এবং এতে প্রধান দলগুলো কয়েকটি বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছিলো।

“সবচেয়ে বড় বিষয় ছিলো তারা একটি আচরণবিধি দিয়েছিলো রূপরেখায়। কিন্তু নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন ছাড়া আর কিছুই হলো না। সংসদও অকার্যকর হয়ে গেলো। ফায়দা ভিত্তিক রাজনীতি শুরু হলো। সরকারি দল কর্তৃত্বপরায়ন হতে শুরু করলো। আর বিরোধীরাও দায়িত্বশীল থাকলো না। ধীরে ধীরে পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাই ধ্বসে পড়লো, যা আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের জন্ম দিলো ২০২৪ সালে এসে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

মূলত নির্বাচন নিয়ে রূপরেখায় করা অঙ্গীকার বড় ধাক্কা খেয়েছিলো ১৯৯৪ সালে একটি সংসদীয় উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির ঘটনায়। ওই নির্বাচনের পর আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৬ সালের পনেরই ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাশ করে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন খালেদা জিয়া।

আবার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানই তুলে দেন সংবিধান থেকে এবং তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন করার পর শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন তিনি।

আবার রূপরেখায় দলগুলো এরশাদের কোন সহযোগীকে নিজ নিজ দলে না নেয়ার অঙ্গীকার করলেও একানব্বই সালের নির্বাচনেই বিএনপির হয়ে অংশ নেন এরশাদ জমানার প্রভাবশালী দুই আমলা এম কে আনোয়ার ও কাজী কেরামত আলী।

এমনকি এরশাদকে নিয়ে নির্বাচনী জোটও করেছিলো আওয়ামী লীগ। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভাতেও রাখা হয় এরশাদের দল জাতীয় পার্টির নেতাদের। এছাড়া মওদুদ আহমদসহ দলটির কিছু নেতা আগেই বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। কেউ কেউ বিএনপি সরকারে মন্ত্রী হয়েছেন।

রূপরেখায় বলা হয়েছিলো ‘জোটভুক্ত দলসমূহ ব্যক্তিগত কুৎসা রটনা এবং অপর দলের দেশপ্রেম ও ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে কটাক্ষ করা থেকে বিরত থাকবে। জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলসমূহ সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় প্রদান করবে না। এবং সাম্প্রদায়িক প্রচারণা সমবেতভাবে প্রতিরোধ করবে।’

“কিন্তু বাস্তবতা হলো গত আড়াই দশকে দুই প্রধান দল ক্ষমতায় থাকার সময় পরস্পরকে নির্মূল করার রাজনীতি করেছে,” বলছিলেন মহিউদ্দিন আহমেদ।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলছেন, “অঙ্গীকার ছিলো কেউ পরস্পরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও দোষারোপ করবো না— কিন্তু এগুলো কেউ মানলো না। আসলে আচরণবিধিগুলো কেউই মানলো না। আবার প্রচারণায় ধর্ম কে ব্যবহার করার প্রবণতাও তারা শুরু করে ১৯৯১ সালের নির্বাচন থেকেই”।

আবার দলগুলো মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী সকল আইন বাতিলের অঙ্গিকার রূপরেখায় করলেও বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারগুলোর সময়ে নতুন নতুন কালো আইন করা হয়েছে, যা নিয়ে দেশে বিদেশে তীব্র সমালোচনাও হয়েছে।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন আন্দোলনের এক পর্যায়ে জনগণের মধ্যে আশাবাদ তৈরি হয়েছিলো যে আন্দোলন সফল হলে দেশে গণতন্ত্র আসবে ও দলগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য আসবে।

“কিন্তু কিছুদিন পরে রাজনীতি সেই আগের ধারাতেই ফিরে যায়। নির্বাচনে যারা জিতে তারা ‘উইনার টেকস অল’ নীতি নেয় ও বিরোধীদের স্পেস কমে যায়। বিরোধীরাও বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতার সংস্কৃতি শুরু করে। সব মিলিয়ে যে জনআকাঙ্খা তৈরি হয়েছিলো নব্বইয়ে তিন জোটের রূপরেখা ঘিরে সেটি হারিয়ে গেলো ও মানুষ প্রতারিত হলো,” বলছিলেন তিনি।

সূত্র : বিবিসি বাংলা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
HTML Snippets Powered By : XYZScripts.com
https://slotbet.online/
HTML Snippets Powered By : XYZScripts.com