বড় গ্রাহকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের ব্যাংক খাত। বর্তমানে ব্যাংক খাতের মাত্র তিনজন শীর্ষ গ্রাহকের হাতে ঋণ হিসেবে আছে ১৯ ব্যাংকের মূলধন। কোনো কারণে এই তিন গ্রাহক খেলাপি হয়ে পড়লে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো ন্যূনতম ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েটেড অ্যাসেটস রেশিও (সিআরএআর) সংরক্ষণ তথা প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরভিত্তিক আর্থিক স্থিতিশীলতা মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এমনই আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
আন্তর্জাতিক নীতিমালার আলোকে ব্যাংকগুলোকে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি, সে পরিমাণ মূলধন রাখতে হচ্ছে। কোনো ব্যাংক এ পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বরাবরই বড় গ্রাহকদের ঋণ দিতে বেশি আগ্রহী থাকে। এ জন্য তারা অসুস্থ প্রতিযোগিতায়ও লিপ্ত হয়। গ্রাহকের সক্ষমতা ও ঝুঁকি বিবেচনা না করেই বড় অঙ্কের ঋণ তুলে দেওয়া হয়। ব্যাংকগুলোর এই আগ্রাসী প্রবণতার কারণে গুটিকয়েক গ্রাহকের কাছে বিপুল অঙ্কের ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে, যা ব্যাংক খাতে ঝুুঁকি বাড়াচ্ছে বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকগুলোর মধ্যে বড় গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার প্রবণতার কারণে ছোট ব্যবসায়ীরা কাঙিক্ষত পরিমাণ ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। এ ছাড়া ঋণ কেন্দ্রীভূতকরণ একটি ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় অসুবিধা তৈরি করতে পারে। কেবল বিভিন্ন ব্যক্তি ও খাতে ঋণ বিকেন্দ্রীকরণ করার মাধ্যমে ব্যাংকের এ ঝুঁঁকি হ্রাস করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে প্রি-শক পরিস্থিতিতে ১০টি তফসিলি ব্যাংক ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সিআরএআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। বাকি ৫১টি ব্যাংকের ওপর পরিচালিত অভিঘাত নির্ণয় করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখতে পায়, এ ব্যাংকগুলোর শীর্ষ তিন গ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ১৯টি ব্যাংক ১০ শতাংশ সিআরএআর সংরক্ষণ করতে পারবে না। এ ছাড়া ওই সময় পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোতে যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ রয়েছে, তা যদি আরও ৩ শতাংশ বাড়ে, তা হলে আরও ৫টি ব্যাংক ন্যূনতম ১০ শতাংশ সিআরএআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হবে।
বন্ধকি সম্পদ জোরপূর্বক বিক্রির মূল্যের ওপরও প্রতিবেদনে একটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বন্ধকি সম্পদ জোরপূর্বক বিক্রির ফলে যদি তার মূল্য ১০ শতাংশ কমে যায়, তা হলে দুটি ব্যাংক ন্যূনতম সিআরএআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হবে। প্রতিবেদনে মুদ্রা বিনিময় হারের পরিবর্তনে ব্যাংকগুলো কী ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে সেটিও তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, মুদ্রা বিনিময় হারের পরিবর্তন ৫ শতাংশ হলে ১টি ব্যাংক ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সিআরএআর সংরক্ষণ করতে পারবে না। ইক্যুয়িটি মূল্যঝুঁকির দিক দিয়েও ব্যাংক খাত স্বস্তিতে নেই। কারণ কোনো কারণে যদি ইক্যুয়িটি মূল্য ১০ শতাংশ কমে যায়, তা হলে ২টি ব্যাংক প্রয়োজনীয় সিআরএআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হবে।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে সিআরএআর ১১ দশমিক ০৮ শতাংষে নেমেছে, যা ওই বছরের জুন প্রান্তিকেও ছিল ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ।
আরএম/ টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/