• রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন

শত কোটি টাকার মালিক কে এই ন্যাংড়া স্বপন !

Reporter Name / ৬৩৯ Time View
Update : রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৪

বিশেষ প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের আখানগর গ্রামের নজরুল ইসলাম স্বপন যাকে নেংড়া (ন্যাংড়া) স্বপন নামেই সকলে চিনে। নব্বই দশকের শেষের দিকে ঠাকুরগাঁও শহরের নিউ মার্কেট থেকে মাল কিনে গ্রামের হাট বাজারে ফেরি করে সাইকেলে হকারি করেন তিনি। বড় ভাই মাহমুদ আলীর সিঙ্গার শোরুমে চাকুরির সুবাদে দালালি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। স্বপনের বাবা আব্দুল হক ওয়াপদার পাম্প অপারেটর হওয়ার সুবাদে আখানগর রেলস্টেশনের পার্শ্বে ছোট্ট কোয়ার্টারে বসবাস করতেন তারা।

তাদের আদি বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে ন্যাংড়া স্বপন ৪তম। লেখাপড়া খুব একটা করতে পারেনি। আখানগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সপ্তম শ্রেণী পাশ করার পর অভাবের তাড়নায় লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি। কিন্তু পরবর্তীতৈ ২০১০ সালের পরে বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাসের সার্টিফিকেট অর্জন করেন। এরপর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। রাতারাতি হয়ে যান শত কোটি টাকার মালিক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জামাত ও চার দলীয় জোট প্রার্থী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন এই স্বপন। ওই নির্বাচনে তাঁর ওয়ার্ডের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাঁধা দেওয়ার ঘটনায় আলোচনায় আসে স্বপন।

এরপর ২০০৫ সালের আওয়ামী লীগ নেতা রমেশ চন্দ্র সেনের হাত ধরে আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত হন। পরবর্তীতে ২০২১ সালে ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিনত হন তিনি। এক এগারোর পর ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা রমেশ সেন সাংসদ নির্বাচিত হওয়ায় পর ভাগ্য খুলতে শুরু করে হকার স্বপনের।

সাংসদের ব্যক্তিগত কর্মচারী হয়ে টিআর, কাবিখা, কাবিটা, নিয়োগ বানিজ্য, বিভিন্ন প্রকল্পে কমিশন গ্রহণের মাধ্যমে শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যায় এই স্বপন। বে-সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো নীতিমালা-২০২১ অনুযায়ী নব সৃষ্ট পদ সমূহে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ১৯০ টি প্রতিষ্ঠান থেকে ন্যাংড়া স্বপনের পকেটে যায় প্রায় ১০ কোটি টাকা। স্বপ্নকে নিয়ে রয়েছে নানা নানান কাহিনি।

দলীয় নেতাকর্মীসহ সকলে জানেন স্বপন নারী সরবরাহকারী হিসেবে সে কামিয়েছে কোটি কোটি টাকা। আর এই নারী সাপলাইয়ের কাজটি শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় বড় নেতাদেরও সুন্দরী নারী ও যুবতিদের সাপলাই দিয়ে আসছিলেন।

কোর্টের প্রয়াত মুহুরি নির্মলের স্ত্রী মুক্তা রাণীকে সাংসদের মক্ষীরানি হিসেবে উপহার দিয়েছেন এবং আরও মনোরঞ্জনের জন্য সদর উপজেলার জগন্নাথপুর এলাকায় ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের জনৈক চিকিৎসকের রিসোর্টে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারীদেরকে এমপি’র উপঢৌকনের বিনিময়ে চাকরি হাতিয়ে নিয়ে স্বপন অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে উঠেন।

আখানগর ও চিলারং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, টাকার বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্যসহ মামলা মোকদ্দমার তদবির বাণিজ্য করে রাতারাতি বদলে যায় স্বপনের জীবন যাপন।

ঠাকুরগাও শহরের গোয়ালপাড়া, দিনাজপুরের ঈদগাঁ বস্তি, শ্বশুর বাড়ি দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার আদর্শগ্রাম নোয়াপাড়ায় ২০ বিঘা আবাদি জমি, রংপুরের মুলা টোলে পৃথক তিনটি বহুতল ভবনসহ ঢাকার জাপান গার্ডেন সিটি ও বসুন্ধরা এলাকায় তিনটি ফ্ল্যাটের মালিক স্বপন ও তাঁর স্ত্রী।

আখানগর বাজারে অন্যের জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ, ৭০ বিঘা আবাদি জমি যার মুল্য প্রায় সাড়ে দশ কোটি টাকা সবকিছু তিনি কিনেছেন আওয়ামীলীগের শাসন আমলে।

ঠাকুরগাঁও রোডের ফেয়ার ইলেকট্রনিকসের মালিক রাজু’র সাথে কথা বলে জানা গেছে ২০০৫ সালে ন্যাংড়া স্বপন তাঁর টিভি ফ্রীজ বিক্রির দালালির সাথে যুক্ত ছিল। রাতারাতি বদলে যাওয়া স্বপনের সাথে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তার ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি তবে তার স্ত্রী এ প্রতিনিধিকে সংবাদ না করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এসব অভিযোগ ঠিক নয়।

অপর একজন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা আক্ষেপ করে বলেন,”এই স্বপন হরিজন সম্প্রদায়ের সংগঠন বাদে ঠাকুরগাঁওয়ের প্রায় প্রত্যেকটি সংগঠনের সদস্য পদ লাভ করেন, যা খুবই দুঃখ জনক।

এলাকাবাসী অবিলম্বে রাজনীতিকে ব্যবহার করে রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া স্বপনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

 এ ইসলাম/টাঙ্গন টাইমস


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/