প্রথম ধাপের ৮ই মে উপজেলা নির্বাচনে ঝিনাইদহের দু’টি উপজেলায় সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ সমর্থক ছাড়া বিরোধী শিবিরের কোনো প্রার্থীই নেই। বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচন বর্জন করলেও আওয়ামী লীগের জোটভুক্ত কোনো শরিক দলও এই নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি। ফলে নির্বাচনের মাঠ হয়ে উঠছে নিরুত্তাপ। তাছাড়া ব্যক্তিত্ববান কোনো রাজনৈতিক নেতা এই নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ায় ‘যোগ্য’ প্রার্থী সংকট দেখছেন সাধারণ ভোটাররা। শহর বা হাটবাজারের চায়ের দোকানেও প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।
ঢিলেঢালা প্রচারণার পাশাপাশি প্রচণ্ড দাবদাহে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী আমেজ দেখা যাচ্ছে না। এদিকে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত ও প্রতীক হাতে পেয়ে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা শহর বা গ্রাম অঞ্চলে তেমন কোনো পোস্টার ও ব্যানার টাঙ্গিয়ে প্রচারণায় নামেন নাই। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় পরিচয় ও নৌকা প্রতীক না থাকলেও মূলত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
সদর উপজেলা নির্বাচনে সদর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রবীণ নেতা জেএম রশীদুল আলম, সদর পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান মাসুম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ছরওয়ার খাঁন সউদ, যুবলীগ নেতা নুর-এ আলম বিপ্লব ও জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এসএম আনিচুর রহমান খোকা প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে জামায়াত নেতা ড. হাবিবুর রহমান প্রার্থী হলেও তিনি দলীয় সিদ্ধান্তে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নির্বাচনে জাসাদ, বাসদ, কল্যাণ পার্টি, জেপি, জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কার্স পার্টিসহ আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলো কোনো প্রার্থী দেয়নি। ফলে নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের প্রতিযোগিতা একেবারেই ক্ষীণ হয়ে এসেছে। সেইসঙ্গে দলের মধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের মাঝে ক্রমশ বিভেদ ও গ্রুপিং সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনেও সরকারের শরিক বা সরকারবিরোধী কোনো দল অংশগ্রহণ করেননি।
ফলে সরকারি দলের প্রার্থীরাই মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন থেকে ইতিমধ্যে হেভিওয়েট প্রার্থী জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু সরে দাঁড়িয়েছেন। সেখানকার ভোটও নিরুত্তাপ হয়ে উঠেছে। কালীগঞ্জে প্রার্থী হয়েছেন যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শিবলী নোমানী, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সোহেল, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান মতি, কাস্টভাঙ্গা ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শমশের ও জাতীয় শ্রমিক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সহ-সভাপতি ইমদাদুল হক সোহাগ।
উপজেলা নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের কোনো প্রার্থী না থাকায় ভোটারদের মাঝেও কোনো উৎসাহের আমেজ নেই। ভোটারদের ভাষ্য অংশগ্রহণমূলক ও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলে নির্বাচন জমে না।
ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার জানান, ভোট আসলে আগে গ্রামে গ্রামে পাড়া-মহল্লায় একটা ঈদের আমেজ তৈরি হতো। কিন্তু এখন আর তা নেই। এই উপজেলা নির্বাচনে তো আদৌ চোখে পড়ছে না।
টোকনুজ্জামান জানান, নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের মধ্যে ২/১ জনকে মানুষ চেনে। বাকিদের কোনো দিন দেখেওনি। প্রার্থীদের বেশির ভাগই রাজনৈতিক পরিচয় ও ব্যক্তিত্ববান নয় বলেও তিনি দাবি করেন। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ছরওয়ার খাঁন সউদ বলেন, সরকারের শরিকরা কেন নির্বাচনে প্রার্থী দেননি তা আমার জানা নেই।
তবে সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে হয়তো তারা প্রার্থী দেয়নি। তিনি বলেন, তবে বিএনপি নির্বাচনে আসলে লড়াইটা কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হতো। এই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলেও আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা দাবি করেন।
জেলা বিএনপি’র সভাপতি এডভোকেট এমএম মজিদ বলেন, ভোটাররা মাঠে যায় না কারণ একতরফা ডামি নির্বাচন হয়। শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই ৫% মানুষও ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যায় না। তারপরও ৬০ থেকে ৭০% ভোট কাস্ট দেখানো হয়।
এই সরকার নির্বাচন করে মানুষের কল্যাণের জন্য তো নয়ই, বরং দেশের গণতন্ত্র ও অর্থনীতি ধ্বংস করা এবং ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই হলো অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য। এদেশের মানুষ ভোটচোর শেখ হাসিনাকে বয়কট করেছে তারা আর ভোটারবিহীন সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। শেখ হাসিনার সহযোগিতায় তার মন্ত্রী-এমপিরা অবৈধ পথে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে।
যে কারণে নিত্যপণ্য-দ্রব্যাদি মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এদেশের মানুষ না খেয়ে পরিবার নিয়ে হাঁসফাঁস করে আর তার মন্ত্রী-এমপিরা সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে মজা করে।
আরএম/ টাঙ্গন টাইমস
https://slotbet.online/