জাতীয় পার্টিকে নিয়ে বিপাকে পড়ে গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে নাকি শেষ মুহুর্তে (১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন) ২০১৪ সালের মতো মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবে তা নিয়ে ধন্দের সৃষ্টি হয়েছে। মনোনয়ন পত্র দাখিল করার পর থেকে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ‘নীরব’ হয়ে গেছে। মহাসচিব মুজিবুল হক আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করে ৩০ থেকে ৪০টি আসনে নির্বাচিত হওয়ার নিশ্চয়তা চেয়েছেন। কিন্তু গতকাল জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতা না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এমন পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকে কিনা তানিযে আশঙ্কা আছে। আমাদের দলের অনেকেরই আশঙ্কা আছে; দেশের জনগণের মাঝেও এটা নিয়ে একটা শঙ্কা আছে। ডেমোক্রেসিতে অনেক কিছু সম্ভব। গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বয়কট করা, ওয়াকআউট করা এসব বিষয় গণতান্ত্রিক নির্বাচনের সব জায়গাতেই আছে। কী হবে, এটা তো এই মুহূর্তে বলতে পারছি না, হলেও হতে পারে। কিন্তু এ ব্যাপারে এই মুহূর্তে আমি কী করে বলব, জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে সরে যাবে নাকি থাকবে।
জাতীয় পার্টি (জাপা) শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কি না, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্দেহ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুজিবুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন, সে বিষয়ে আমার কোনো কথা বলার সুযোগ নেই। আমাদের সন্দেহ করবেন কি না, বা করেন কি না, সেটা ওনার বিষয়। আমি শুধু একটা কথাই বলতে পারি, জাতীয় পার্টি নির্বাচন করার জন্য এসেছে। নির্বাচন থেকে চলে যাওয়ার জন্য আসেনি।
এর আগে গতকাল গভভবনে গিয়ে রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন জি এম কাদের অবৈধভাবে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দখল করেছেন। তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সঙ্গে যেন জোটে নেয়ার নামে ‘আসন সমঝোতা’ করা না হয়। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেননি। আমার ছেলের (রাহগীর আল মাহি সাদ) জায়গায় উনি (জিএম কাদের) ইলেকশন করছেন। প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেখা লিখিত বক্তব্যে বলেছেন এম কাদের অবৈধভাবে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব ‘দখল’ করেছেন। সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্র্টির মনোনয়ন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে সুকৌশলে তাঁকে, সাদ এরশাদকে ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সরিয়ে দিয়েছেন। দলের মধ্যে ‘ক্যু’ করে নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন।
এদিকে গত সাপ্তাহে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে জানানো হয় ২৭২ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ আছে। সুত্রের দাবি জাতীয় পার্টি থেকে প্রথমে একশ পরে সেটা কাটছাট করে ৭০ এবং সর্বশেষ ৩০ আসনের বিজয়ী হওয়ার নিশ্চয়তা চায়। জাপা জানিয়েছেন, তাদের যে সব আসন দেয়া হবে সেখানে নৌকার প্রার্থী উঠিয়ে নেয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতারা যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাদের উঠিয়ে নিতে হবে।
আওয়ামী লীগ থেকে জানানো হয়েছে নৌকার প্রার্থীদের উঠিয়ে নেয়া হলেও স্বতন্ত্রদের ব্যাপারে তাদের কিছুই করার নেই। ফলে জাপার নেতারা মনে করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা থাকলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনায় নামবে এবং জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের ভরাডুবি হবে। এ অবস্থায় গত ১১ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির মহাসচিব সংবাদ সম্মেলন করে জানান, নির্বাচনে কোনো দলের সঙ্গে বোঝাপড়া বা সমঝোতা, সে রকম এখনো কিছু হয়নি। তবে রাজনীতি, নির্বাচনের কৌশল এগুলোতে শেষ বলে কিছু নেই। যেকোনো সিদ্ধান্ত, যেকোনো সময় দলের পক্ষ থেকে, দলের প্রয়োজনে, নির্বাচনের স্বার্থে অনেক কিছুই হতে পারে।
জাতীয় পার্টি নির্বাচন বর্জন করার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, নির্বাচনে এসেছি সরে আসার জন্য না, আটঘাট বেঁধে নেমেছি। যদি উদ্ভূত কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেব। দলের স্বার্থে যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। তারও আগে মুজিবুল হক চুন্ন জানিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ সমঝোতার আশ্বাস দিয়েছে সে জন্যই জাতীয় পার্টি নির্বাচনে এসেছে।
উল্লেখ, ২০১৪ সালের প্রার্থী ও ভোটার বিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল জাতীয় পার্টি। কিন্তু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না এমন আশঙ্কা থেকে ২০১৩ সালের ৩ ডিসেম্বর নির্বাচন বর্জণের ঘোষণা দেন এইচ এম এরশাদ। লাঙ্গলের প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এরশাদকে চিকিৎসার নামে জোর করে সিএমএইচ হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে অর্ধ শতাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তারই পুরস্কার হিবেবে রওশন এরশাদকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার পদ পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয়। ফলে এবার রওশন এরশাদের প্রস্তাব, জি এম কাদেরের ‘নিরবতা’ এবং আসন নিশ্চয়তা নিশ্চিত না হওয়ায় আশঙ্ক শেষ মুহুর্তে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকবে নাকি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগের মতো মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবে সে নিয়ে আলোচনা চলছে।
আরএম/টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/